|
|
|
|
স্বাভাবিক প্রসবে নজির ময়নাগুড়ির ‘ব্রিগেড’-এর |
বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য • ময়নাগুড়ি |
কথায় কথায় ‘সিজার’ করানোর দিকে ঠেলে দেওয়াই যেখানে প্রায় রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেখানে স্বাভাবিক প্রসবে রাজ্যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ময়নাগুড়ি ব্লক হাসপাতাল। পাল্লা দিয়েছে ধূপগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালও। শহরের নার্সিংহোম থেকে যখন স্বাভাবিক প্রসব প্রায় উঠেই গিয়েছে, সেখানে এই হাসপাতাল দু’টি দেখিয়েছে, ইচ্ছে থাকলে কোনও কিছুই অসম্ভব নয়।
ওই দু’টিই হাসপাতালেই ‘সিজার’ করানোর পরিকাঠামো নেই। তবে ঝামেলা এড়াতে ২৪ কিলোমিটার দূরে জেলা হাসপাতালে ‘রেফার’ করে দেওয়ার প্রবণতাও এখানে নেই। বরং অন্তঃসত্ত্বারা গেলে সযত্নে স্বাভাবিক ভাবে প্রসব করানোর উপরেই জোর দেন চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ময়নাগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে ২০১০-২০১১ আর্থিক বছরে ২ হাজার ৯৫৮ জন প্রসূতির স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে। ওই সময় জেলা হাসপাতালে ৬ হাজার ৭৯৫ জন প্রসূতির স্বাভাবিক প্রসব হয়। জেলার ধূপগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসবের সংখ্যা ২ হাজার ৪২৩, রাজগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতালে ৮৬৬ জন, বেলাকোবা গ্রামীণ হাসপাতালে ৬৬৩ জন। সাফল্যের দৌড়ে এগিয়ে থাকায় গত শুক্রবার কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে ময়নাগুড়ি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হাতে মানপত্র এবং দু’লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। |
|
হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া মানপত্র নিয়ে
ময়নাগুড়ি ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সন্দীপ বাগ (বাঁ দিকে)। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক |
জলপাইগুড়ির সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কৌশিক চৌধুরী বলেন, “সাফল্যের পিছনে কোনও ম্যাজিক নেই। স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকদের ভাল ‘টিম ওয়ার্কের’ জন্য এটা সম্ভব হয়েছে।” যে আর্থিক বছরে ময়নাগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসবের অভাবনীয় সাফল্য এসেছে সেই সময় কৌশিকবাবু সেখানকার স্বাস্থ্য আধিকারিক ছিলেন। প্রসূতিদের বাইরে ‘রেফার’ না-করে গ্রামীণ হাসপাতালে রেখে স্বাভাবিক প্রসবের ব্যবস্থা করতে তিনি দল গড়ে কাজ শুরু করেন। স্বাস্থ্যকর্মীরা যার নাম দিয়েছেন ‘ব্রিগেড’। ওই ব্রিগেডের সৈনিকরা হলেন: হাসপাতালে ৬ জন চিকিৎসক, ৪ জন মেডিক্যাল অফিসার, দু’জন অতিরিক্ত মেডিক্যাল অফিসার, ১১ জন নার্স এবং ব্লকের প্রত্যন্ত এলাকায় কর্মরত ১১১ জন হেল্থ অ্যাসিস্ট্যান্ট।
ব্লক স্বাস্থ্য কর্তারা প্রসূতিদের দেখভালের কাজ শুরু করেন গোড়া থেকে। প্রাথমিক স্তরে হেল্থ অ্যাসিস্ট্যান্টরা প্রসূতিদের বাড়িতে যান। নিয়মিত ওষুধ খাওয়ানো, পরীক্ষার ব্যবস্থা করা ইত্যাদি কাজগুলো করার ফাঁকে প্রসবের সময় হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন। হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করার পরে দায়িত্ব চলে যায় নার্স ও চিকিৎসকদের উপরে। তাঁরা স্বাভাবিক প্রসবের পরে মা ও শিশুকে সুস্থ শরীরে বাড়িতে ফেরানোর ব্যবস্থা করে দায়িত্ব শেষ করেন। বর্তমান ময়নাগুড়ি ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সন্দীপ বাগ বলেন, “সদিচ্ছা থাকলে অনেক কিছু করা সম্ভব।” স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ আরতি বসুসেনগুপ্ত বলেছেন, “স্বাভাবিক প্রসবের অনেকগুলি ঝুঁকির দিক রয়েছে। সেই ঝুঁকি সামলে ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মীরা যে কাজটা ভাল ভাবে করতে পারছেন, সেটা খুবই প্রশংসনীয়।”
একই ছবি ধূপগুড়ি হাসপাতালে। প্রতি মাসে গড়ে ১৮০ জন প্রসূতির স্বাভাবিক প্রসব হচ্ছে। ধূপগুড়ির ভারপ্রাপ্ত ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রসূনরঞ্জন দে বলেন, “চাপ এড়াতে প্রসূতিকে বাইরে রেফার করা সহজ। কিন্তু আমরা ঠিক করেছি, যতক্ষণ সম্ভব এখানে রেখে প্রসবের ব্যবস্থা করা হবে।” ময়নাগুড়ি ও ধূপগুড়ি হাসপাতালের ব্যতিক্রমী ভূমিকায় অবাক শিশুদের নিয়ে কাজ করে এমন একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ডিরেক্টর সুদীপ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “ময়নাগুড়ি হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের ‘টিম ওয়ার্ক’ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। মানসিকতার সামান্য পরিবর্তন করলে কত বড় কাজ সহজে করা সম্ভব সেটাই ওঁরা করে দেখাচ্ছেন।” |
|
|
|
|
|