ভারতীয় বোর্ড এবং সহারা যুযুধান দু’পক্ষই সোমবার অনড় মনোভাব থেকে সরে এসে বরফ গলার ইঙ্গিত দিয়েছে। সহারা প্রধান সুব্রত রায় এবং ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান এন শ্রীনিবাসন দু’জনেই টিভি চ্যানেলে উপস্থিত হয়ে এ দিন সুর অনেক নরম করে বলেছেন, জট ছাড়াতে তাঁরা আগ্রহী।
যা দেখতে দেখতে পুণে ওয়ারিয়র্সের অনেক ক্রিকেটারেরও মনে হয়েছে, কিছু একটা সমঝোতা তৈরি হয়ে আইপিএলে তাঁদের টিম মাঠে নামলেও নামতে পারে। কী দেওয়া-নেওয়ার মাধ্যমে সমঝোতার রাস্তা খোলা যেতে পারে তা এখনও কারও কাছে পরিষ্কার নয়। নিলাম হয়ে যাওয়ার পর পুণে ওয়ারিয়র্সের হাতে কোন তারকা ক্রিকেটারকে তুলে দেবে বোর্ড? অসুস্থ যুবরাজের বদলি প্লেয়ার হিসেবে এখন আর কাকে দেওয়া হবে? পাঁচ বিদেশি খেলানোর অনুমতি দেওয়া হবে? এখনও সে সব প্রশ্নের উত্তর অজানা। তবু দু’পক্ষের দুই শীর্ষ কর্তার বক্তব্য শুনে সমঝোতার একটা হাওয়া যে তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
এ দিন সমঝোতার উদ্যোগ প্রথম নেন কিন্তু শ্রীনিবাসন। একটি টিভি চ্যানেলকে তিনি বলেন, “সহারার সঙ্গে আমাদের বহু বছরের সম্পর্ক। ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য ওরা যা করেছে সেটাকে অবশ্যই আমরা সম্মান করি। আমাদের সম্পর্কটাও যথেষ্ট মজবুত এবং এত সহজে সেটা ভেঙে পড়তে পারে না।”
সন্ধ্যার দিকে সুব্রত রায় প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বলেন, তাঁর কাছে তিনটে ব্যাপার এখন মুখ্য। এক) যা-ই ঘটুক তাঁদের টিমের প্লেয়াররা যেন খেলার সুযোগ পায়।
দুই) পুণের লোক যাতে তাঁদের টিমের খেলা দেখার সুযোগ পায়। তিন) যুবরাজ সিংহ যেন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে মাঠে ফিরতে পারে।
সুব্রত রায় এত দূরও বলেন যে, টিম সংক্রান্ত ব্যাপারে সমস্ত সিদ্ধান্ত নেবেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। যাঁকে এ বার ক্যাপ্টেন কাম মেন্টর করেছিল পুণে ওয়ারিয়র্স। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সৌরভ খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। সৌরভ রাতে ফোনে আনন্দবাজারকে বললেন, “টিম কী হবে না হবে সেই সিদ্ধান্তটা পরে। আগে তো কথাবার্তা হয়ে ব্যাপারটা মিটুক।”
বিদেশি প্লেয়ার নিয়ে চিন্তার কিছু দেখছেন না সৌরভ। নিলামে যোগ না দেওয়ায় ভারতীয় ক্রিকেটারদের বিভাগে দুর্বল হয়ে যেতে পারে তাঁর দল এটা একটা চিন্তার কারণ। পুণে ওয়ারিয়র্স ক্যাপ্টেন সারা দিন টিভি চ্যানেলে চলা দু’পক্ষের মন্তব্য লাইভ দেখেছেন। আর দেখে কোথাও তাঁরও মনে হয়েছে, বরফ গললেও গলতে পারে। এক বার বললেন, “খেলার সিদ্ধান্ত হলে যা টিম আছে তাই নিয়েই খেলব।” মনে হল সেই পুরনো ক্যাপ্টেন গাঙ্গুলি। সেই ‘জোশ’!
আইপিএল চেয়ারম্যান রাজীব শুক্ল যে এ দিন ফোন করেন সহারা প্রধানকে। শোনা যাচ্ছে বোর্ডের তরফে সমঝোতার হাত ইতিমধ্যেই বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ফোনে কথাবার্তা শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু যতক্ষণ না সহারা-প্রধান এবং বোর্ড-প্রধান সরাসরি কথা বলছেন ততক্ষণ জট পুরোপুরি ছাড়াবে না। সুব্রত রায় নানা ইতিবাচক কথাবার্তার মধ্যে এ দিনও মনে করিয়ে দিয়েছেন, যুবরাজের যে কেমোথেরাপি হচ্ছে সেটা সবাই জানত। নিলামের আগের রাত পর্যন্ত তবু কোনও নমনীয়তা দেখাতে চায়নি বোর্ড। নিলামের আগের রাতে টেলিফোন-আলাপের সুর এ দিন অনেক নরম করে ফেলেন শ্রীনিবাসন। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়, এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি কি সহারাকে সন্ধির বার্তা পাঠাচ্ছেন? বোর্ড প্রধান বলেন, “ব্যক্তিগত ভাবে জিজ্ঞেস করলে বলব, হ্যাঁ পাঠাচ্ছি।”
তবে সুব্রত রায় তাঁদের প্লেয়ারদের আইপিএল খেলার কথা বললেও ভারতীয় দলের স্পনসরশিপ নিয়ে একটাও কথা বলেননি। যা দেখে কারও কারও মনে হচ্ছে, সহারা-প্রধানের অভিমান ভাঙাতে আরও উদ্যোগ দেখাতে হবে বোর্ডকে। |