শ্মশানে নিরাপত্তা দাবি করে প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেন শিলিগুড়ির একদল পুরোহিত। সোমবার উত্তরবঙ্গ পুরোহিত উন্নয়ন সমিতির উদ্যোগে শহরের বিভিন্ন এলাকার পুরোহিতরা গায়ে নামাবলি চড়িয়ে মিছিল করে শিলিগুড়ির মহকুমা প্রশাসন ও পুর কতৃর্পক্ষের কাছে স্মারকলিপি দিতে নিরাপত্তা দাবি করেন। তাঁদের অভিযোগ, মৃতদেহ সৎকার করতে গিয়ে শ্মশানে তাঁদের এবং শব যাত্রীদের হেনস্থা হতে হচ্ছে। এই ব্যাপারে বহু বার তাঁরা পুরসভাকে জানালেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কিরণচন্দ্র শ্মশান ঘাটের পরিবেশ ক্রমশ অপরিচ্ছন্ন হচ্ছে। শাস্ত্রবিধি মেনে সৎকার করতে গেলে জলের প্রয়োজন। অথচ বর্ষা ছানা বছরের বাকি সময়ে মহানন্দা নদীর জল মেলে না। আবর্জনা মাড়িয়ে নদী খাতে অনেকটা হেঁটে জল আনতে হয়। মুখাগ্নি করার পর স্নান করে উত্তরীয় পরতে হয়। এখন স্নানের যে জায়গা রয়েছে তা নর্দমার উপর। মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত জানিয়েছেন, পুরোহিতদের সমস্যার কথা তিনি এখনও বিস্তারিত জানেন না। খোঁজ নেবেন। পুর কমিশনার কাজলকান্তি সাহা বলেন, “এ দিন পুরোহিতরা স্মারকলিপি দেয়েছেন। তাঁদের দাবির বিষয়গুলি জানিয়েছেন।” |
মহকুমাশাসকের হতে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রের সুমন বাগদাস এ দিন পুরোহিতদের সমস্যার কথা শোনেন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে শ্মশানঘাটের পরিবেশ বদলের আশ্বাস দিয়েছেন শিলিগুড়ির তৃণমূল বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “কিছু সমস্যা আমি নিজেই গিয়ে দেখে এসেছি। দ্রুত এগুলির সমাধানের জন্য পরিকল্পনা হচ্ছে।” উত্তরবঙ্গ পুরোহিত উন্নয়ন সমিতির সভাপতি কালীকুমার চক্রবর্তী জানান, সৎকার কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে শবযাত্রী এবং তাঁদের। ঘাটে মলমূত্রের দুর্গন্ধ। নোংরা পরিবেশ। শুয়োর, ছাগল চড়ছে। তিনি বলেন, “ঘাটটি সুষ্ঠু ভাবে দেখভাল করতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। শাস্ত্র মতে দাহ করার আগে শবদেহ স্নান করাতে হয়। তা করতে এবং দাহ শেষে কিছু শাস্ত্রবিধি মানতে নদীর জল প্রয়োজন হয়। নলকূপ বা কলের জলে তা হয় না। অথচ নদীর স্রোত দূরে থাকায় ঘাটে নেমে অবর্জনার উপর দিয়ে হেঁটে জল আনতে যেতে হয়। নদীখাত খুঁড়ে ঘাটের কাছে একটা প্রবাহ আনা গেলে সমস্যা মিটত। পুরসভা, মহকুমা প্রশাসন, এসজেডিএ সকলকেই এ দিন আমরা জানিয়েছি।” যে সাত দফা দাবি এ দিন তারা জানিয়েছেন তার মধ্যে রয়েছে ঘাটে শেডের ব্যবস্থা করা। পুরোহিত উন্নয়ন সমিতির কর্মকর্তা বিকাশ রায়, উৎপল ভট্টাচার্যরা জানান, দাহ করার আগে পিণ্ডদান এবং অন্যান্য প্রস্তুতি নিতে দেহ যেখানে নামানো হয় সেখানে শেড নেই। রোদ, ঝড়-জলের দিনে তাই দুর্ভোগ পড়তে হয় মৃতের পরিবারের লোকদের। সেই সঙ্গে সৎকারের কাজ করান যাঁরা তাঁদেরও। একাধিক মৃতদেহ একই সময় দাহ করতে নিয়ে এলে অপেক্ষা করতে হয় পরিবারের লোকদের। তাদের জন্য শৌচাগার, পানীয় জলের সুব্যবস্থা নেই। অনেকে কাঠ দিয়ে দাহ করার কাজ করতে চান। বৈদ্যুতিক চুল্লির পাশাপাশি সেই ব্যবস্থা রাখার দাবিও জানান তাঁরা। |