|
|
|
|
শিশুমৃত্যু রুখবে সরকার |
প্রশিক্ষণ দেবে জেলা প্রশাসন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মালদহ |
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে মালদহ জেলায় শিশু মৃত্যু রুখতে পরিকাঠামো উন্নতির পাশাপাশি জেলার সমস্ত গ্রামে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মী, আশা কর্মী ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করল জেলা প্রশাসন। সোমবার মালদহ কলেজ অডিটোরিয়ামে এই প্রশিক্ষণের সূচনা করে জেলাশাসক শ্রীমতি অর্চনা জানান, জেলায় শিশু মৃত্যু রুখতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁরা তিনটি প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন। প্রথম প্রস্তাব ছিল, মালদহ সদর হাসপাতালে শিশু বিভাগ ও এসএনসিইউ ওয়ার্ডের শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি, দ্বিতীয় প্রস্তাব ছিল, জেলার প্রতিটি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শিশুদের জন্য স্টেবিলাইজেশন ইউনিট গড়ে তোলা এবং তৃতীয় প্রস্তাব ছিল জেলার প্রতিটি গ্রামের গভবর্তী মায়েদের পুষ্টি ও স্বাস্থ্য সচেতনতা গড়ে তোলা। জেলাশাসক বলেন, “শেষের এই কাজটির উপর নজর রাখা কাজ যাদের সেই অঙ্গনওয়াড়ি, আশা কর্মী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে একযোগে কাজ করা। মুখ্যমন্ত্রী আমার পাঠানো তিনটি প্রস্তাবই মেনে নিয়েছেন। সেই অনুযায়ী মালদহ সদর হাসপাতালে শিশু বিভাগে ১০৪ শয্যা বাড়িয়ে ২৫০ করা হচ্ছে। এসএনসিইউ ওয়ার্ডে শয্যা বাড়ানো হয়েছে। ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শিশুদের জন্য দুটি করে স্টেবিলাইজেশন ইউনিট এই সপ্তাহের মধ্যে চালু করা হবে।” জেলা প্রশাসনের বক্তব্য, কেবল পরিকাঠামো বাড়ালেই শিশু মৃত্যু রোখা যাবে না। গ্রামের মায়েদের সচেতন করতে হবে। সেই জন্য গ্রামের মায়েদের সচেতন করতে স্বাস্থ্যকর্মী, আশা কর্মী ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের গ্রামের তৃণমূল স্তরে কাজ করাতে হবে। জেলাশাসকের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রাজ্যে প্রথম মালদহেই স্বাস্থ্যকর্মী, আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে একসঙ্গে গ্রামে নামানো হবে। সোমবার জেলার সমস্ত আশা কর্মীদের প্রশিক্ষণ হয়। মঙ্গলবার ও বুধবার প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে যথাক্রমে অঙ্গনওয়াড়ি ও স্বাস্থ্য কর্মীদের। প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন রাজ্য ও জেলার স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। প্রশিক্ষণ শেষে প্রতি গ্রামে কর্মরত স্বাস্থ্য কর্মী, আশা কর্মী ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা একযোগে খোঁজ নেবেন গ্রামের কতজন মহিলা গর্ভবতী। তাদের তালিকা তৈরি করে নিয়মিত নজর রাখা হবে। স্বাস্থকর্মীরা নজর রাখবেন গর্ভবতী মহিলারা সময় মতো টিকা নিচ্ছেন কি না। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা নজর রাখবেন গর্ভবতী মায়েরা ঠিকমতো পুষ্টিকর খাবার পাচ্ছেন কি না। আশা কর্মীরা গর্ভবতী মায়েদের শারীরিক অবস্থার নজর দিকে রাখবেন। প্রতিটি গ্রামের তিনজন সদস্য প্রতি সপ্তাহে ব্লক লেবেলের কমিটিকে রিপোর্ট দেবেন। সেই রিপোর্ট সরাসরি জেলাশাসক মনিটরিং করবেন। প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বাস্থ্য কর্মী,আশা কর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা গ্রামে বাল্যবিবাহ রুখতে গ্রামের মানুষদের সচেতন করবেন। পাশাপাশি বাড়িতে প্রসবের পরিবর্তে গর্ভবতী মায়েদের হাসপাতালে প্রসব করানোর প্রবণতা বাড়ানোর জন্য প্রচার করবেন। স্বাস্থ্য কর্মী, আশা কর্মী ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের পাশাপাশি এদিন সদর হাসপাতালে ব্লক স্তরের চিকিৎসক ও নার্সদের এসএনসিইউ ওয়ার্ডে শিশুদের কীভাবে পরিষবা দিতে হয় সেই ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণের মাঝেই গত ৪৮ ঘন্টায় মালদহ সদর হাসপাতালে ৫ টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। হরিশ্চন্দ্রপুরের বিবেকানন্দ পল্লির ৬ মাসের আলম শেখকে রবিবার বিকেল ৫টায় সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাত ৮ টায় তার মৃত্যু হয়। একই সময় পুরাতন মালদহের কালুয়াদিঘির প্রদীপ মন্ডল ও আশা মন্ডল তাদের দেড় বছরের শিশুকে ভর্তি করেছিলেন। রাত ৯ টায় তাদের শিশু পুত্রটি মারা যায়। প্রদীপবাবুর অভিযোগ, হাসপাতাল থেকে ইনজেকশন দেওয়ার ২ ঘন্টা পরেই ছেলে মারা যায়। এরপর সোমবার সকালে আরও তিনটি শিশু মারা যায়। মালদহ মেডিক্যাল কলেজের ভাইস প্রিন্সিপ্যাল মহম্মদ রসিদ বলেন, “শুনেছি ইনজেকশন নেওয়ার পরে দুটি শিশু মারা যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি কাকতালীয় হতে পারে। তবে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” |
|
|
|
|
|