সেলাই শিখেই বোনেদের পড়া চালাতে চায় সোমা |
অর্পিতা মজুমদার • দুর্গাপুর |
ওরা স্কুলছুট। ইচ্ছে ছিল পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল সংসারের আর্থিক আনটন।
জীবনের গতির রেখাটা যেন থমকে গিয়েছিল হঠাৎই। ফের সেই রেখা সচল হতে শুরু করেছে। দিন-রাত এক করে কেউ কাজ শিখছেন। কেউ বা ইতিমধ্যেই রোজগার শুরু করে দিয়েছেন। সৌজন্যে, রাজ্য সরকার ও একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রকল্প।
ডেয়ারি মোড়ের বাসিন্দা সোমা কর্মকার। স্থানীয় গোপীনাথপুর মুক্ত বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে সে। সংসার চলে মামার সাহায্যে। বাড়িতে রয়েছে আরও দুই বোন। সোমার লক্ষ্য একটাই। বোনেদের পড়াশোনায় যেন ছেদ না পড়ে। সেজন্যই সে কাঁথা স্টিচের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।
ঋতু বাল্মীকির বাড়ি স্টেশন রোডে। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা। নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। তাই সে-ও হাজির এই শিবিরে।
বিধাননগরের ক্লাব স্যান্টোস মাঠ আর বি-জোনের চণ্ডীদাস বাজারের কাছে চলছে শিবির। দুই শিবির মিলে একসঙ্গে প্রায় শ’খানেক কিশোরী সেলাইয়ের কাজ শিখছে। প্রত্যেকেরই লক্ষ্য কাজ শিখে নিজের পায়ে দাঁড়ানো। |
বিধাননগরের ক্লাব স্যান্টোস মাঠে তোলা নিজস্ব চিত্র। |
দু’জায়গাতেই প্রশিক্ষকের ভূমিকায় দুই প্রাক্তন শিক্ষার্থী। তাঁদেরই এক জন গোবুকপুর বড় বৈনানের হাসনেহারা খাতুন বললেন, “বাবা নেই। মা অসুস্থ। মাধ্যমিক পরীক্ষার পর স্বনির্ভর হতে কাঁথা স্টিচের প্রশিক্ষণ নিই। তার পর থেকেই নিজে কাঁথা স্টিচের কাজ করছি। পাশাপাশি কাজও শেখাই। দু’দিক থেকেই আয় হয়।”
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, প্রকল্পের নাম কিশোরী শক্তি যোজনা (কেএসওয়াই)। রাজ্য সরকারের নারী ও শিশু বিকাশ এবং সমাজ কল্যাণ দফতরের আর্থিক সহায়তায় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এই প্রকল্প পরিচালনা করে। কিশোরীদের কাঁথা স্টিচ, ব্যাগ তৈরি, পাট, জরির কাজ থেকে শুরু করে জ্যাম, জেলি, আচার তৈরিরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। মাস খানেকের প্রশিক্ষণ শেষে সরকারি শংসাপত্র মেলে। সঙ্গে ওই বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে কাজও জুটে যায়। ফলে ঘরে বসেই আয় করতে পারেন ওই মহিলারা।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষে অসীম দাস জানালেন, শুধু স্কুলছুট নয়, আর্থিকভাবে অনগ্রসর মহিলারাও এই প্রকল্পের সুবিধা নিতে পারেন। শুধু বয়স হতে হবে ১১ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। প্রশিক্ষণ শেষে কাজ পেতে যাতে অসুবিধা না হয় সেজন্য সাধ্যমতো সাহায্য করা হয় বলেও জানান অসীমবাবু। তিনি বলেন, “এই প্রকল্পে কাজ শিখে ইতিমধ্যেই বহু মহিলা রোজগার করছেন। আমরা চাই আরও মহিলা এই প্রকল্পের সুবিধা নিন।” |