|
|
|
|
হত ‘মাওবাদী’র দেহ শনাক্ত করলেন দাদা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম |
বেলপাহাড়ির ভুলাভেদা অঞ্চলের মধুপুরের জঙ্গলে রবিবার যৌথ বাহিনীর গুলিতে নিহত ‘সন্দেহভাজন মাওবাদী’কে যুধিষ্ঠির মাহাতো বলেই শনাক্ত করলেন তাঁর পরিজনেরা। সোমবার ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের মর্গে দেহটি শনাক্ত করেন যুধিষ্ঠিরের বড়দা লক্ষ্মীরাম মাহাতো। তবে এ দিন ম্যাজিস্ট্রেটের সুরতহালের রিপোর্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে সময়মতো না পৌঁছনোয় দেহের ময়না-তদন্ত হয়নি। আজ, মঙ্গলবার ময়না-তদন্ত হবে।
এ দিন সকালেই কয়েক জন আত্মীয়-প্রতিবেশীকে নিয়ে ঝাড়গ্রামে আসেন পেশায় দিনমজুর লক্ষ্মীরামবাবু। তিনি বলেন, “অনেক দিন ধরেই ভাই বাড়িছাড়া। রবিবার রাতে পুলিশ বাড়িতে গিয়ে বলে, দেহ শনাক্ত করতে হবে। ভাই কী ভাবে ঠিক মারা গেল, তা জানি না। তবে বাড়িতে দেহ নিয়ে গিয়েই শেষকৃত্য করব।” তবে সোমবার ময়না-তদন্ত না হওয়ায় বিকেলের পরে এ দিনের মতো গ্রামেই ফিরে যান লক্ষ্মীরামবাবুরা।
পুলিশ সূত্রের বক্তব্য, প্রায় দশ-বারো বছর আগে বাড়ি ছাড়েন যুধিষ্ঠির। নব্বইয়ের দশকের শেষে যোগ দেন এমসিসি-তে (মাওয়িস্ট কমিউনিস্ট সেন্টার)। লক্ষ্মীরামবাবুর মেয়ে শকুন্তলাও কাকার পথ ধরে। পরে, এমসিসি-জনযুদ্ধ মিশে সিপিআই (মাওবাদী) গঠিত হলে রানিবাঁধ স্কোয়াডে ছিলেন যুধিষ্ঠির। আগে বাঁকুড়ার রঞ্জিত পালের স্কোয়াডে এবং পরে মাওবাদী নেতা মদন মাহাতো ও তাঁর স্ত্রী জবা-র স্কোয়াডে ছিলেন তিনি।পুলিশের দাবি, গত দশ বছরে বেলপাহাড়ি ও সীমানাবর্তী বাঁকুড়ায় নকশালপন্থীরা যে সব খুন-সন্ত্রাস-হামলা-নাশকতার ঘটনা ঘটিয়েছে, তার বেশ কয়েকটিতে যুধিষ্ঠির অভিযুক্ত। রাষ্ট্রদ্রোহ, খুন, হামলা-নাশকতার ১২টি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, কয়েক দিন ধরে ভুলাভেদার ওই এলাকার জঙ্গলে মাওবাদীদের একটি স্কোয়াড ঘোরাফেরা করছিল। মধুপুর ও লাগোয়া গ্রামগুলিতে বাসিন্দাদের কাছ থেকে খাবার-দাবারও সংগ্রহ করছিল। মধুপুরের পাশের গ্রাম আমাডুবিতে যুধিষ্ঠিরের মামার বাড়ি। রবিবার দুপুরে মধুপুর গ্রামে কয়েক জন প্রাক্তন মাওবাদীর সঙ্গেও যুধিষ্ঠিকে কথা বলতে দেখা গিয়েছিল। ওই সময়েই খবর পেয়ে জামতলগড়া ক্যাম্পের সিআরপি জওয়ানেরা মধুপুরের উদ্দেশে রওনা হন। সোমবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) গঙ্গেশ্বর সিংহ, আইজি (সিআরপিএফ) বিবেক সহায়-সহ পুলিশ ও বাহিনীর পদস্থ কর্তারা। পরে বেলপাহাড়ি থানায় বৈঠকও করেন তাঁরা। এ দিন সিআইডি ও ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির বিশেষজ্ঞরাও ঘটনাস্থলে যান। পরে ঝাড়গ্রামে মর্গে গিয়েও মৃতদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন ফরেন্সিক-বিশেষজ্ঞরা।
অন্য দিকে, রবিবার দুপুরে মাওবাদী লিঙ্কম্যান সন্দেহে নয়াগ্রামের বড়খাঁকড়ি অঞ্চলের কুঠিসাই থেকে গণেশ সরেন নামে বছর আটত্রিশের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তিনি স্থানীয় নিগুই ল্যাম্পস্ (লার্জসাইজ মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি)-এর সহ-সভাপতি। পুলিশের দাবি, তাঁর বাড়ি থেকে বেআইনি বিস্ফোরক ও বোমা তৈরির সরঞ্জামও পাওয়া গিয়েছে। সোমবার ঝাড়গ্রাম এসিজেএম আদালত গণেশবাবুর ১৪ দিনের জেল-হাজতের নির্দেশ দেয়। এ দিনই সকালে আবার লালগড়ের আমডাঙা গ্রামের লাগোয়া জঙ্গল এলাকায় পুঁতে রাখা একটি কৌটোর ভিতর থেকে চারটি জিলেটিন স্টিক ও তিনটি ডিটোনেটর উদ্ধার করে যৌথ বাহিনী। |
|
|
|
|
|