নিজস্ব সংবাদদাতা • রিষড়া |
রিষড়া পুরসভায় চেয়ারম্যানের পদ নিয়ে দলীয় কোন্দলে জেরবার তৃণমূল। এ ব্যাপারে আপাতত ‘ধীরে চলো’ নীতিই নিচ্ছে দল।
সদ্য কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া শঙ্কর সাউকেই ফের চেয়ারম্যান করতে উঠেপড়ে লেগেছে তৃণমূলের একাংশ। তিনি আপাতত ওই পদেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। দলে তাঁর বিরোধীরাও অবশ্য বসে নেই। তাঁরা ‘আদাজল খেয়ে’ শঙ্করবাবুর ‘দুর্নীতি’র ফিরিস্তি নিয়ে দলের রাজ্য নেতৃত্বের দ্বারস্থ হয়েছেন।
অবশ্য শুধু দলের গণ্ডিতেই সীমাবন্ধ নেই তাঁরা। পুরো বিষয়টি নথি-সহ মুখ্যমন্ত্রী তথা দলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও জানিয়েছেন বলে দলের ওই অংশের নেতারা দাবি করেছেন।
রিষড়া পুরসভাটি হুগলি জেলায় একমাত্র পুরসভা ছিল, যেখানে পুরপ্রধান কংগ্রেসের। ২৩ সদস্যের পুরবোর্ডে চেয়ারম্যান ছিলেন শঙ্কর সাউ। সম্প্রতি প্রথম দফায় দলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত এবং শ্রীরামপুরের বিধায়ক সুদীপ্ত রায়ের মধ্যস্থতায় কংগ্রেসের চার কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেন। তাঁদের অভিযোগ ছিল, কংগ্রেসের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। তিনি নিজে প্রমোটারি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত।
এরপরে অবশ্য ‘চিত্রনাট্য’ অন্য দিকে মোড় নেয়। দলের আসন সংখ্যার বিন্যাসে কংগ্রেসের ৯ জন, তৃণমূলের ৮ জন এবং বামফ্রন্টের ৬ জন কাউন্সিলর ছিলেন। কংগ্রেস কাউন্সিলরের সংখ্যা ৫ জন হয়ে যায় এক ধাক্কায়। এই পরিস্থিতিতে সংখ্যালঘু হয়ে পড়ায় কংগ্রেসের দখলে চেয়্যারম্যানের পদ থাকবে কিনা, সেই প্রশ্ন দেখা দেয়। কংগ্রেসের অবশিষ্ট ৫ জন কাউন্সিলরের মধ্যে শঙ্করবাবু-সহ চার জন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যস্থতায় তৃণমূলে যোগ দেন।
এই প্রক্রিয়াটি অবশ্য মসৃণ হয়নি। বিক্ষোভের মুখে পড়ে যান তাঁরা। আওয়াজ ওঠে, কংগ্রেসের পুরবোর্ডের ‘দুর্নীতি’ নিয়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সে সময়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত নেতারা হিমসিম খান। দলের তরফে পুরো বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মকুল রায়। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ ছিল, গদি বাঁচাতেই দল বদল করছেন চেয়ারম্যান। যাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে প্রথম দফায় চার জন দল ছাড়লেন, আবার কেন তাঁকে দলে নেওয়া হল, সে প্রশ্ন তোলেন তৃণমূলের একাংশ।
যাঁর বিরুদ্ধে এত অভিযোগ, সেই শঙ্করবাবুর অবশ্য সাফ কথা, “আমি তিন বছর আগে প্রমোটারি ছেড়ে দিয়েছি। যাঁরা উন্নয়ন চায় না তাঁরাই আমার বিরোধিতায় নেমেছেন। বিষড়ার মানুষ আমাকে জানেন। যাঁরা অনিয়মের অভিযোগ তুলছেন তাঁরা আয়নায় নিজেদের মুখ দেখুন।” দলীয় সূত্রের খবর, তৃণমূল নেতৃত্ব বিষয়টির সমাধানে দলের অন্যতম জেলা আহ্বায়ক দিলীপ যাদবকে বৈঠক ডাকার নির্দেশ দেন। কিন্তু ফের বিষয়টি নিয়ে জলঘোলার আশঙ্কায় আপাতত তাঁরা সেই সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে এসেছেন। এ বিষয়ে দিলীপবাবু বলেন, “এটা একেবারেই দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমরা সংবাদমাধ্যমের কাছে এখনই এই বিষয়ে কিছু জানাতে চাইছি না।”
শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণবাবু অবশ্য বলেন, “প্রথম থেকে যাঁরা তৃণমূল করছেন, এমন কাউকেই চেয়ারম্যান করার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা চলছে।” দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন শ্রীরামপুরের বিধায়ক সুদীপ্ত রায়। তিনি বলেন, “আমাদের গণতান্ত্রিক দল। মতামত সবাই জানতে পারেন। তবে সহমতের ভিত্তিতে আলোচনার মাধ্যামেই আমরা সিদ্ধান্ত নেব।”
যাঁকে ফের তৃণমূলের চেয়ারম্যান করার জল্পনা নিয়ে দলীয় স্তরে চাপান-উতোর তীব্র, সেই শঙ্করবাবু অবশ্য বলেন, “দলনেত্রীর উন্নয়নমূলক কাজের ধারাতেই আমি উদ্বুদ্ধ। সে জন্যই তৃণমূলে যোগ দিয়েছি। পদের জন্য লালায়িত নই।” |