|
|
|
|
আরও শর্ত চায় সরকার |
জেল থেকে আজ ছাড়া পেতে পারেন সুশান্ত |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর ও কলকাতা |
জামিন পাওয়ার পরে আজ, মঙ্গলবার আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার থেকে ছাড়া পেতে পারেন প্রাক্তন মন্ত্রী তথা গড়বেতার সিপিএম বিধায়ক সুশান্ত ঘোষ। তবে সুপ্রিম কোর্টের শর্তের বাইরেও সরকার পক্ষ নিম্ন আদালতে আরও কিছু শর্ত আরোপের
দাবি জানিয়েছে।
গত শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট দাসেরবাঁধ কঙ্কাল-কাণ্ডে অভিযুক্ত সুশান্তবাবুর ‘শর্তাধীন’ জামিন মঞ্জুর করে। সেই নির্দেশের ‘সার্টিফায়েড’ অনুলিপি সোমবার বিকালে মেদিনীপুরের চতুর্থ অতিরিক্ত জেলা-দায়রা বিচারক অভিজিৎ সোমের এজলাসে জমা দেন সুশান্তবাবুর আইনজীবীরা। এই আদালতেই আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে বিচার-পর্ব শুরু হওয়ার কথা। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ দেখে অতিরিক্ত জেলা-দায়রা বিচারক ৪০ হাজার টাকা বন্ড জমা দেওয়ারও নির্দেশ দিয়ে দেন সুশান্তবাবুর আইনজীবীদের। এর পরেই অতিরিক্ত শর্ত আরোপের জন্য আদালতে সওয়াল করে সরকার পক্ষ। বিচারক এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত ‘রিলিজ অর্ডার’ দেননি। আজ, মঙ্গলবার ‘রিলিজ অর্ডার’ হাতে পাবেন বলে আশা করছেন সুশান্তবাবুর আইনজীবীরা। তার পর সেই ‘রিলিজ অর্ডার’ আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে পৌঁছলে মুক্তি পাবেন প্রাক্তন মন্ত্রী। |
|
মেদিনীপুর কোর্টে সুশান্ত ঘোষের আইনজীবী |
সুশান্তবাবুর সম্ভাব্য মুক্তিকে ঘিরে তাঁর দল সিপিএম তাঁর ‘পাশে থাকা’র বার্তাই দিতে চায়। আলিপুর সংশোধনাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার সময়ে তাঁকে ‘স্বাগত’ জানাতে উপস্থিত থাকবেন সিপিএমের নেতা-কর্মীরা। তবে কোন স্তরের নেতাদের সেখানে পাঠানো হবে, তা নিয়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দোটানা রয়েছে। কঙ্কাল কাণ্ড-সহ একাধিক মামলায় অভিযুক্ত সুশান্তবাবু জামিন পেলেও অভিযোগ থেকে মুক্তি পাননি। তাই এই অবস্থায় তাঁকে ‘স্বাগত’ জানানো নিয়ে ‘বাড়াবাড়ি’ হলে জনমানসে ‘ভুল বার্তা’ যায় কি না, এই ভাবনা ভাবাচ্ছে আলিমুদ্দিনকে। এই নিয়ে প্রশ্নের জবাবে বিরোধী দলনেতা এবং সুশান্তবাবুর জেলা পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে নির্বাচিত বিধায়ক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “কেউ না কেউ তো যাবেনই। উনি কি একা একা জেল থেকে বেরিয়ে আসবেন?” সূর্যবাবু কি যাবেন? সূর্যবাবু বলেন, “আমি থাকলে তেমন হলে যেতে পারি। অনেকেই ওঁকে দেখতে চান। আবার অনেকে চান না! যাঁরা চান না, তাঁরাই অগস্ট মাস থেকে ওঁকে জেলে আটকে রেখেছেন!”
রাজ্য সম্মেলনের প্রস্তুতি হিসাবে আলিমুদ্দিনে আজ, মঙ্গলবার বিকাল থেকে সিপিএমের দু’দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠক শুরু হচ্ছে। সুশান্তবাবু বিকালে আলিপুর সংশোধনাগার থেকে ছাড়া পেলে বৈঠক থেকে বেরিয়ে রাজ্য কমিটির কোন কোন নেতা শেষ পর্যন্ত তাঁকে ‘স্বাগত’ জানাতে যান, তা-ই দেখার। বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবু নিজে বা বিমান বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মতো পলিটব্যুরো সদস্যেরা কেন কারাবন্দি সুশান্তবাবুকে দেখতে যাননি, তা নিয়ে দলের একাধিক জেলা সম্মেলনে প্রশ্ন উঠেছে। ওই অংশের বক্তব্য, পশ্চিম মেদিনীপুরে দলের ‘দুর্গ’ রক্ষা করতে গিয়েই সুশান্তবাবু মামলায় ‘ফেঁসে’ গিয়েছেন। তা হলে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব কেন তাঁর প্রতি ‘সহমর্মিতা’ জানাতে গেলেন না? সূর্যবাবু অবশ্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তিন বার তিনি সুশান্তবাবুর সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেছিলেন। সিআইডি জেরা করার সময় এবং হাসপাতালে সুশান্তবাবু চিকিৎসাধীন থাকার সময় দু’বার তাঁকে (বিরোধী দলনেতাকে কিছু সরকারি প্রোটোকল মানতে হয়) দেখা করতে দেওয়া হয়নি বলে সূর্যবাবুর দাবি। আর এক বার আইনজীবীদের সঙ্গেই সাক্ষাতের সময় ঠিক করেও তিনি তা রাখতে পারেননি। ঘনিষ্ঠ মহলে সূর্যবাবুর বক্তব্য, “আমি চেষ্টা করেছি। আমি গেলেই কি ওঁর সাজা কমে যেত?”
মেদিনীপুর আদালতের সরকারি আইনজীবী রাজকুমার দাস এ দিন বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই আছে, নিম্ন আদালত আরও শর্ত আরোপ করতে পারে।” অতিরিক্ত জেলা-দায়রা বিচারকের এজলাসে সরকারি আইনজীবী তাঁর আবেদনে প্রধানত অতিরিক্ত তিনটি শর্ত আরোপের দাবি জানান। সেই শর্তগুলি হল: এক, অভিযুক্তকে তাঁর ফোন নম্বর এবং কোথায় থাকবেন, তা আদালতে জানাতে হবে। দুই, তিনি কাউকে যাতে ‘ভয়’ দেখাতে বা ‘প্রভাবিত’ করতে না-পারেন, সেই নির্দেশ দেওয়া হোক। তিন, গড়বেতায় কখন ঢুকবেন, কখন বেরোবেন, কোন রাস্তা ধরে যাতায়াত করবেন, তা-ও আদালতে জানাতে হবে। সুশান্তবাবুর আইনজীবী প্রদীপ মুখোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ ঘোষরা অবশ্য দাবি করেন, “সুপ্রিম কোর্টের শর্তই বহাল রাখা হোক।” সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ বিধায়কের জামিন মঞ্জুরের সময়েই শর্ত দিয়েছিল, সুশান্তবাবু তাঁর নির্বাচনী এলাকা (গড়বেতা) ছাড়া পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অন্যত্র যেতে পারবেন না। যে এলাকায় তিনি থাকবেন, সেখানকার স্থানীয় থানায় প্রতি মাসের শেষ রবিবার দুপুর ১১টা থেকে ১টার মধ্যে তাঁকে হাজিরা দিতে হবে। তা ছাড়া, সেখান থেকে অন্যত্র কোথাও (গড়বেতা বাদে) যেতে হলেও পুলিশকে আগাম জানাতে হবে। |
|
|
|
|
|