ভাটোরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র
ডাক্তারের অভাবে পরিষেবা বেহাল
তুন ভবন তৈরির কাজ অসমাপ্ত। এই পরিস্থিতিতে চালু হতে পারছে না অন্তর্বিভাগ। পুরনো ভবনে বর্হিবিভাগ চালু থাকলেও সেখানে কোনও চিকিৎসক নেই। প্রত্যন্ত এলাকায় যোগাযোগের সমস্যার জন্য কোনও চিকিৎসক এখানে আসতে রাজি হচ্ছেন না বলে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের একাংশের ব্যাখ্যা। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিএমওএইচ নিজে সপ্তাহে এক দিন করে রোগী দেখেন। বাকি ছ’দিন ভাগাভাগি করে রোগী দেখেন ফার্মাসিস্ট এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। এ ভাবেই চলছে হাওড়ার আমতা ২ ব্লকের ভাটোরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র।
এই ব্লকের ভাটোরা এবং ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান এই দু’টি পঞ্চায়েত এলাকার ৫০ হাজার মানুষের চিকিৎসা হওয়ার কথা এখানে। বছর পাঁচেক আগে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এখানে ১০ শয্যার অন্তর্বিভাগ খোলা হবে। বছর দুই আগে ভবন তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু কাজটি আর শেষ হয়নি। অথচ এর জন্য বরাদ্দ হয়েছে প্রায় এক কোটি টাকা।
এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একমাত্র চিকিৎসক ২০১১ সালের মে মাসে অবসর নিয়েছেন। গ্রামবাসীরা জানান, তাঁরা বার বার আবেদন করা সত্ত্বেও চিকিৎসক পাঠায়নি স্বাস্থ্য দফতর। সকাল ১১টা নাগাদ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসে দেখা গেল বর্হিবিভাগে রোগীদের লাইন। চতুর্থ শ্রেণির কর্মী অরুণ বসু নিজেই রোগী দেখে ওষুধ দিচ্ছেন। তিনি বললেন, “পাড়ায় হাতুড়ে চিকিৎসা করি। ফলে অসুবিধা হয় না। তবে গুরুতর অসুস্থ কেউ এলে চিকিৎসা করি না। ছোটখাটো জ্বর, সর্দি বা পেটের গোলমালের ওষুধ দিই।” তাঁর কথায়, “বিএমওএইচ আসেন সপ্তাহে এক দিন। বাকি দিনগুলিতে ফার্মাসিস্টই রোগী দেখেন। তবে তিনি ব্লকে বা জেলায় গুরত্বপূর্ণ বৈঠকে গেলে আমাকে রোগী দেখতে হয়।” বিএমওএইচ অভিজিৎ ভট্টাচার্য নিজে প্রতি শুক্রবার বর্হিবিভাগে রোগী দেখতে আসেন। গড়ে দেড় থেকে দু’শো রোগী দেখেন তিনি। অভিজিৎবাবু বললেন, “জেলায় চিকিৎসক চেয়ে হয়রান হয়ে গিয়েছি। না-পাওয়া গেলে কী করব?”
ছবি: হিলটন ঘোষ।
এই এলাকায় আরও কয়েকটি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের তত্ত্বাবধান করতে হয় অভিজিৎবাবুকেই। তাঁর কথায়, “কিছু করার নেই। দু’টি পঞ্চায়েতকে চিকিৎসকবিহীন করে রাখতে পারি না।” চতুর্থ শ্রেণির কর্মীকে দিয়ে চিকিৎসা করানোর বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, “ফার্মাসিস্ট আমার অনুপস্থিতিতে চিকিৎসা করেন।”
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বাতী দত্ত বলেন, “মোট চার বার ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য চিকিৎসক পদে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কেউ যাননি। চেষ্টা হচ্ছে যাতে দ্রুত ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক পাঠানো যায়।”
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, যোগাযোগ ব্যবস্থার সমস্যার জন্যেই ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক আসতে রাজি হচ্ছেন না। একই কারণে অন্তর্বিভাগের ভবন তৈরির কাজ ব্যহত হচ্ছে বলেও জানান জেলা পরিষদের কর্তারা। ভবনটি তৈরি করছে জেলা পরিষদ। জেলা বাস্তুকার সুব্রত রায়ের কথায়, “গত বন্যায় রাস্তা ভেঙে গিয়েছে। ফলে সাইকেলে করে ইট-সহ ভবন তৈরির ইমারতি দ্রব্য বয়ে নিয়ে যেতে হচ্ছে। ঠিকাদারের পোষাচ্ছে না বলে তিনি আমাদের জানিয়েছেন। পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে রাস্তা তৈরির কাজে হাত দেওয়া হবে বলে শুনেছি। তার পরে ফের কাজ শুরু হবে।”
পরিকাঠামোগত অসুবিধার কথা স্বীকার করেন গ্রামবাসীরাও। এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসতে হলে কুলিয়াঘাটে মুণ্ডেশ্বরী পার হয়ে প্রায় এক ঘণ্টা হাঁটা পথ ধরতে হয়। রাস্তায় কোনও অটো-রিকশা বা ট্রেকার চলাচল করে না। হাঁটা পথে এসেও রেহাই নেই। পার হতে হয় একটি খাল। তার উপরে জেলা পরিষদ একটি কালভার্ট নির্মাণ করেছে। কিন্তু সেটি অসমাপ্ত। শুধু মাঝখানের ঢালাইটুকু হয়েছে। তাতে ওঠার দু’ধারের রাস্তা তৈরি হয়নি। ফলে কালভার্টটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। জেলা বাস্তুকারের অবশ্য দাবি, কালভার্ট-এর দু’দিকের রাস্তা তৈরি করে দেওয়া হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা হারুন রশিদ, অশোক গায়েন, ফারুক মল্লিক, শেখ রেজাউল, মোজায়েত হোসেনদের দাবি, “কুলিয়াঘাটে মুণ্ডেশ্বরীর উপরে সেতুটি করে দিলে অনেক সমস্যার সমাধান হত। গাড়িতে সরাসরি এখানে আসা যেত।” জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে সেতুটি তৈরির জন্য তিন বার টেন্ডার হলেও যে টাকা বরাদ্দ হয়েছে তাতে কোনও ঠিকাদার সংস্থা কাজটি করতে আগ্রহ দেখায়নি। বরাদ্দ বাড়াতে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরে আবেদন করা হয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.