নিজস্ব সংবাদদাতা • আরামবাগ |
গ্রামের অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বলতর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পরিবারকে নতুন পাকা বাড়ি নির্মাণের জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে উপভোক্তা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষোভ দানা বাঁধছে আরামবাগ মহকুমা জুড়ে।
সদ্য চালু হওয়া রাজ্য সরকারের এই প্রকল্পটির নাম ‘গীতাঞ্জলি’। পরিবারপিছু উপভোক্তারা বাড়ি নির্মাণের জন্য পাবেন ১ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা করে। জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে উপভোক্তা নির্বাচনের জন্য ব্লকপিছু চার জনের একটি কমিটি গড়ে দেওয়া হয়েছে। ওই কমিটিতে সংশ্লিষ্ট বিধানসভা এলাকার বিধায়ক, সংশ্লিষ্ট বিডিও, সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি এবং সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের প্রধান থাকছেন। কিন্তু ওই কমিটি যাঁদের উপভোক্তা বলে চিহ্নিত করছে, তা যথাযথ হচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন অনেক গ্রামবাসীই। ইতিমধ্যে বিভিন্ন ব্লকে ওই তালিকা সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা। দিন কয়েক আগে মহকুমাশাসকের কাছেও একটি পরিবারের তরফে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগীর দাবি, “উপভোক্তা নির্বাচনে কোনও অনিয়ম হচ্ছে না। তবে এই প্রকল্পের আওতায় আসার মতো অনেক পরিবার রয়েছে। প্রকল্প রূপায়ণের জন্য ব্লকপিছু উপভোক্তা পরিবারের কোটা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। সেই কারণে বিপিএল-সংক্রান্ত নম্বরের ভিত্তিতে সেই সব পরিবারকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।”
গ্রামবাসীদের দাবি, যে বিপিএল তালিকার উপরে নির্ভর করে এই প্রকল্প রূপায়ণের কাজ চলছে, সেই বিপিএল তালিকাই ত্রুটিপূর্ণ। ফলে, ‘গীতাঞ্জলি’ প্রকল্পে অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত উপভোক্তারা বঞ্চিত বচ্ছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, হুগলিতে ১৮টি ব্লকে ‘গীতাঞ্জলি’ প্রকল্প খাতে ৬৪০টি পরিবারের জন্য টাকা বরাদ্দ হয়েছে। জেলাশাসক ব্লকপিছু ‘কোটা’ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। তার মধ্যে খানাকুল-১ ব্লকের ১৩টি পঞ্চায়েতের জন্য ৪৯টি পরিবার, খানাকুল ২ ব্লকের ১১টি পঞ্চায়েতের জন্য ৩১টি পরিবার, আরামবাগ ব্লকের ১৫টি পঞ্চায়েতের জন্য ৪৫টি পরিবার, গোঘাট ১ ও ২ ব্লকের যথাক্রমে ৭টি ও ৯টি পঞ্চায়েতের জন্য ২০টি ও ৩২টি পরিবার এবং পুড়শুড়ার ৮টি পঞ্চায়েতের জন্য ৩৩টি পরিবার রয়েছে।
শুধু কোটা নির্দিষ্ট করে দেওয়াই নয়, ইতিমধ্যে জেলাশাসক শ্রীপ্রিয়া রঙ্গরাজন দ্রুত ওই প্রকল্প রূপায়ণের কাজও শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। পুড়শুড়া ছাড়া মহকুমার ৫টি ব্লকের উপভোক্তাদের তালিকা ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসনের সংখ্যালঘু সেলে পৌঁছে গিয়েছে। কিন্তু তালিকা তৈরি করতে হিমশিম খেয়েছে ওই কমিটি। কমিটির সদস্যদের বক্তব্য, দাবিদার প্রচুর। সেই কারণেই সমস্যা হয়েছে।
দিন কয়েক আগে গোঘাট ১ ব্লকের সানবাঁধি গ্রামের প্রতিবন্ধী তরুণী সাবিনা খাতুনের দাদা শেখ আক্কাশ আলি বোন এবং মাকে সঙ্গে এনে মহকুমাশাসকের দফতরে অভিযোগ করেন, সরেজমিনে কোনও তদন্ত না করেই তাঁর বোনকে ওই তালিকা থেকে বাতিল করে গ্রামেরই সচ্ছল এক বাসিন্দার নাম তালিকায় রাখা হয়েছে। মহকুমাশাসক অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।
গোঘাট ১ বিডিও জয়ন্ত মণ্ডল বলেন, “যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে প্রাধান্য অনুযায়ী উপভোক্তা নির্বাচন করা হয়েছে। কিন্তু পঞ্চায়েত-পিছু তিনটি করে কোটা হওয়ায় ক্ষোভ স্বাভাবিক।” অনেক পঞ্চায়েত প্রধান জানিয়েছেন, উপভোক্তা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঝুঁকি নিতে হচ্ছে তাঁদের। |