জখম বুনো হাতির চিকিৎসা ফেলে বন দফতর উত্তরবঙ্গ উৎসব নিয়ে মেতে ওঠায় ক্ষোভ বাড়ছে সুকনায়। তিন দিন ধরে বছর পঞ্চাশের একটি জখম বুনো স্ত্রী হাতি আর্মি স্কুলের পাশে একটি ঝোপের আড়ালে দাঁড়িয়ে রয়েছে। হাতিটির একটি পা ভাঙা থাকায় নড়াচড়ার ক্ষমতা নেই। স্কুলের পাশেই পাঙ্খাবাড়ি হয়ে দার্জিলিং, দুধিয়া হয়ে মিরিক যাওয়ার রাস্তা। গাড়ি থামিয়ে হাতি দেখতে ভিড় করছেন যাত্রীরা। সেটিকে দেখতে এলাকার বাসিন্দাদের পাশাপাশি ওই স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাও প্রতিদিন ভিড় করায় যে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্কুলের শিক্ষক থেকে এলাকার প্রবীণ বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, বন দফতরে বহু বার ফোন করে ঘটনাটি জানিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করে হাতিটিকে জঙ্গলে সরানোর আর্জি জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। বনকর্তারা উত্তরবঙ্গ উৎসবে তাঁদের ব্যস্ততার কথা জানিয়ে দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন বাসিন্দারা। এ দিন ঘটনার খবর পেয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন রাজ্যের বনমন্ত্রী হিতেন বর্মনও। তিনি বলেন, “উত্তরবঙ্গ উৎসবে বন দফতর সামিল হলেও বুনো হাতির চিকিৎসা বা নজরদারিতে গাফিলতি হওয়ার কথা নয়। কেন এমন অভিযোগ উঠছে তা খোঁজ নিয়ে দেখছি।” দার্জিলিঙের ডিএফও সিদ্ধার্থ রায় বলেন, “হাতিটির একটি পায়ের হাড় ভেঙে যাওয়ায় চিকিৎসা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেটি নড়াচড়া করতে না-পারায় সমস্যা বেড়েছে। কী ভাবে হাতিটিকে নিরাপদ এলাকায় সরানো যায় সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” বাসিন্দাদের অভিযোগ, এ দিন বিকেল পর্যন্ত বন দফতরের কোনও কর্মীকে ওই এলাকায় দেখতে পাওয়া যায়নি। অথচ আর্মি স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা হাতিটির জখম পুরানো। গত বছর অগস্ট মাসে নকশালবাড়ির কলাবাড়ি জঙ্গল থেকে নেপালের বামনডাঙি এলাকায় গিয়ে সেটা জখম হয়। নেপালের একদল বাসিন্দা বুনো হাতির পাল লক্ষ করে গুলি চালালে এই হাতিটির পায়ের হাড় ভেঙে যায়। অন্য দুটি হাতির মৃত্যু হয়। গত বছর সেপ্টেম্বরে বামনপোখরি এলাকায় সুকনা এলিফ্যান্ট স্কোয়াড জঙ্গলে তল্লাশি চালিয়ে হাতিটিকে শনাক্ত করার করার পরে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। তার কয়েক মাস পরে গত ডিসেম্বরে ফের সুকনায় মধুবন পার্কের পিছনের জঙ্গলে হাতিটিকে অচৈতন্য করার পরে চিকিৎসা করায়। শিলিগুড়ির এক পশু চিকিৎসক বলেন, “যা অবস্থা তাতে খুব বেশি চিকিৎসা নেই। কেননা, ভাঙা হাড় জুড়ে দেওয়ার মতো পরিকাঠামো বন দফতরের নেই। তবে সংক্রমণ, ক্ষত শুকানোর ওষুধ, স্যালাইন দিয়ে যন্ত্রণা কমানো এবং জীবনীশক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করা যেতেই পারে। এ ভাবে লোকালয়ের সামনে হাতিটিকে ফেলে রেখে দেওয়া সব দিক থেকেই বিপজ্জনক। তবে নিজে থেকে উদ্যোগী না-হলে আমাদের কিছু করার নেই।” ঠিক এই প্রশ্নেই সরব হয়েছেন সুকনার বাসিন্দারাও। কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, তিন দিন ধরে হাতিটি ওই এলাকা দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার আগে একমাস ধরে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ওই এলাকায় খাবারের খোঁজে ঘুরে বেড়িয়েছে। এত দিন কিছুই করা হয়নি। এখন হঠাৎ করে উত্তরবঙ্গ উৎসবের যুক্তি দেখিয়ে বন কর্তারা কাকে খুশি রাখতে চাইছেন?” হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের পক্ষে অনিমেষ বসু বলেন, “পশু চিকিৎসকদের সাহায্য নিয়ে হাতিটির চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। এ ভাবে দাঁড় করিয়ে মেরে ফেলার মানে হয় না।” |