বেঘোরে প্রাণ হারাল বালকও
বাস থেকে মাথায় গ্যাস সিলিন্ডার, মৃত্যু মহিলার
কেই বোধহয় বলে নিয়তি।
এক জন খেতে বসেছিলেন বর্ধমান-নাদনঘাট রাস্তার পাশে। কালনায় বিদ্যুতের খুঁটির পাশে বসে খেলা করছিল অপর জন। পাশ দিয়ে হুশ করে বেরিয়ে গেল গাড়ি। যিনি খেতে বসেছিলেন, তাঁর মাথায় এসে পড়ল গ্যাসের সিলিন্ডার। যে ছেলেটি খেলছিল, তার মাথায় পড়ে গেল বিদ্যুতের খুঁটি। পতনের আশ্চর্য সমাপতন কেড়ে নিল দু’টি প্রাণ।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা নাগাদ বর্ধমানের কালনা শহরে মহাপ্রভুপাড়ায় বাড়ির সামনে ছোট রাস্তায় খেলা করছিল স্থানীয় নিগমানন্দ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র অতনু মণ্ডল (৮)। কাছেই দাঁড়ানো একটি সাইকেল ভ্যানে তোলা হচ্ছিল বিয়েবাড়ির জিনিসপত্র। ধানের বস্তা বোঝাই একটি মোটরচালিত ভ্যান তার পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ধানের বস্তায় ধাক্কা খেয়ে উপড়ে যায় রাস্তার পাশে থাকা সিমেন্টের বিদ্যুৎ-খুঁটি। পড়ে সোজা অতনুর উপরে। কালনা মহকুমা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হলেও রাস্তাতেই তার মৃত্যু হয়।
মৃত খেতমজুরের পরিবার। ছবি: উদিত সিংহ
বর্ধমান থানার টুবগ্রামের হাজরাপাড়ার অলকা হাজরাকে (৪২) অবশ্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়টুকুও মেলেনি। স্বামী শান্তি হাজরা, দুই ছেলে কার্তিক ও তাপু এবং কার্তিকের স্ত্রী চম্পার সঙ্গে কাছেই পারুইগ্রামে খেতমজুরি করতে গিয়েছিলেন তিনি। দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ বর্ধমান-নাদনঘাট রাস্তার পাশে তাঁরা ভাত খেতে বসেছিলেন। তখনও খাওয়া শুরু হয়নি। পাশের রাস্তায় দ্রুতগতিতে বাঁক নেয় বামুনপাড়া থেকে মন্তেশ্বর হয়ে বর্ধমান যাওয়ার একটি বাস। তারই ছাদ থেকে গ্যাসের সিলিন্ডার ছিটকে সোজা এসে পড়ে অলকাদেবীর মাথায়। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু ঘটে।
অলকাদেবীর বড় ছেলে কার্তিক বলেন, “বোরো ধান রুইতে এসেছিলাম। সারা সকাল কাজ করে পরিশ্রান্ত হয়ে সবে খেতে বসেছি। বাড়ি থেকে আনা ভাত বেড়ে দিচ্ছিলেন মা। আচমকা উপর থেকে কী একটা মায়ের মাথায় এসে পড়ল!” ওই পরিবারটির পাশেই ভাত খেতে বসেছিলেন খেতমজুর মানিক হাজরা। তিনিও দেখেছেন, “হঠাৎ উড়ে এল সাদা কাপড়ে মোড়া গ্যাস সিলিন্ডার। অলোকার মাথায় লেগে গড়িয়ে মাঠে নেমে গেল সেটা। রক্তের ছিটে এসে লাগল আমার শরীরে।” কাঁপা গলায় কার্তিক বলেন, “চোখের সামনে রক্তে ভেসে ছটফট মা মারা গেলেন।”
বাইরে খেতমজুরেরা এবং বাসের ভিতরে যাত্রীরা হইহই করে ওঠায় চালক ও খালাসি বাস থামিয়ে নেমে পালান। বর্ধমান-নাদনঘাট রাস্তা অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রায় দু’ঘন্টার অবরোধে ট্রাফিকের নাভিশ্বাস ওঠে।
কালনায় বিদ্যুতের খুঁটি মাথায় পড়ে মৃত বালকের শোকার্ত পরিজন। ছবি: কেদারনাথ ভট্টাচার্য
দুপুর আড়াইটে নাগাদ বর্ধমান থানার আইসি স্বপনকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় গিয়ে বাসমালিকের থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের আশ্বাস দিলে অবরোধ ওঠে। বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “বাসের ছাদে গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে যাওয়া আইনত দণ্ডনীয়। আমরা চালক ও অন্য কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।” জেলা পরিবহণ নিয়ামক অনির্বান কোলে জানান, বাসটির পারমিট পর্যন্ত বাতিল হতে পারে।
কালনায় ক্ষোভের আঁচ গড়ায় আরও অনেক দূর। বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে অতনু জখম হওয়ার পরেই এলাকার লোকজন মোটরভ্যানের চালক কৃষ্ণ মণ্ডলকে দায়ী করেছিলেন। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, বছর চোদ্দোর সুবীর মজুমদারের অভিযোগ, রাস্তাটি সরু হওয়ায় সামনের সাইকেল ভ্যানের চালক কৃষ্ণকে একটু অপেক্ষা করতে বলেছিলেন। কিন্তু সে তা না শুনে এগিয়ে যায়। খুঁটি ভেঙে অতনু চাপা পড়লে ভ্যান নিয়ে পালায় কৃষ্ণ। তখন সকলে অতনুকে নিয়েই ব্যস্ত ছিল। বিকেল ৫টা নাগাদ মৃতদেহ বাড়িতে ফেরে। কান্নায় ভেঙে পড়ে তার বাবা পীযূষ মণ্ডল বলেন, “চোখের সামনে ছটফট করতে করতে ছেলেটা মারা গেল। কিছুই করতে পারলাম না।”
এর পরেই কৃষ্ণর বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর ক্ষোভ উগরে ওঠে। দলে দলে লোক তার বাড়িতে গিয়ে চড়াও হন। কিন্তু বাড়িতে কেউ ছিল না। মোটরভ্যানটিও না পেয়ে তাঁর দাদা বিষ্ণু মণ্ডলের ভ্যানে আগুন লাগিয়ে দেয় ক্ষিপ্ত জনতা। পরে কৃষ্ণকে গ্রেফতারের দাবিতে কালনা খেয়াঘাট রাস্তায় পুলিশ ফাঁড়ির কাছে মৃতদেহ রেখে বিক্ষোভ শুরু হয়। বেশ কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় পুলিশ রাতে অবরোধ তোলে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.