বিডিও এবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির মধ্যে চাপানউতোরে উন্নয়নের কাজ থমকে গিয়েছে বলে অভিযোগ উঠল কাটোয়া ১ ব্লকে। বিডিও-র বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই মহকুমা প্রশাসনের কাছে খারাপ আচরণের অভিযোগ জানিয়েছেন সিপিএম পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি-সহ বেশ কিছু জন প্রতিনিধি। কাটোয়ার মহকুমাশাসক দেবীপ্রসাদ করণম জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি মেটানোর চেষ্টা চলছে।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত মাসের শেষ সপ্তাহে আচমকা কাটোয়া ১ ব্লক অফিসে পরিদর্শনে যান মহকুমাশাসক দেবীপ্রসাদ করণম। সেই সময়ে বিডিও সুব্রত মুখোপাধ্যায় অফিসে ছিলেন না। দফতরের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন মহকুমাশাসক। কর্মীরা এক সঙ্গে বিডিও-র বিরুদ্ধে অভব্য আচরণের অভিযোগ জানান। গোয়াই পঞ্চায়েতের কর্মী অরূপ যশ, আলমপুরের সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়, গীধগ্রামের হরিদাস বিশ্বাসরা সিপিএম পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বংশী ঘোষের কাছেও বিডিও-র বিরুদ্ধে খারাপ আচরণের অভিযোগ জানান।
এর পরে গত ৩০ জানুয়ারি মহকুমাশাসক বেশ কিছু প্রশ্ন তুলে বিডিও-র কাছে চিঠি পাঠান। সেই চিঠিতে জানানো হয়, ওই ব্লকে প্রশাসনিক কাজকর্ম অন্য ব্লকের চেয়ে বেশ কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। উন্নয়নের গতিও শ্লথ। এ সবের ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। মহকুমাশাসকের কাছে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বংশীবাবু অভিযোগ করেছিলেন, তাঁদের কিছু না জানিয়ে কাটোয়া ১ ব্লক দফতরের উদ্যোগে কাটোয়া শহরের কাশীরামদাস বিদ্যায়তনের মাঠে ‘বিবেক মেলা’র আয়োজন করা হয়। পঞ্চায়েত সমিতির অনুমোদন ছাড়াই বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়, ক্যালেন্ডার ছাপানো হয়। বংশীবাবুর অভিযোগ, “বিডিও চিঠি দিয়ে বিভিন্ন দফতরকে জানিয়েছিলেন, বিবেক মেলার জন্য গ্রামীণ সমাজ সমৃদ্ধ হবে। কিন্তু শহরের কেন্দ্রস্থলে হওয়া ওই মেলা কী ভাবে গ্রামীণ সমাজকে সমৃদ্ধ করবে, আমাদের বোধগম্য হয়নি।”
এই প্রসঙ্গ তুলেও বিডিও-র কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন মহকুমাশাসক। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে মহকুমাশাসককে এ সবের উত্তরে চিঠি পাঠিয়েছেন বলে জানান বিডিও সুব্রতবাবু। তিনি বলেন, “আমার কাজকর্মে নিশ্চয় মহকুমাশাসক কোনও ত্রুটি পেয়েছেন। সে কারণে বেশ কিছু প্রশ্ন তুলে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। আমি জবাব দিয়ে দিয়েছি।”
এর মধ্যে গত শুক্রবার কাটোয়া ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, কর্মাধ্যক্ষ, সিপিএম পরিচালিত তিনটি পঞ্চায়েতের প্রধান ও বর্ধমান জেলা পরিষদের দু’জন সদস্য এক সঙ্গে বিডিও-র বিরুদ্ধে কাটোয়ার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট অঞ্জন গুহর কাছে স্মারকলিপি জমা দেন। তাঁদের অভিযোগ ছিল, অঙ্গনওয়াড়ি ও শিশু শিক্ষাকেন্দ্রের কর্মীদের সঙ্গে বিডিও খারাপ ব্যবহার করছেন। পঞ্চায়েত সমিতি ও ব্লক দফতরের কর্মীরাও বিডিও-র ব্যবহারে আতঙ্কিত বলে অভিযোগ।
পঞ্চায়েত সমিতি ও ব্লক দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকায় তফসিলি জাতি ও উপজাতি শংসাপত্র দিতে দেরি হচ্ছে। কয়েক লক্ষ টাকা পড়ে থাকলেও বিভিন্ন প্রকল্পে পেনশন প্রাপকেরা টাকা পাচ্ছেন না। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বংশীবাবুর অভিযোগ, গত ৭-৮ মাস ধরে বিডিও পঞ্চায়েত সমিতির গাড়ি ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবহার করছেন। তিনি নিয়মিত দফতরে না আসায় উন্নয়নের কাজও ব্যাহত হচ্ছে।” কাটোয়া ১ বিডিও সুব্রতবাবু অবশ্য এ সব অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁর পাল্টা দাবি, “আমি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির হাতের পুতুল হয়ে বসে নেই। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে নানা প্রকল্পের কাজ সরেজমিনে দেখছি। তাতেই সবার গোসা হচ্ছে।” বিডিও-র পাশে দাঁড়িয়েছেন কংগ্রেস নেতারা। দলের কাটোয়া ১ ব্লক সভাপতি চৌধুরী নজরুল হকের দাবি, “বিডিও উন্নয়নমূলক প্রকল্পে গতি আনতে চাইছেন। পঞ্চায়েত সমিতিতে বিরোধীদের সম্মান দিচ্ছেন। সেই কারণে সিপিএম পরিচালিত ওই পঞ্চায়েত সমিতি বিডিও-র কাজে বাধা দিচ্ছেন।”
মহকুমাশাসক দেবীপ্রসাদ করণম বলেন, “ওই বিডিও এবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির কাজকর্মের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সব পক্ষকে ডেকে বিষয়টি মেটানোর চেষ্টা হচ্ছে।” |