বকুনি অপছন্দ, শিক্ষিকাকে কুপিয়ে খুন করল ছাত্র
স্কুলের বিজ্ঞানশিক্ষিকার বকাবকি ‘পছন্দ’ হচ্ছিল না ছাত্রটির। পড়াশোনায় মন না দেওয়ার অভিযোগে দিন কয়েক আগে তার বাবা-মায়ের কাছে অভিযোগও জানিয়েছিলেন ওই শিক্ষিকা।
ব্যস। ‘বদলা’ নেওয়ার ফন্দি আঁটে নবম শ্রেণির ওই ছাত্র। যেমন ভাবনা, তেমন কাজ। আজ সকালে ফাঁকা ক্লাসঘরে ছুরি হাতে শিক্ষিকার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বছর পনেরোর ওই কিশোর। প্রথমে ঘাড়ে, তার পরে মুখে, থুতনিতে, গলায়। ছুরি দিয়ে একের পর এক আঘাত করতে থাকে সে। শিক্ষিকার চিৎকারে আশপাশের ক্লাস থেকে ছাত্রছাত্রীরা ছুটে আসে। তবে শেষরক্ষা হয়নি। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই মৃত্যু হয় বছর চল্লিশের উমা মহেশ্বরীর।

উমা মহেশ্বরী
চেন্নাইয়ের একটি স্কুলের ঘটনা। নবম শ্রেণির ওই ছাত্রের সহপাঠীরা জানাচ্ছে, ‘কাজ’ সেরে প্রথমে সে পালানোর চেষ্টা করেছিল। তবে শিক্ষক-শিক্ষিকারা তাকে ধরে ফেলেন। আপাতত পুলিশি হেফাজতে রয়েছে সে।
আজ সকালের এই ঘটনার পরে চেন্নাইয়ে আর্মেনিয়ান স্ট্রিটের ওই স্কুলটি কার্যত বাকরুদ্ধ। কথা বলার মতো অবস্থায় নেই প্রায় কেউই। অধ্যক্ষ ফাদার পেরিনায়াগাম শুধু বললেন, “উমা খুবই শান্ত ও ভাল শিক্ষিকা ছিলেন। কেন যে ছেলেটি ওঁকে মারতে গেল, বুঝতে পারছি না।” তার এই হঠকারী আচরণের কারণটা কী? চেন্নাই পুলিশ কিন্তু খানিকটা ধোঁয়াশায়। ছাত্রটি নাকি জেরায় শুধু জানিয়েছে, শিক্ষিকা উমা মহেশ্বরী প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত কঠোর ছিলেন। তাঁর রোজকার বকাবকি আর ‘সহ্য’ হচ্ছিল না। তাই আজকের এই ঘটনাকে একেবারেই আচমকা নেওয়া কোনও সিদ্ধান্ত বলে মানতে নারাজ পুলিশ। তাদের মতে, রীতিমতো পরিকল্পনা করেই ফাঁকা ক্লাসঘরে ওই শিক্ষিকাকে আক্রমণ করা হয়েছিল। খাতার মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিল ছুরিটা।
সহপাঠীরা পুলিশকে জানিয়েছে, ছেলেটিকে তারা আটকানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তখন সে তাদের পাল্টা হুমকি দেয়। উমাকে আঘাত করার পরে যখন সে পালানোর চেষ্টা করছে, তখনই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা তাকে ধরে ফেলেন। সহপাঠীরা পুলিশকে জানিয়েছে, এমনিতে কখনও কোনও ঝামেলায় জড়াত না সে। বরং স্কুলে সব সময় চুপচাপই থাকত।
স্কুল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে মুখ না খুললেও একটি সূত্র জানাচ্ছে, ছাত্রটির ব্যবহার নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই অসন্তুষ্ট ছিলেন উমা মহেশ্বরী। বিজ্ঞানের সঙ্গে হিন্দিও পড়াতেন তিনি। পড়াশোনায় মনোনিবেশ নিয়ে তাকে ক্লাসে নিয়মিত বকাবকিও করতেন। এমনকী কিছু দিন আগে তার বাড়িতেও এই নিয়ে নালিশ জানান উমা। সম্ভবত তখন থেকেই শিক্ষিকার উপর ‘ক্ষুব্ধ’ ছিল সে। আর মনে মনে শিক্ষিকাকে ‘চরম শাস্তি’ দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছিল।
তবে একটা প্রশ্ন উঠেছে। শিক্ষিকার ব্যবহারে বীতশ্রদ্ধ ছাত্র কতটা প্রতিশোধপরায়ণ হলে তাঁকে এমন নৃশংস ভাবে খুন করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে? মনোবিদেরা বলছেন, পড়াশোনার অতিরিক্ত চাপ অনেক ছাত্রছাত্রীর মনেই নানা রকমের প্রতিক্রিয়া তৈরি করছে। উমা মহেশ্বরীর খুনের ঘটনা তারই প্রতিফলন। “গত কয়েক দিন ধরে নিয়মিত বকাবকি কোনও ভাবে প্রভাব ফেলেছিল ওই কিশোরের মনে। স্কুলে সকলের সামনে এ ভাবে হেনস্থা হওয়াটাকে হয়তো মেনে নিতে পারেনি সে।” বললেন তিরুঅনন্তপুরমের একটি কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান মৃদুলা নায়ার। এই সব ক্ষেত্রে বাবা-মা তো বটেই, এমনকী শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও আরও বেশি দায়িত্বশীল হওয়ার পরমার্শ দিয়েছেন তিনি। তাঁর মতে, শিশু বা কিশোরেরা স্কুলে বকুনি খেলে বাড়ির লোকের উচিত সহমর্মিতা দেখানো। এ ক্ষেত্রে ছাত্রটি তার বাবা-মায়ের কাছ থেকে কী ব্যবহার পেয়েছিল, সেটাও বিবেচ্য। মৃদুলাদেবীর কথায়, “আজকের এই ঘটনা আসলে এক ভয়াবহ ভবিষ্যতের ইঙ্গিত।” সেই জন্য ছোটবেলা থেকে বাচ্চাদের খেলাধুলোর দিকে মনোযোগ দিতে পরমার্শ দিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, “খেলতে খেলতেই শিশুরা হার-জিত-অপমান কী জিনিস বুঝতে শেখে। পরবর্তী জীবনে যা তাদের প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে খুব সাহায্য করে।”
তবে এই ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে পারিবারিক ইতিহাসও খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলে মনে করছেন মনোবিদেরা। লক্ষ্মী বিজয়কুমার নামে চেন্নাইয়ের এক মনোবিদ জানালেন, বাড়িতে কখনও এই ধরনের হিংসাত্মক ঘটনা দেখে থাকতে পারে ছেলেটি। না হলে, পনেরো বছরের এক কিশোরের পক্ষে এমন নৃশংস খুন করা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন তিনি। আবার টিভি সিরিয়াল বা ছবিতে দেখানো হিংসাও কিশোর মনে কুপ্রভাব ফেলে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.