একটা পয়সাও পাইনি, সিঙ্ঘভিকে জবাব অমিতের
‘সৌহার্দ্যের আবহেও’ ফের বিতর্কে জড়াল রাজ্যের শাসক জোটের দুই শরিক। প্রসঙ্গ: রাজ্য সরকারকে কেন্দ্রীয় আর্থিক সাহায্য।
রবিবার প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপত্রের আনুষ্ঠানিক প্রকাশ অনুষ্ঠানে কংগ্রেসের সর্বভারতীয় মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেছিলেন, “পরিকাঠামো ও উন্নয়ন প্রকল্পে কেন্দ্র ইতিমধ্যেই রাজ্যকে ৭,৮০০ কোটি টাকা দিয়েছে।” সেই তথ্য ভুল বলে দাবি করে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র সোমবার মহাকরণে বলেন, “রাজ্যের পিছিয়ে পড়া ১১টি জেলার উন্নয়নে আমরা কেন্দ্র থেকে ৮,১০০ কোটি টাকা পাই। কিন্তু এখনও এক পয়সাও মেলেনি।” সিঙ্ঘভির প্রতি কার্যত কটাক্ষ করে অর্থমন্ত্রী এ-ও বলেন, “উনি হয়তো ঠিক জানেন না, বা ওঁকে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে।”
সিঙ্ঘভি কিন্তু বক্তব্যে অনড়। এ দিন দিল্লিতে তিনি বলেন, “এটা কোনও মনগড়া মন্তব্য নয়। সরকারের পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে বলেছি। পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নের জন্য কেন্দ্র ৭৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। তার মধ্যে কত টাকা রাজ্য পেয়েছে বা পায়নি, বা পেয়েও খরচ করতে পারেনি, তা অবশ্য আমার জানা নেই। কিন্তু কেন্দ্র যে পশ্চিমবঙ্গের জন্য ইতিমধ্যেই বরাদ্দ করেছে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই।”
মহাকরণে অর্থমন্ত্রী। - নিজস্ব চিত্র
সমস্যাটা তা হলে কোথায়?
কেন্দ্রীয় সরকারের শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের পিছিয়ে পড়া এলাকার উন্নয়নে বিশেষ যোজনা অনুমোদন করা হয়েছে। কিন্তু তার প্রধান শর্ত হল, রাজ্যকে সুনির্দিষ্ট প্রকল্পের প্রস্তাব দিতে হবে। সড়ক, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, গ্রামোন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রকল্প প্রস্তাব করা যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের স্পষ্ট নির্দেশ, সেই প্রস্তাব পাওয়ার পর যত শীঘ্র সম্ভব তা বিবেচনা করে কেন্দ্রকে প্রকল্পের জন্য রাজ্যকে অর্থ দেবে।
অমিতবাবু এ দিন জানান, বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট যোজনা কমিশনের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। কমিশন সেই রিপোর্ট দেখে সন্তুষ্ট হলে তা পাঠিয়ে দেবে কেন্দ্রীয় অর্থ দফতরের কাছে। তার পর অর্থ মঞ্জুর করবে কেন্দ্র। এখনও পর্যন্ত এই প্রকল্পের কোনও অর্থ হাতে আসেনি বলে সাংবাদিক বৈঠকে বারবার দাবি করেন তিনি। একই সঙ্গে তাঁর দাবি, বেহাল আর্থিক পরিস্থিতি সত্ত্বেও কোনও কেন্দ্রীয় প্রকল্পে রাজ্যের দেয় অর্থ বকেয়া পড়ে নেই। কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের ক্ষেত্রে কেন্দ্র এই শর্তে টাকা দেয় যে, রাজ্যকে ‘ম্যাচিং গ্রান্ট’ দিতে হবে। অমিতবাবুর কথায়, “অভাব সত্ত্বেও সেই টাকা আমরা দিয়ে দিয়েছি।”
আর্থিক ভাবে বেহাল রাজ্যকে সাহায্য করা নিয়ে সরকার গড়ার প্রথম দিন থেকে কেন্দ্রের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের টানাপোড়েন অব্যাহত। বিষয়টি নিয়ে একাধিক বার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়, এমনকী খোদ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন তিনি। কিন্তু মমতার ক্ষোভ, বহু আশ্বাস সত্ত্বেও কার্যক্ষেত্রে মোটেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে না কেন্দ্র। এ নিয়ে অতীতে প্রকাশ্যে উষ্মাও প্রকাশ করেছেন তিনি।
তৃণমূলের সঙ্গে সাম্প্রতিক টানাপোড়েনের পরে সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর নির্দেশে রাজ্য সরকারের সমালোচনার পথ থেকে সরে এসেছে কংগ্রেস। সনিয়ার স্পষ্ট নির্দেশ, মমতার সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করা যাবে না। মূলত আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিকে তাকিয়েই এই সিদ্ধান্ত বলে কংগ্রেসের একাংশের মত। কিন্তু কেন্দ্রের আর্থিক সাহায্য নিয়ে ফের মাথাচাড়া দেওয়া বিতর্ক দুই শরিকের ‘স্পর্শকাতর’ সম্পর্কের নিরিখে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। সিঙ্ঘভি রবিবার বলেছিলেন, “রাজ্যের অসুবিধার দিকে কেন্দ্রের নজর নেই, এ কথা ঠিক নয়।” এ দিন সেই দাবি উড়িয়ে কেন্দ্রকে কার্যত কাঠগড়ায় তুলেছেন অমিতবাবু।
বাম সরকারের ‘চাপিয়ে যাওয়া’ দেনার বোঝা নিয়ে মমতার ক্ষোভ এ দিন ফের প্রতিফলিত হয়েছে তাঁর অর্থমন্ত্রীর কথায়। তিনি বলেন, আগের সরকারের রেখে যাওয়া ঋণের পরিমাণ ২ লক্ষ ৩ হাজার কোটি টাকা। তার সুদ বাবদ প্রতি বছর ১৫ হাজার ৯৩ কোটি টাকা এবং আসল বাবদ ৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা মেটাতে হচ্ছে। সেই টাকা কেন্দ্র সরাসরি কেটে নিচ্ছে। এই ২২ হাজার কোটি টাকা থাকলে বেশ কয়েকটি স্কুল, হাসপাতাল তৈরি করা যেত। উন্নয়নের কাজেও গতি আনা যেত বলে অমিতবাবুর দাবি। এই সুদের টাকা কাটাটা তিন বছর স্থগিত রাখার জন্য কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানিয়েছে রাজ্য। কিন্তু সে ব্যাপারে এখনও ইতিবাচক সাড়া মেলেনি বলেই অর্থ দফতর সূত্রে খবর।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.