অসুস্থ মেয়ে থেকে থেকেই কেঁদে উঠছিল। মাত্র দেড় মাস বয়স। তাকে স্বামীর কোলে দিয়ে বিছানাটা ঠিক করতে শুরু করেছিলেন মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জের মঙ্গলজন মাঠপাড়ার রেবিনা বিবি। হঠাৎ একটা শব্দ পেয়ে বাইরে বেরিয়ে দেখেন, মেয়েকে আছড়ে মাটিতে ফেলে মেরে ফেলেছেন স্বামী মুজিবর শেখ। রেবিনা বিবিই তারপরে রঘুনাথগঞ্জ থানায় স্বামীর বিরুদ্ধে মেয়েকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আন্নাপ্পা ই বলেন, “মেয়ের কান্নায় ঘুম হচ্ছে না বলে রবিবার রাতে দেড় মাসের শিশুকন্যাকে আছড়ে মেরে ফেলেছেন ওই ব্যক্তি। সোমবার সকালে মুজিবরকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। তিনি মেয়েকে মেরে ফেলার কথা স্বীকার করেছেন।” মুজিবরের বক্তব্য, “মেয়ে সারা ক্ষণ কাঁদছিল। একটা ছোট ঘরে দিনরাত ওই কান্না আর সহ্য হচ্ছিল না। রাতে ঘুমোতেও পারছিলাম না। তাই ওই দিন রাতে মেজাজটা বিগড়ে যেতেই এই কাণ্ড করে ফেলেছি।” |
থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মুজিবর শেখকে। ছবি— অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায় |
রাজমিস্ত্রি মুজিবরের বাড়ি পাতলাটোলা গ্রামে। তবে তিনি সেখানে থাকেন না। রেবিনা বিবি তাঁর দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী। স্টেশন সংলগ্ন পল্লিতে শ্বশুরবাড়ির পাশেই বাঁশের একটি ছোট ঘর তুলে স্বামী-স্ত্রী বাস করতেন। মাঝে মধ্যেই কাজের জন্য তিনি বাইরে চলে যেতেন। রবিবার তাঁর শরীর খারাপ ছিল। তাড়াতাড়ি শুতে যাবেন ঠিক করেছিলেন। রেবিনা বিবি বলেন, “দিন কয়েক থেকেই মেয়ে অসুস্থ ছিল। রবিবারই শহরের এক ডাক্তারকে দেখানো হয়। সারা ক্ষণই কাঁদছিল। ওই দিন রাতে স্বামীও তাড়াতাড়ি শুতে গিয়েছিলেন। তখন মেয়ে বিছানা ভিজিয়ে ফেলেছে দেখে আমি বিছানাটা ঠিক করছিলাম। তখনই মেয়েকে স্বামীর কোলে দিয়েছিলাম। স্বামী তাকে আছড়ে মেরে ফেলেছে।” তারপরেই মুজিবর পালান।
তাঁদের প্রতিবেশী টুনু শেখ জানান, মুজিবরদের বাড়ি থেকে কান্নাকাটির শব্দ শুনে গিয়ে দেখেন রেবিনা বিবির ছোট্ট মেয়ের শুশ্রূষা করছেন গ্রামের মেয়েরা। ওই শিশুকন্যাকে তখন গ্রামের এক হাতুড়ে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি বলেন মেয়েটিকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে। জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চার ঘণ্টা পরে মারা যায় রেবিনা বিবির কন্যা।
রেবিনা বলেন, “স্বামী ঘটনার পরেই বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। আমরাই মেয়েকে নিয়ে দৌড়োদৌড়ি করেছি।” রেবিনা বিবিই তখন স্বামীকে ফোন করে মেয়ের চিকিৎসার জন্য টাকার দরকার বলে তাঁকে জঙ্গিপুর হাসপাতালে ডেকে আনেন। সেখানেই পুলিশ মুজিবরকে গ্রেফতার করেছে। রেবিনা বলেন, “আমি চাই আমার স্বামীর যাবজ্জীবন জেলের সাজা হোক।” |