সরকারি কর্মচারীদের কর্মমুখী করে তুলতে কাউন্সেলিংয়ের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। আর সেই কাজটা নিজের দফতর থেকেই শুরু করতে চাইছেন তিনি। সরকারি কর্মচারীরাই ‘সরকারের মুখ’ জানিয়ে সোমবার মহাকরণে পূর্ণেন্দুবাবু বলেন, “সরকার এবং সরকারি কর্মচারী হল একে অন্যের পরিপূরক। তাই এর মধ্যে সঙ্কীর্ণ রাজনীতি এনে লাভ নেই।” শ্রমমন্ত্রীর দাবি, “সরকারি কর্মচারীদের কাজ কী, সেটাই তাঁরা ঠিকমতো জানেন না। তাঁদের দায়িত্ব বিলির কাজ এত দিন ঠিকমতো হয়নি। সময়ে আসা-যাওয়ার অভ্যেসও নেই। এ সব সরকারি কর্মচারীদের ঠিকমতো বোঝানোর প্রয়োজন আছে। বদলি নীতিতে রাজনীতির প্রভাব কেন খারাপ, সে কথাও বুঝিয়ে বলব কর্মচারীদের।”
যদিও মন্ত্রীর এই পদক্ষেপকে সিপিএম প্রভাবিত কর্মী সংগঠন যে ভাল ভাবে নিচ্ছে না, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন কো-অর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অনন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “অসুস্থ মানুষের কাউন্সেলিং দরকার হয়। শ্রমিক-কর্মচারীদের কাউন্সেলিংয়ের দরকার নেই।” এক ধাপ এগিয়ে সারা ভারত সরকারি কর্মচারী সংগঠনের নেতা এবং সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুকোমল সেন বলেন, “ওঁদের কাউন্সেলিং দরকার হলে বলতে পারেন। আমরা সাহায্য করব।”
তবে শ্রমমন্ত্রী জানিয়ে দিচ্ছেন, এই কাজ থেকে তিনি এক পা-ও পিছু হঠবেন না। এবং কাজটা তিনি শুরু করতে চান ‘নিজের ঘর’ থেকেই। সেই মতো মার্চ মাসের শুরু থেকেই তিন ধাপে শ্রম বিভাগের কর্মচারীদের সঙ্গে সভা করবেন মন্ত্রী। প্রথমে শ্রম কমিশনারদের নিয়ে। তার পরে একে একে বিভাগীয় ইন্সপেক্টর এবং গ্রুপ-সি এবং গ্রুপ-ডি কর্মীদের নিয়ে সভা করবেন তিনি। গ্রুপ সি এবং ডি কর্মীদের নিয়ে সভাটি তিনি করতে চান রাজ্য শ্রম কল্যাণ দফতরের অডিটোরিয়ামে। পূর্ণেন্দুবাবু বলেন, “আমি সেখানে কর্মচারীদের বক্তব্যও শুনব। কার কী কাজ, কী করতে হবে, তা-ও বুঝিয়ে বলব।” পাশাপাশি, কর্মী সংগঠনগুলির সঙ্গেও এ ব্যাপারে কথা বলতে চান শ্রমমন্ত্রী। তিনি এ-ও বলেন, “সমিতিগুলিকে আমি জিজ্ঞাসা করতে চাই, এই যে আপনারা জোরে জোরে চিৎকার করেন, এতে কী আনন্দ পান? এটা কোনও অধিকারের পর্যায়ে পড়ে না।”
কাউন্সেলিংয়ের পাশাপাশি কর্মীদের বদলি নীতিতেও আরও স্বচ্ছতা আনতে চান পূর্ণেন্দুবাবু। তাঁর সাফ কথা, “বিশেষ কিছু ক্ষেত্র ছাড়া তিন বছর অন্তর বদলি নীতি মানতে হবে। মানবিকতার কারণে স্বামী-স্ত্রী কাছাকাছি বা অবসরের আগে কোনও কর্মীকে বাড়ির কাছাকাছি রাখার চেষ্টাও করতে হবে। তবে রাজনীতি করতে ও কাজ না করার জন্য সংগঠনের প্রভাব খাটিয়ে দিনের পর দিন একই বিভাগে পড়ে থাকা আমরা মেনে নেব না। বদলি নীতিতে রাজনীতির প্রভাব কেন খারাপ, সেটাও আমি কর্মীদের বুঝিয়ে বলতে চাই।”
কোন বিভাগে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কর্মী আছে, বা কোন বিভাগে কর্মী সংখ্যা কম, সেই সমীক্ষাও করতে চান পূর্ণেন্দুবাবু। সেই অনুযায়ী, প্রয়োজনে কর্মীদের বিভাগ পরিবর্তন করে সামঞ্জস্য আনার ভাবনা রয়েছে তাঁর।
যদিও কো-অর্ডিনেশনের নেতাদের দাবি, “বদলি নিয়ে সরকারের নির্দিষ্ট নীতি রয়েছে। তার বাইরে গেলে তবেই আমরা বলি। সরকার যদি বদলিটা নিজেদের জমিদারি মনে করে, তা হলে কর্মচারী সমিতি তার প্রতিবাদ করবে।”
একই সঙ্গে ট্রেড ইউনিয়নের অধিকারের বিষয়টি নিয়ে কর্মী সংগঠনগুলি কর্মচারীদের যে ভুল বোঝাচ্ছে, তা দাবি করে শ্রমমন্ত্রী বলেন, “কর্মচারীরা অনেকেই বিষয়টি জানেন না। প্রয়োজনে বাংলায় বিষয়টি অনুবাদ করে শ্রম দফতরের পক্ষ থেকে লিফলেট তৈরি করে বিলি করব।” তবে কো-অর্ডিনেশনের দাবি, সরকারি কর্মীদের অধিকার বজায় রাখা হবে বলে আশ্বাস দিয়েও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পিছু হঠছেন। সুকোমল সেন বলেন, “মহাকরণের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী সরকারি কর্মীদের অধিকার নিয়ে যে আশ্বাস দিয়েছিলেন, তা কাজে প্রয়োগ করছেন না।”
|