ঢাকা হাতি কি সওয়া লাখি,
জবাব জনতার হাতেই

বৃষ্টি ভেজা শহর। রাস্তায় জল জমেছে, কাদা মাখামাখি। আধুনিক ‘কুড়া ঘর’ ছাপিয়ে আবর্জনার পলিথিন পুঁটুলিরা দখল নিয়েছে অর্ধেক রাস্তার। তাও বিধানসভার ছটাক দূরত্বে!
এ বারও কি দেবীর গজে আগমন? ‘যাত্রামঙ্গল’ আর ‘কুসুমকলি’র কথা মনে পড়ল। ওদের রাগ হচ্ছে না?
শুধু বহুজন সমাজ পার্টির চিহ্ন তো নয়, উত্তরপ্রদেশ ভোটে এ বার হাতি-ই থিম। তার সঙ্গেই এ যাত্রায় ‘হাত’-এর হাতাহাতি, ‘সাইকেলে’র লড়াই। উচ্চবর্ণকে পাশে পেতে এই হাতি-ই ‘পদ্মফুলের’ সঙ্গে দ্বৈরথে “হাতি নেহি ইয়ে গণেশ হ্যায়, ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ হ্যায়!”
কিন্তু হাতি তো আর কথা কয় না। হাতির মালকিন কী বলছেন?
গত কাল প্রথম দফার ভোট গ্রহণ হয়েছে। রেকর্ড ভোট পড়েছে। রণক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে মায়াবতী আজও বললেন, “আবর্জনা তো ঢুকেছিল বটেই। অন্য পার্টি থেকে বেনোজল ঢুকে পড়েছিল দলে। বসপা-র টিকিট পেয়ে বিধায়ক হয়েছিল, মন্ত্রী হয়েছিল। কিন্তু সব চোর-বাটপাড়কে তাড়িয়েছি। ২৮টা মন্ত্রী তাড়িয়েছি,১১০ জন বিধায়কের টিকিট কেটেছি।” লখনউয়ের জমা ময়লা না হোক, বোঝা যাচ্ছে দলে ‘আবর্জনা’ দেখে ‘গুস্সা’ হচ্ছে।
কুসুমকলিকে নিশ্চয়ই এতক্ষণে চেনা গিয়েছে! লীলা মজুমদারের ‘যাত্রামঙ্গল’-এ বৃদ্ধার ময়লা পুঁটুলি দেখে যে হাতিটির রাগ হয়েছিল!
কিন্তু মায়াবতীর রাগের ‘সততা ও সত্যতা’ সবাই মানছেন কি? মানলে হজরতগঞ্জের মোড়ে চায়ের গেলাসে অভিমান-অসন্তোষের ঢেউ ওঠে কেন? কেন এক অজানা-অচেনা বহিরাগতের কাছে গুটি কয়েক স্থানীয় মানুষের জটলা অকাতরে জানাতে পারে যে, “আসলে হাতিরই পেট ফুলে গিয়েছে!”
পাঁচ বছর আগে উত্তরপ্রদেশে সরকার ছিলমুলায়ম সিংহের। চোর-গুন্ডার দাপটে তখন ঝালাপালা রাজ্যবাসী। ভোটে মায়া স্লোগান তুললেন, “চড় গুন্ডো কি ছাতি পর/মোহর লগা দে হাতি পর।” তাতে সোনাফলল। অপ্রত্যাশিত হারে জনসমর্থন পেয়ে তৃতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হলেন দলিত নেত্রী। অথচ পাঁচ বছর পর আজ সেই একই অভিযোগে কাঠগড়ায় মায়া।
প্রথম দু’বছর নাকি ভালই ছিল। অভিযোগ, তার পর থেকেই খসে পড়েছে আলগা ‘রৌশন’। খুন, শ্লীলতাহানি-সহ একের পর এক ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছেন অন্তত এক ডজন বসপা বিধায়ক। জমি অধিগ্রহণ করতে গিয়ে কৃষকদের বিরুদ্ধে গুলি চলেছে ভাট্টা পারসোলে। দুর্নীতির দায়ে মন্ত্রিত্ব খুইয়েছেন ২১ জন মন্ত্রী। তাজ করিডর দুর্নীতি, রোজগার গ্যারান্টি যোজনার টাকা লুঠের অভিযোগে ভারীহয়ে উঠেছে বাতাস। সবশেষে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের অর্থ তছরুপের ঘটনায় মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে তর্জনী উঠতেই রহস্যজনক ভাবে খুন হয়ে গিয়েছেন তিন মেডিক্যাল অফিসার।
নবাব ওয়াজেদ আলি শাহ-র শহরে মায়া জমানায় দেখনাই বলতে হয়েছে অম্বেডকর পার্ক। গোলাপি পাথরের পাঁচিল ঘেরা সেই সুদৃশ্য পরিসরে মায়াবতী, কাঁসিরাম আর হাতির শ’তিনেক মূর্তি বসেছে। ওটা দলিত স্বাভিমানের প্রতীক। তবু লখনউ বলে, এ-ও তো মায়ার ‘হোয়াইট এলিফ্যান্ট’। কোষাগারের কত অর্থ গলে গিয়েছে ওই পার্কে! বছর খানেক আগে এরই সংলগ্ন ময়দানে সমর্থকদের হাত থেকে কোটি টাকার মালা পরেছিলেন বহেনজি। নিন্দুকেরা তখনই বলেছিল, ‘দলিত কি বেটি নয়, মায়া এখন দৌলত কি বেটি’! ইদানীং আবার প্রকাশ পেয়েছে, দলিত নেত্রীই ‘সবচেয়ে ধনী মুখ্যমন্ত্রী’! আর মায়াকে খোঁচা দিতে রাহুল বলছেন, “লখনউয়ে একটা হাতি আছে। সে টাকা খায়!”
‘কুড়া ঘর’ পিছনে ফেলে হজরতগঞ্জ হয়ে গাড়ি মল অ্যাভিনিউয়ের ‘প্রেরণা স্থলে’ পৌঁছল। এটিই বসপা সদর দফতর। বেলা গড়িয়েছে। কিছুক্ষণের জন্য এসেছিলেন, দলের সাংসদ ব্রিজেশ পাঠক। খাঁকারি দিয়ে উঠলেন, “রাহুল স্বপ্ন দেখছেন, হাতি ওঁকে তাড়া করেছে। আর, মায়া-মুলায়ম এক নন বুঝলেন!” তবে কবুল করলেন উন্নয়নের বিষয়টি ‘ছোঁয়াচে’। পাশাপাশি গ্রামে উনিশ-বিশ উন্নয়নের ফারাক হলেই প্রতিক্রিয়া হয়। “তা ছাড়া এত বড় রাজ্য, কেন্দ্রের সাহায্য ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। কিন্তু কেন্দ্র তো জানেনই...।”
তবু কোথায় যেন তার ছিড়ে যাচ্ছে! বহেনজির সেই ক্ষুরধার বক্তৃতা, সেই ঝাঁঝ, সেই তীক্ষ্নতা কোথায়? সর্বত্র স্রেফ লিখিত বক্তৃতা আউড়ে চলেছেন। এমনকী দলিত রাজনীতির জঠর থেকে উঠে আসা নতুন কোনও স্লোগানও নেই! ‘জো কাহা কর দিখায়া’ গোছের গুটিকয় বাক্য। শুধু রাগের মাথায় ফৈজাবাদের সভায় একটা কথাই বেরিয়ে পড়েছিল। এক মহিলা নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে এগোতেই বলে উঠেছিলেন, বিপক্ষের নেতারা ‘পালতু কুত্তা পাঠিয়েছে’! কিন্তু তাতে মন্দ বই ভাল হল কি?
তবু লখনউ জানে, এ-ও তাঁর মায়া! স্লোগানে ধার না থাকুক, তাঁর মস্তিষ্কে অহোরাত্র অঙ্ক চলছে। নইলে বেছে বেছে স্রেফ কংগ্রেসকে আঘাত হানা কেন? অথচ উত্তরপ্রদেশে তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ তো সমাজবাদী পার্টি। লখনউ রাজনীতির পোড় খাওয়া পণ্ডিতদের মতে জাতপাতের রাজনীতি যদি আজও উত্তরপ্রদেশের দস্তুর হয়, তা হলে বহেনজির দলিত ভোটব্যাঙ্ক পাথরের মতোই কঠিন, জমাট। তার পর প্রতিষ্ঠানবিরোধী ভোট কংগ্রেস-মুলায়মে ভাগ হলে, কে বলতে পারে হাতিরই কিস্তিমাত হবে না?
শুধু দলিত নয়, সব অংশের সমর্থন পেতে ত্রুটি রাখেনি বহেনজি। উচ্চবর্ণের ১৭৪ জনকে প্রার্থী করেছেন তো, মুসলিম প্রার্থী দিয়েছেন ৮৭ জন। সেই সঙ্গে প্রচারে দলিত আবেগ উস্কে দিচ্ছেন অনবরত। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে এক মাস আগে থেকে উত্তরপ্রদেশে সব হস্তী-মূর্তি ঢেকে ফেলা হয়েছে। বিরোধীরাই স্বীকার করছেন, তাতে শাপে বর হয়েছে মায়ার। আর বহেনজি বলছেন, মূর্তি ঢাকায় আপনারা ক্রুদ্ধ জানি। সেই ক্রোধ ভোট মেশিনে ঢেলে দিন। “খুলা হাতি লাখ টাকা, তো ঢাকা হাতি সওয়া লাখ কি।”
তাই কি? দেখা যাক।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.