জমি-জটের গেরোয় জেলার রঘুনাথপুরে ইতিমধ্যেই আটকে রয়েছে একাধিক বড় শিল্প-প্রকল্প। এরই মধ্যে পুরুলিয়ার পক্ষে ভাল খবর, আনাড়ায় রেলের কামরার মধ্যবর্তী পুনর্বাসন কারখানার নির্মাণকাজ দ্রুত কাজ শুরু হচ্ছে। সোমবার আদ্রা ডিভিশনের বার্ষিক পরিদর্শনে এসে এ কথা জানান দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার এ কে বর্মা।
আদ্রায় এনটিপিসি-র সঙ্গে রেলের যৌথ উদ্যোগে প্রস্তাবিত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জল পাওয়া নিয়ে যে সমস্যা ছিল, তা-ও মিটে গিয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। ডিভিসি-র পাঞ্চেত জলাধার থেকে সেখানে জল দেওয়ার কথা। বর্মা বলেন, “সম্প্রতি রেলবোর্ডের আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আদ্রার বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য জল-সমস্যা মিটেছে। পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র পেলেই কাজ শুরু হবে।” বস্তুত, আদ্রায় প্রায় ছ’হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে ১৩২০ মেগাওয়াটের এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বাস্তবায়িত হলে এলাকার অর্থনীতির চেহারাই বদলে যাবে যাবে মনে করছেন রেল-কর্তৃপক্ষ। রেলের বর্তমান আর্থিক সঙ্কট প্রকল্পের ক্ষেত্রে অন্তরায় হবে না বলেও দাবি জেনারেল ম্যানেজারের। তাঁর মন্তব্য, “পশ্চিমবঙ্গের প্রকল্পগুলির জন্য অর্থের সমস্যা হবে না।”
২০১০-’১১ আর্থিক বছরের রেলবাজেটে আদ্রায় বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং আনাড়ায় রেলের কামরার সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের ওই কারখানা (কোচ মিড-লাইফ রিহ্যাবিলিটেশন ফ্যাক্টরি) গড়ার ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী, রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১০ সালের ৩১ অক্টোবর আনাড়ায় এসে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ‘মউ’ স্বাক্ষর ও রেলের কারখানার শিলান্যাস করেন মমতা। রেল সূত্রের খবর, বর্তমানে দেশে ৫০ হাজার ট্রেনের কামরা রয়েছে। পুরনো বা দুর্ঘটনাগ্রস্ত কামরাকে আগের চেহারায় ফেরানোর লক্ষ্যে এই ধরনের কারখানার বিশেষ প্রয়োজন। বর্তমানে কেবলমাত্র ভোপালেই এমন কারখানা রয়েছে। আনাড়ারটি হবে দ্বিতীয়। প্রায় ১৮৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ১৬০ একর জমিতে এই কারখানা গড়ে তোলার কথা রেল-কর্তৃপক্ষের।
রেলের নিজস্ব জমিতেই কারখানা হবে। ফলে অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতা এ ক্ষেত্রে নেই। কারখানায় প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অনুসারী শিল্পে আরও হাজার খানেকে লোকের কাজ হবে। কিন্তু এক বছর তিন মাস আগে শিলান্যাস হওয়া কারখানার কাজ শুরু না হওয়ায় ক্ষোভ ছড়িয়েছিল এলাকায় ও রেলকর্মী সংগঠনগুলির মধ্যে। এ দিন জেনারেল ম্যানেজার যাবতীয় সংশয় দূর করেছেন। তিনি বলেন, “টেন্ডার ডাকা-সহ অন্য প্রক্রিয়া শেষ। এ বার কারখানার জমিতে গাছ ও মাটি কাটা, সীমানা প্রাচীর দেওয়া-সহ নির্মাণকাজ শুরু হবে।” রেল সূত্রের খবর, যে বেসরকারি ঠিকাদারি সংস্থা কারখানা গড়ার বরাত পেয়েছে, তাদের কর্মকর্তারা চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে আনাড়ায় এসে সরেজমিনে সব খতিয়ে দেখবেন। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে মার্চ থেকেই নির্মাণকাজ শুরু হবে। রেলকর্মী সংগঠনের নেতা সুব্রত দে-র কথায়, “আমরা অনেক দিন ধরেই কারখানার কাজ দ্রুত শুরু করার দাবি করছিলাম। এর ফলে স্থানীয় অর্থনীতিও চাঙ্গা হওয়ার পাশাপাশি এখানে রেলেরও সম্প্রসারণ ঘটবে।” |