|
|
|
|
মেদিনীপুর মেডিক্যাল |
১০ দিনে মৃত ৩১ শিশু, চালু হয়নি এসএনসিইউ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
গত ১০ দিনে ৩১টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ঘটনায় শোরগোল পড়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়ে। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, দিনে গড়ে ২টি করে শিশুর মৃত্যু হয়।
অত্যধিক কম ওজন, ফুসফুসে সংক্রমণ ও শ্বাসকষ্টজনিত কারণেই শিশু-মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। মেদিনীপুর মেডিক্যালে এখনও কেন ‘সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট’ (এসএনসিইউ) চালু হল না, সে নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন চিকিসাধীন শিশুদের পরিবারের লোকজন। তাঁদের বক্তব্য, মেডিক্যালে এসএনসিইউ তৈরি হলে শিশু-মৃত্যুর ঘটনা কমবে। সেখানে ২৪ ঘণ্টাই শিশুদের ‘বিশেষ’ নজরে রাখার কথা। কথা ছিল, চলতি মাসের গোড়াতেই এসএনসিইউ চালু হবে। কিন্তু, এখনও পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি। কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানাচ্ছেন, যত দ্রুত সম্ভব পরিকাঠামো গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। হাসপাতালের সুপার রামনারায়ণ মাইতি বলেন, “কিছু কাজ বাকি রয়েছে। চলতি মাসের মধ্যেই এসএনসিইউ চালু হতে পারে।” আর শিশুমৃত্যু প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “চেষ্টা করেও কম ওজনের শিশুকে অনেক সময়ে বাঁচানো যায় না।” |
|
এই অবস্থাই শিশু-ওয়ার্ডের। নিজস্ব চিত্র। |
রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটে চলেছে। তবে, মেদিনীপুর মেডিক্যালে শিশুমৃত্যু নিয়ে এখনও তেমন অভিযোগ ওঠেনি বলেই কর্তৃপক্ষের দাবি। যদিও হাসপাতালেরই একটি সূত্রের খবর, একাধিক মৃত শিশুর পরিজন মৌখিক ভাবে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেছেন, চিকিৎসার অবহেলার ফলেই তাঁদের সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আরও সতর্ক হওয়া জরুরি। গত ১০ দিনে যে ৩১টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে, তার মধ্যে রবিবারই ৬টি শিশুর মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ৫টি শিশু শিশু-ওয়ার্ডে মারা গিয়েছে। একটি শিশু মারা যায় লেবার রুমে। এ ছাড়া, জানুয়ারি মাসের ২৭ তারিখ ৪টি, ২৮ তারিখ একটি, ২৯ তারিখ দু’টি, ৩০ তারিখ ৩টি, ৩১ তারিখ ৩টি, চলতি মাসের ১ তারিখ ৩টি, ২ তারিখ ৪টি, ৩ তারিখ দু’টি, ৪ তারিখ ৩টি শিশুর মৃত্যু হয়।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, এখন কোনও শিশুর মৃত্যু হলে তা স্বাস্থ্য ভবনে জানাতে হয়। দিনে যদি একটি শিশুরও মৃত্যু হয়, সে খবরও স্বাস্থ্যকর্তাদের কাছে পৌঁছে দিতে হয়। কেন এই শিশুমৃত্যু? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, মেদিনীপুর মেডিক্যালে দিনে গড়ে দু’টি করে শিশুর মৃত্যু হয়ই। তাই, সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান তেমন অস্বাভাবিক কিছু নয়। তাঁদের বক্তব্য, কম ওজনের শিশুকে বাঁচানো অসম্ভব। হাসপাতালের এক আধিকারিকের কথায়, “ক’দিন আগেই ৪৫০ গ্রাম ওজনের একটি শিশু জন্মায়। এত কম ওজনের শিশুকে বাঁচিয়ে রাখা অসম্ভব।” পাশাপাশি, ফুসফুসে সংক্রমণ, শ্বাসকষ্টজনিত কারণেই এই শিশুমৃত্যু বলে কর্তৃপক্ষের দাবি।
সেই সঙ্গে রয়েছে পরিকাঠামোগত সমস্যা। এ সমস্যাতেও নাজেহাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মেদিনীপুর মেডিক্যালের শিশু ওয়ার্ডে এখন ৪৫টি শয্যা রয়েছে। অথচ, শিশু ভর্তি থাকে গড়ে ৮৫টি। অর্থাৎ, প্রায় দ্বিগুণ! ফলে, একই শয্যায় কখনও দু’টি শিশু, কখনও তিনটি শিশুকে রাখতে হয়। হাসপাতালের এক আধিকারিক বলেন, “দু’দিন আগে ১০৩টি শিশু ভর্তি ছিল। এই পরিস্থিতিতে কাজ করতে সমস্যা হবেই।” হাসপাতালের এক আধিকারিক বলেন, “গত জানুয়ারি মাসে শিশু ওয়ার্ডে মোট ৯৮৩টি শিশু ভর্তি হয়েছে। এর থেকেই বোঝা যায়, এখানে কেমন ‘চাপ’ থাকে। আমরা তো কোনও শিশুকে ফিরিতে দিতে পারি না।”
এই অবস্থায় যত দ্রুত সম্ভব এসএনসিইউ চালু করা জরুরি বলে স্বীকার করছেন কর্তৃপক্ষও। গত মাসের শুরুতেই মেদিনীপুর মেডিক্যালে এসে এসএনসিইউ তৈরির কাজ খতিয়ে দেখেছিল রাজ্য সরকার গঠিত টাস্ক-ফোর্স। সেই সময়ে কাজের ক্ষেত্রে গতি আনারও নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু, সেই মতো কাজে গতি আসেনি বলেই অভিযোগ। হাসপাতাল সূত্রে খবর, এসএনসিইউয়ে মোট ১২টি শয্যা থাকবে। ফলে, অন্তত ১২টি ‘সঙ্কটজনক’ শিশুর উপর ‘বিশেষ’ নজর রাখা সম্ভব হবে। পাশাপাশি, এখানে এমন আরও ১৩টি শয্যা থাকবে যেখানেও অপেক্ষাকৃত কম ‘সঙ্কটজনক’ শিশুদের চিকিৎসা চলবে।
হাসপাতালের সহকারী সুপার সুমনদেব চক্রবর্তী বলেন, “চলতি মাসের মধ্যেই এসএনসিইউ চালুর চেষ্টা চলছে।” কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, শিশুদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে কখনওই অবহেলা করা হয় না। এ ক্ষেত্রে কোনও অভিযোগ এলেও তা খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হয়। |
|
|
|
|
|