রাজ্যের ৭৯০টি ক্লাবকে আর্থিক অনুদান দেওয়ার ক্ষেত্রে বিধি মানা হয়েছে কি না, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। এ বার বিতর্ক তৈরি হল, বিবেকানন্দের জন্মের সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে মেলা করার জন্য বিভিন্ন ব্লক, কর্পোরেশন ও পুরসভার বরোগুলিকে ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা করে সাহায্য দেওয়া নিয়েও। যুব কল্যাণ দফতরের বিভিন্ন কাজের জন্য বরাদ্দ করে রাখা টাকা থেকে নিয়ে মোট ৬ কোটি টাকা খরচ করা হবে বিবেক মেলার জন্য। কিন্তু পরিকল্পনা খাতে বরাদ্দ করে রাখা টাকা বছরের মাঝখানে এসে এ ভাবে অন্য খাতে খরচ করাটা সঙ্গত কি না, উঠছে সেই প্রশ্ন।
যুবকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলছেন, “গত ৩৪ বছরে বিবেকানন্দ, সুভাষচন্দ্র বসুর মতো বাংলার মনীষীদের ভুলতে বসেছিল রাজ্যবাসী। সে কারণেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর মাধ্যমে বিবেকানন্দকে রাজ্যের যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে পৌঁছে দিতে চাইছেন।” যুবকল্যাণ দফতরের অবশ্য দাবি, যুব সম্প্রদায়ের উন্নয়নের জন্যই খরচ করা হচ্ছে ওই অর্থ।
সরকারি রীতি অনুযায়ী, পরিকল্পনা খাতে বরাদ্দ অর্থ বছরভর কোথায় কী ভাবে খরচ হবে, তা আগেই ঠিক করা থাকে। সেই কারণে বছরের মাঝে অন্য খাতে সেই টাকা খরচ হয় না। কিন্তু যুবকল্যাণ দফতর সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী বছরের মাঝেই বিবেক মেলার কথা ঘোষণা করায় সমস্যা তৈরি হয়। মেলার অর্থ জোগাতে যুব আবাস, জিমনাসিয়াম, মিনি ইন্ডোর গেমস কমপ্লেক্স, সায়েন্স ক্লাব, ব্লক স্তরে তথ্যকেন্দ্র, যুব সমাজের আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবন নিয়ে সমীক্ষা ও গবেষণা, ইয়ুথ ক্লাবকে কেন্দ্র করে আর্থ-সামাজিক কার্যকলাপ, বাংলা সঙ্গীত মেলা, বৃত্তিশিক্ষার কেন্দ্র, পর্বতারোহণ ও ‘অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস’-কে উৎসাহদান এবং কোচিং সেন্টারে সাহায্যের জন্য বরাদ্দ অর্থ থেকে কাটছাঁট করে বিবেক মেলার জন্য অর্থ জোগাড় করা হয়েছে।
দফতরের হিসেব বলছে, চলতি আর্থিক বছরে পরিকল্পনা খাতে বরাদ্দ হয়েছিল ২০ কোটি টাকা। তার অর্ধেক টাকা ইতিমধ্যেই খরচ হয়ে গিয়েছে। এ বার বিবেক মেলার জন্য টাকা জোগানোর পরে দফতরের বাকি সব কাজের জন্য অবশিষ্ট থাকবে ৪ কোটি টাকা। এ ব্যাপারে যুবকল্যাণ দফতরের ব্যাখ্যা, চলতি আর্থিক বছরের মধ্যে যে সব খাতে আর অর্থ খরচ করা যাবে না বলে মনে হয়েছে, সেই সব খাত থেকেই অর্থ এক জায়গায় করা হয়েছে মেলা করার জন্য। তার কারণ, বিবেকানন্দের জন্য মেলা করার ফলে আখেরে যুব সম্প্রদায়ের উন্নয়নই হবে।
সোমবার মহাকরণে অরূপবাবু জানান, রাজ্যের মোট ৩৪১ ব্লক এবং ১২৭টি পুরসভা, কর্পোরেশন ও বরোতে ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহে এই মেলা অনুষ্ঠিত হবে। এই উপলক্ষে তাদের ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। আয়োজন করা হবে প্রভাতফেরি, নাচ, গান, আবৃত্তি, নাটক, আলোচনাচক্র ও প্রদর্শনীর। প্রতিটি ব্লক, পুরসভা, কর্পোরেশন এবং পুরসভার বরোগুলির ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ‘ক্যুইজ’ এবং আঁকা প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হবে। এ ছাড়া স্কুলগুলিকে নিয়ে ফুটবল টুর্নামেন্টেরও আয়োজন করা হবে। যুবকল্যাণ দফতর তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিবেকানন্দ বলতেন, গীতা পাঠের চেয়ে ফুটবল খেলা ভাল। তাঁর বাণীকে সামনে রেখেই এই ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।
মেলা ছাড়াও প্রতি ক্ষেত্রে দশ হাজার টাকা করে ‘বিবেক সাহসিকতা পুরস্কার’ এবং ‘বিবেক মেধা পুরস্কার’-ও দেবে যুবকল্যাণ দফতর। এর জন্য একটি করে কমিটি তৈরি করা হবে। ওই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ীই ওই পুরস্কার দেওয়া হবে। |