কোথাও তিন মাসে টাকা দ্বিগুণের লোভ দেখিয়ে কোটি টাকা নিয়ে চম্পট দিচ্ছে ভুয়ো লগ্নিকারি সংস্থা। কোথাও দশ মাসে টাকা দ্বিগুনের আশ্বাস দিয়ে প্রতারিত করা হচ্ছে বাসিন্দাদের। আবার কোথাও আগাম টাকা জমা রাখার পরিবর্তে প্রায় দ্বিগুণ দামের ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র দেওয়ার নাম করে সাধারণ মানুষের টাকা নিয়ে প্রতারণা হচ্ছে। শিলিগুড়ি এবং সংলগ্ন এলাকায় এমন প্রতারক সংস্থার কাজকর্ম ক্রমশ বাড়ছে। পুলিশের হাতে কয়েকটি প্রতারক সংস্থার এজেন্ট ধরাও পড়েছে। এক প্রতারক সংস্থার কর্তাও ধরা পড়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অধরাই থেকে যাচ্ছে প্রতারক সংস্থার মূল পাণ্ডারা। সোমবার ওই ভুয়ো সংস্থাগুলি সম্পর্কে ধারণা তৈরি করতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন দার্জিলিং জেলা পুলিশ কর্তারা। শিলিগুড়ি সার্কিট হাউসে ওই বৈঠক হয়। বৈঠকে উপস্থিত রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার কিশোর পারিহার বিভিন্ন প্রতারক লগ্নিকারী সংস্থা সম্পর্কে পুলিশ কর্তাদের জানান। কোনও সংস্থা প্রতারণা করছে কী না, তা বুঝতে কোন কোন বিষয়ের উপরে নজরদারি করতে হবে সেটা জানিয়ে দেন। তিনি বলেন, “কোনও লগ্নিকারি সংস্থা অস্বাভাবিক হারে সুদ দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেও বুঝতে হবে সেখানে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। টাকা লগ্নি করার আগে সংশ্লিষ্ট সংস্থা সম্পর্কে ভাল করে খোঁজখবর নিতে হবে। সেটি অনুমোদিত কি না, তার বিশ্বাসযোগ্যতা কী রয়েছে তা জানতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খোঁজ না নিয়েই অতিরিক্ত সুদের আশায় টাকা রেখে অনেকেই প্রতারিত হচ্ছেন।” তিনি জানান, আরবিআই অনুমোদিত ১১০টি ব্যাঙ্ক রয়েছে। ৩০ হাজারের বেশি লগ্নিকারি সংস্থা নথিভুক্ত আছে। ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে সঠিক নজরদারি সম্ভব হলেও সমস্ত লগ্নিকারি সংস্থা সম্পর্কে তা সম্ভব হয় না। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের পাশাপাশি সরাসরি বাসিন্দাদের সতর্ক করতে প্রচার করছেন তারা। শহর এবং গ্রামের বিভিন্ন মেলাতে স্টল দিয়ে লিফলেট প্রচার করছে আরবিআই। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক মাস আগে শিলিগুড়িতে মুম্বইয়ের একটি ভুয়ো লগ্নিকারী সংস্থা তিন মাসে টাকা দ্বিগুণের টোপ দিয়ে কয়েক কোটি টাকা তোলে। কয়েকজন বাসিন্দার অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ওই সংস্থার এক কর্তা এবং কয়েকজন এজেন্টকে গ্রেফতার করে। কোটি টাকার উপরে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়। মাটিগাড়া থানার খাপরাইলে অর্ধেকের কম দামে ইলেকট্রিক জিনিস দেওয়ার নাম করে কোটি টাকা তুলে পালিয়ে যায় একটি ভুয়ো সংস্থা। প্রধাননগর থানা এলাকা, কালিম্পং থানা এলাকাতেও ভুয়ো সংস্থার টাকা নিয়ে পালানোর ঘটনা ঘটে। শিলিগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “শিলিগুড়ি ব্যবসায়ী জায়গা ক্রমশ এগিয়ে চলায় স্বাভাবিক বিভিন্ন প্রতারিত সংস্থার চোখ পড়েছে এখানে। কয়েকটি ঘটনায় আমরা ভুয়ো সংস্থার কর্তা ও এজেন্টদের গ্রেফতার করেছি। পুলিশকে ওই সংস্থাগুলির কাজকর্ম সম্বন্ধে ধারণা থাকা প্রয়োজন। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আরবিআইয়ের কর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসা হয়েছে।” |