|
|
|
|
রেল ‘দীর্ঘসূত্রি’ |
পণ্য করিডরের কাজে নজর রাখবে প্রধানমন্ত্রীর দফতর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
রেল মন্ত্রকের নামে দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ। তাই পূর্ব-পশ্চিম পণ্য করিডরের কাজ তারা সময়ে রূপায়ণ করছে কি না, তা এখন থেকে নজর রাখবে প্রধানমন্ত্রীর দফতর। আজ প্রধানমন্ত্রীর দফতর সূত্রে এ কথা জানানো হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের মার্চের মধ্যে যাতে ওই করিডরের কাজ শেষ করা সম্ভব হয়, সে দিকেও বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখা হবে।
পূর্ব ও পশ্চিম পণ্য করিডরের ঘোষণা হয় ২০০৫ সালে। প্রায় সাত বছর কেটে গিয়েছে। এর মধ্যে কাজ কতটা এগিয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে আজ বৈঠকে বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। সঙ্গে ছিলেন তাঁর দফতরের শীর্ষ আমলারা, রেল মন্ত্রক ও ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডর কর্পোরেশন ইন্ডিয়ার (ডিএফসিসিআইএল) প্রতিনিধিরা এবং ওই দু’টি করিডর যে রাজ্যগুলির মধ্যে দিয়ে যাবে তাদের মুখ্যসচিবরা। তবে সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গ থেকে ওই বৈঠকে কেউ উপস্থিত ছিলেন না।
দু’টি করিডর মিলিয়ে প্রায় ৩৩০০ কিলোমিটারের ওই প্রকল্পটি নির্মাণের গতি দেখে আজ মোটেই খুশি নয় প্রধানমন্ত্রীর দফতর। অবিলম্বে ওই কাজে গতি আনতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সব পক্ষকে। দু’টি করিডরের কাজ যাতে সময়ে শেষ হয়, সে জন্য সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির প্রতিনিধিদের সমস্ত ধরনের সাহায্য করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজ্যগুলিকে ‘মনিটরিং’ বা নজরদারি কমিটি গঠন করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যে রাজ্যগুলির উপর দিয়ে ফ্রেট করিডর যাবে, তার প্রতিটিতে একটি করে এমন কমিটি হবে। তারা নিজেদের রাজ্যে জমি অধিগ্রহণ থেকে শুরু করে ওই প্রকল্পটির কাজ সময়ে চলছে কি না, সে বিষয়ে নিয়মিত ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়কে জানাবে। ওই পণ্য করিডরের দু’পাশে যে শিল্পতালুক গড়ে ওঠার কথা, তার কাজেও গতি আনতে নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর। একটি সমীক্ষার হিসেবে, পশ্চিম করিডরের দু’পাশে সাতটি নতুন শহর, ন’টি শিল্প পার্ক, তিনটি বন্দর, ছ’টি বিমানবন্দর তৈরি হওয়ার কথা রয়েছে।
বৈঠক সূত্রের খবর, যে ভাবে প্রায় প্রতিটি রাজ্যে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে, তাতে উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রী। তিনি নিজেও মনে করেন, ভারতকে যদি আগামী দিনে অর্থনৈতিক ভাবে বিকশিত একটি রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তুলতে হয় এবং ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হারকে যদি দুই অঙ্কের ঘরে নিয়ে যেতে হয়, তা হলে দ্রুত ওই পণ্য করিডর নির্মাণ করতে হবে। কেন না, রেলেরই সমীক্ষা বলছে, পশ্চিম করিডরটি বাস্তবায়িত হলে উত্তর অভিমুখে পণ্য পরিবহণ ৩ কোটি ৮০ লক্ষ (২০০৫-০৬) জায়গায় ২০২১-২২ সালের মধ্যে বৃদ্ধি পেয়ে হবে ১১ কোটি ৬০ লক্ষ টন। এর ফলে ২০১০-এর তুলনায় শিল্পোৎপাদনের হার বৃদ্ধি পাওয়ার কথা প্রায় সাড়ে তিন গুণ। ২০৪০-এ মধ্যে এই হার বৃদ্ধি পেয়ে ১৪ গুণ হওয়ার কথা। অন্য দিকে, পূর্ব অভিমুখে ওই একই সময়ে পণ্য পরিবহণ ১ কোটি ৪০ লক্ষ টনের জায়গায় দ্বিগুণ বাড়বে।
ইউপিএ-র প্রথম পর্বে মনমোহন সিংহ জাপানে গিয়ে পশ্চিম পণ্য করিডর নির্মাণে সাহায্য নিশ্চিত করেছিলেন। সে সময়ে ঠিক হয়েছিল, মুম্বইয়ের জওহরলাল নেহরু বন্দর থেকে উত্তরপ্রদেশের দাদরি পর্যন্ত ১৪৯৯ কিলোমিটার লাইন নির্মাণ ও অন্যান্য পরিকাঠামোগত ক্ষেত্রে সাহায্য দেবে জাপানের ব্যাঙ্ক। পরে ঠিক হয়, লুধিয়ানা থেকে ডানকুনি পর্যন্ত ১৮৩৯ কিলোমিটার পূর্ব করিডরের জন্য বিশ্ব ব্যাঙ্ক অধিকাংশ খরচ ঋণ হিসেবে দেবে। বাকি কাজটি হবে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ বা পিপিপি মডেলে।
কিন্তু আজ ওই প্রকল্পের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, গত সাত বছরে কাজ শুরু হওয়া তো দূরে থাক, প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ হয়েছে মাত্র ৬৭ শতাংশ জমি। বহু জায়গায় আইনি সমস্যায় আটকে রয়েছে জমি অধিগ্রহণ। এর ফলে খরচ বাড়ছে অস্বাভাবিক গতিতে। প্রাথমিক ভাবে যেখানে দু’টি করিডর গড়তে ৪৩ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে বলে আনুমানিক হিসেব দিয়েছিল রেল, এখন তা বৃদ্ধি পেয়ে এক লক্ষ কোটি টাকায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রী দফতর। ফলে সমস্যা তৈরি হয়েছে। কারণ প্রাথমিক ভাবে দেখানো হিসেবে ভিত্তি করে বিদেশি সংস্থাগুলির কাছ থেকে ঋণ চাওয়া হয়েছিল। তারা রাজিও হয়েছে। এখন বর্ধিত খরচ কোথা থেকে আসবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। ওই খরচ যাতে আর না বাড়ে, তাই সময়ে কাজ শেষ করতে বদ্ধপরিকর প্রধানমন্ত্রীর দফতর। |
|
|
|
|
|