|
|
|
|
দায় নিয়ে চাপান-উতোর |
শিশু-অপুষ্টিতে ‘এগিয়ে’ ধাপা |
সোমা মুখোপাধ্যায় • কলকাতা |
জেলায় জেলায় অপুষ্ট শিশুর সংখ্যা কমাতে রাজ্য জুড়ে যখন নানা প্রকল্পের কথা ভাবা হচ্ছে, তখনই খাস কলকাতার ৫৮ নম্বর ওয়ার্ড (ধাপা এলাকা) ঘোরতর অস্বস্তিতে ফেলেছে প্রশাসনকে। সরকারি-বেসরকারি একাধিক সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, সেখানকার শিশুদের একটি বড় অংশই অপুষ্টির শিকার। কিন্তু যাঁদের এই বিষয়টি নিয়ে ভাবার কথা, দেখা যাচ্ছে তাঁরা এ বিষয়ে সম্পূর্ণ উদাসীন। চলছে দায়িত্ব নিয়ে চাপান-উতোরও।
সম্প্রতি দেশে শিশুদের অপুষ্টি সংক্রান্ত এক রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পরে এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। তাঁর কথায়, “এ হল জাতীয় লজ্জা।’ খাস কলকাতায় একটি ওয়ার্ডের অর্ধেকেরও বেশি শিশুর অপুষ্টি যে খুবই লজ্জাজনক, তা মানছেন স্বাস্থ্য ও নারী ও শিশু কল্যাণ দফতরের কর্তারা। কিন্তু কী ভাবে মুক্তি মিলবে এই ‘লজ্জা’ থেকে, কেউ-ই সে বিষয়ে বিশেষ আলোকপাত করতে পারেননি। দায় এড়িয়েছে পুরসভাও।
কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষের কথায়, “৫৮ নম্বর ওয়ার্ড মানে তো প্রায় পুরোটাই বস্তি।” কিন্তু বস্তি এলাকা মানেই কি অপুষ্টিকে স্বাভাবিক বলে মেনে নেওয়া হবে? অতীনবাবু বলেন, “এগুলি দেখা পুরসভার কাজ নয়। পুরসভা শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ও টিকাকরণের ব্যবস্থা করে। এর বাইরে আর কোনও প্রকল্প নেই। এটি স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্ব।”
স্বাস্থ্য দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য আবার বলেন, “স্বাস্থ্য দফতর অন্তঃসত্ত্বাদের আয়রন ট্যাবলেট বিলি করে, বাচ্চাদের ভিটামিনও দেয়। কিন্তু পুষ্টির বিষয়টি দেখে নারী ও শিশু কল্যাণ বিভাগ। সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্পের (আইসিডিএস) বিষয়টি দেখার কথা।” চন্দ্রিমাদেবীর অভিযোগ, ওই প্রকল্পে এত বছর বিশেষ কাজ না হওয়ায় এমন অপুষ্টির ছবি। তিনি বলেন, “ওই প্রকল্পের কর্মীদের পাঁচ ঘণ্টা ডিউটি। এক ঘণ্টা ‘হোম ভিজিট’-এর জন্য বরাদ্দ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেই কাজ হয় না।”
নারী ও শিশু কল্যাণ দফতরের সচিব টুকটুক কুমার জানান, ৫৮ নম্বর ওয়ার্ড আক্ষরিক অর্থেই তাঁদের দুর্ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তিনি বলেন, “ওই ওয়ার্ড থেকেই লাগাতার অপুষ্ট শিশুর খবর আসছে। ওয়ার্ডটি নিয়ে আমাদের আলাদা কোনও কর্মসূচি চালু করতে হবে।”
শিশুকল্যাণ দফতরের কর্তাদের এক বড় অংশের অভিযোগ, আইসিডিএস কর্মীদের দায়বদ্ধতা স্থির করে দেওয়া নেই বলেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁরা কিছু করেন না। এক কর্তা বলেন, “কোনও কর্মী যদি আইসিডিএস সেন্টারের তালা না খোলেন, তা হলে তাঁর চাকরি যাবে না। এর ফল যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে।” বস্তিবাসীদের নিয়ে কাজ করে যে সব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, তারা জানিয়েছে, কম বয়সে বিয়ে এখনও শিশুদের অপুষ্টির মূলে। কলকাতার ফুটপাথে বা বস্তিতেও হামেশাই নাবালিকাদের বিয়ে হয়। তার পরে এক-এক জনের ৮-৯টি করে সন্তান হয়। অপুষ্টি, রক্তাল্পতায় ভোগে মা ও সন্তান। হাসপাতালে প্রসবের প্রয়োজনীয়তা এবং তা না হলে মা ও সন্তানের কী ক্ষতি হতে পারে, শহরেও তার যথেষ্ট প্রচার নেই বলে সংগঠনগুলির অভিযোগ। জন্মনিয়ন্ত্রণ নিয়ে কাউন্সেলিং, কন্ডোম বিতরণ, বন্ধ্যাকরণ, গর্ভবতীদের পুষ্টি, শারীরিক পরীক্ষা, টিকাকরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন করছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা এতই নগণ্য, যে সেই কাজের সুফল প্রায় চোখে পড়ে না। |
|
|
|
|
|