অগ্নিদগ্ধ শিশুর মৃত্যু, ক্ষুব্ধ পরিবার দুষল হাসপাতালকে
ছ’বছরের অগ্নিদগ্ধ শিশুকন্যার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সোমবার চাঞ্চল্য ছড়াল ই এম বাইপাস সংলগ্ন এক বেসরকারি হাসপাতালে। মৃতার বাবার অভিযোগ, চিকিৎসায় গাফিলতির জেরেই এই ঘটনা। তাঁর আরও অভিযোগ, রবিবার রাতে মেয়ের ‘মস্তিষ্কের মৃত্যু’ (ব্রেন ডেথ) হয়েছে ঘোষণার পরেও শুধুমাত্র ‘টাকার লোভে’ এ দিন সকাল পর্যন্ত তাকে ‘ভেন্টিলেশন’-এ রেখে দেওয়া হয়েছিল। এ দিন সকাল ১০টা ১০ মিনিটে ওই শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে ঘোষণা করা হয়।
ঋতপ্রভা ঘোষ নামে ওই শিশুর বাবা জয়ন্ত ঘোষ পূর্ব যাদবপুর থানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগ আনা হয়েছে ‘দুর্ব্যবহারের’ও। এ দিন হাসপাতাল চত্বরে ভিড় জমিয়েছিলেন ঋতপ্রভার অন্যান্য সহপাঠিনীর অভিভাবকেরা। এই ঘটনায় মর্মাহত তাঁরাও। ঘটনাচক্রে ওই হাসপাতালে কোনও ‘বার্ন ইউনিট’ নেই।
পুলিশ জানায়, পেশায় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার জয়ন্তবাবুর বাড়ি চারু মার্কেটের সুলতান আলম রোডে। গত ২৮ জানুয়ারি, সরস্বতী পুজোর দিন বাড়িতে পুজোর সময়ে শাড়ি পরেছিল প্রথম শ্রেণির ছাত্রী ঋতপ্রভা। পঞ্চপ্রদীপ থেকে তার শাড়িতে আগুন লেগে যায়। সে সময়ে বাড়িতে ছিলেন তার মা শ্রীপর্ণাদেবী। অগ্নিদদ্ধ ঋতপ্রভাকে নিয়ে যাওয়া হয় এসএসকেএমে। সেখানে সংশ্লিষ্ট বিভাগে কোনও শয্যা খালি ছিল না। তাই প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাকে অন্যত্র নিয়ে যেতে বলা হয়। তার পরে ঋতপ্রভাকে ভর্তি করা হয় ই এম বাইপাস লাগোয়া হাসপাতালটিতে।
জয়ন্তবাবুর প্রশ্ন, “বার্ন ইউনিট না থাকা সত্ত্বেও কেন ওকে ভর্তি নিল হাসপাতাল?” এর উত্তরে হাসপাতালের চেয়ারম্যান অলোক রায় বলেন, “এসএসকেএম থেকে ওই শিশুর পরিবারকে জানানো হয়েছিল, ঋতপ্রভার দেহের ২৫-৩০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে। পরিবারের লোকেরা রাজি হয়েছিলেন বলেই ওই শিশুর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শুরু করা হয়েছিল।”
মৃত শিশুর সামনে কান্নায় ভেঙে পড়লেন পরিজনেরা। —নিজস্ব চিত্র।
ঋতপ্রভার পরিবারের অভিযোগ: ৩০ জানুয়ারি, সোমবার অর্থাৎ ভর্তির দু’দিন পরে ওই শিশুর প্রথম ‘ড্রেসিং’ হয়। কেন ভর্তির পরদিন, অর্থাৎ রবিবার তার ড্রেসিং হল না সে ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক বা নার্স তাঁদের বলেছিলেন, ওই দিন ‘প্লাস্টিক সার্জন’ আসেননি। মঙ্গলবার সারাদিন ঋতপ্রভা বিভিন্ন লোকের সঙ্গে ‘স্বাভাবিক ভাবে’ কথা বললেও সন্ধ্যায় আচমকাই হাসপাতালের পক্ষ থেকে বলা হয়, তাকে ‘ভেন্টিলেশন’-এ রাখতে হবে। পরিবারের আরও অভিযোগ, ‘সংক্রমণ’ হতে পারে এই যুক্তি দিয়ে বলা হয়, শ্রীপর্ণাদেবী তার মেয়েকে দেখতে পারবেন না।
২৫ শতাংশ পুড়ে যাওয়ার কারণে কি কারও মৃত্যু ঘটতে পারে? এসএসকেএম হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক বিজয় মজুমদার বলেন, “শিশুদের ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশই যথেষ্ট ঝুঁকির হতে পারে। তা ছাড়া মেয়েটি যে ২৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল, তা ইমার্জেন্সির চিকিৎসকেরা প্রাথমিক ভাবে জানিয়েছিলেন। সাধারণ ভাবে ভর্তির পরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে কত শতাংশ পুড়েছে, তা নির্দিষ্ট ভাবে জানান।”
বার্ন ইউনিট না থাকা সত্ত্বেও কি অগ্নিদগ্ধকে হাসপাতালে ভর্তি করা উচিত? বিজয়বাবুর জবাব, “১৫ শতাংশের বেশি পুড়লেই হাসপাতালে ভর্তি করা দরকার। তা না হলে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। রোগীকে আলাদা রেখে যে কোনও জায়গাতেই চিকিৎসা করা যেতে পারে।”
ঋতপ্রভার এক সহপাঠিনীর মা, সুলক্ষণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “ঋতপ্রভার শরীর যে ক্রমশ খারাপ হচ্ছে, বৃহস্পতিবারের আগে সে কথা স্পষ্ট করে কেউ বলেননি। মেয়ে কেমন আছে, এ কথা জিজ্ঞাসা করলে তার মাকেও কিছু জানানো হয়নি।”
হাসপাতালের চেয়ারম্যানের অবশ্য দাবি, “সংক্রমণের কারণে ওই শিশুর শারীরিক অবস্থার অবনতির বিষয়টি তার বাবাকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছিল। তিনি সেই কাগজে সইও করেন। ৩০ জানুয়ারির পরে ১ ও ৪ ফেব্রুয়ারিও ঋতপ্রভার ‘ড্রেসিং’ করা হয়। তৈরি হয় তিন চিকিৎসকের একটি বোর্ডও।”
ওই শিশুর পরিবারের অভিযোগ, বৃহস্পতিবারের পর থেকে ঋতপ্রভার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে বলে জানানো হয়। জয়ন্তবাবু বলেন, “চিকিৎসক বলেছিলেন, মেয়ের চিকিৎসার জন্য ৫-৬ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। রবিবার ভোরে ঋতপ্রভার মস্তিষ্কের মৃত্যু হয়েছে বলে অন্য এক জনকে দায়িত্ব দিয়ে চলে যান এক চিকিৎসক। বহু অনুরোধের পরে তাঁকে ফের ডেকে আনা হয়।” শ্রীপর্ণাদেবীর অভিযোগ, মেয়ে বাঁচবে কি না, এ প্রশ্ন করা হলে ওই চিকিৎসক বলেন, “কোনও সম্ভাবনা নেই।” তিনি বলেন, “এ কথা শোনার পরে মেয়েকে যখন দেখতে যাই, তখন ওর ঠোঁট-কান থেকে রক্ত বেরোচ্ছে। চোখ-মুখ ফুলতে শুরু করেছে।” তা সত্ত্বেও ‘টাকার লোভে’ এ দিন সকাল পর্যন্ত ওই শিশুকে ‘ভেন্টিলেশন’-এ রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ শ্রীপর্ণাদেবীর।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঋতপ্রভার চিকিৎসার জন্য প্রায় ৩ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। পরিবারের তরফে ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা দেওয়া হলেও তাঁদের কখনও কোনও জোর করা হয়নি। অলোকবাবু বলেন, “শিশুটি যখন আসে, তখনই তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে গিয়েছিল। তাকে প্রথমে আলাদা ভাবে কেবিনে রেখেই চিকিৎসা শুরু হয়। পরে তাকে আইসিইউ-তে নিয়ে যাওয়া হয়। সংক্রমণের কারণেই মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে।” কলকাতা পুলিশের ডিসি (সাউথ-সাবার্বান) বিশ্বরূপ ঘোষ এ দিন বলেন, “ওই শিশুর পরিবারের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নিয়ম মেনেই বিষয়টি ‘মেডিক্যাল বোর্ড’-এ পাঠানো হবে।” পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে এ দিন পুলিশের উপস্থিতিতে ঋতপ্রভার মৃতদেহ ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.