|
|
|
|
ক্যানসারজয়ী বিশ্বচ্যাম্পিয়নের কাছে প্রেরণা খুঁজবেন যুবরাজ |
গৌতম ভট্টাচার্য • কলকাতা |
এক জনের জন্ম ১৯৭১। টেক্সাসে।
অন্য জনের জন্ম ১৯৭৯। চণ্ডীগড়ে।
এক জন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন সাইক্লিস্ট।
অন্য জন নামী আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার।
এক জন তাঁর পেশার সর্বোচ্চ মুকুট পরে অবসর নিয়েছেন ২০০৫-এ।
অন্য জন পেশার সর্বোচ্চ মুকুটে পৌঁছে জীবনের বৃহত্তম ছোবলের মুখোমুখি।
ক্যানসার এই মারণ রোগ যেন কোথাও এক সরলরেখায় মিলিয়ে দিয়েছে ল্যান্স এডওয়ার্ড আর্মস্ট্রং এবং বয়সে তাঁর চেয়ে আট বছরের ছোট যুবরাজ সিংহকে। অবশ্যই দু’জনের মধ্যে পরিচয় নেই। কিন্তু ক্যানসার-জিৎ আর্মস্ট্রংয়ের সাফল্যের কাহিনি শুনেছেন যুবরাজ। আর্মস্ট্রং যেমন অণ্ডকোষের ক্যানসারের পরে ফিরে এসে ১৯৯৯ থেকে ২০০৫ টানা ত্যুঁর দ্য ফ্রাঁস জিতেছিলেন, তেমনই যুবরাজও চান ক্রিকেট মাঠে তাঁর থেমে যাওয়া জীবন ফের টাট্টু ঘোড়ার গতিতে চলুক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালে কেমোথেরাপি নেওয়ার ফাঁকে তাই তাঁর প্রথম লক্ষ্য আর্মস্ট্রংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা। মধ্যবর্তী এমন কেউ নেই যিনি সরাসরি মিলিয়ে দিতে পারেন। বন্ধুদের কাছে শুনেছেন, আর্মস্ট্রংও থাকেন আমেরিকায়। কখনও অস্টিনে, কখনও টেক্সাসে, কখনও কলোরাডোতে। নানান জায়গায় বাড়ি রয়েছে তাঁর। যুবরাজ অত্যন্ত ইচ্ছুক তাঁর সঙ্গে দেখা করতে। আমেরিকার সূত্র থেকে জানা গেল, বস্টনে চিকিৎসারত যুবরাজ জোগাড় করেছেন আর্মস্ট্রংয়ের মেল-আইডি। তাঁকে মেল করবেন। |
তোমাকে চাই |
সেরে ওঠো যুবরাজ। সারা দেশের মতো প্রার্থনা আমদাবাদেও। সোমবার। ছবি: রয়টার্স |
মধ্যযৌবনে ক্যানসার আক্রান্ত ক্রীড়াবিদ যুবরাজ প্রথম নন। ক্রিকেটার সাইমন ও’ডনেল। ফুটবলার এরিক আবিদাল। এঁরা দু’জনেই কর্কট রোগের প্রচণ্ড তেজ উপেক্ষা করে ফিরে এসেছেন মাঠে। কিন্তু যুবরাজের জীবনের সঙ্গে এই শব্দটা জড়িয়ে গিয়েছে এটা জানাজানি হওয়ার পর উপমহাদেশে যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে, অন্তত গত তিন-চার দশকে কোনও ক্রীড়াবিদের অসুস্থতা ঘিরে এই পর্যায়ের আবেগ তৈরি হয়নি। ভারতের জায়গায় জায়গায় তাঁর জন্য যজ্ঞ চলছে। হরিদ্বার থেকে আমদাবাদ, ভক্তরা বিভিন্ন মন্দিরে মানত করছেন। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে লাখ লাখ শুভেচ্ছা ভেসে আসছে যুবরাজের জন্য। আরোগ্য কামনায় টুইট করছেন লতা মঙ্গেশকর থেকে অমিতাভ বচ্চন। কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী থেকে টিম ইন্ডিয়ার সহ খেলোয়াড়রা। যুবরাজের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু সোমবার ফোনে বলছিলেন, “এই রকম প্রতিক্রিয়া গোটা পৃথিবী থেকে ভেসে আসবে, আমরা কেউ স্বপ্নেও ভাবিনি।” নয়াদিল্লি থেকে তাঁর ম্যানেজার নিশান্ত অরোরা জানাচ্ছেন, কেমোথেরাপির ফাঁকে আমেরিকায় যুবরাজ নাকি হাল্কা ট্রেনিংও শুরু করেছেন। আর্মস্ট্রংকে কি তিনি মেল করছেন? না এর মধ্যেই করেছেন? নিশান্ত বললেন, “আমাকে যুবি সাংবাদিকদের জন্য যেটুকু বলতে বলেছে, তার বাইরে আমার কিছু বলার অনুমতি নেই।”
আমেরিকায় যুবরাজের সঙ্গে গিয়েছেন তাঁর মা শবনম। ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ মোটামুটি তিনিই রাখছেন। শবনমরাও অভিভূত হয়ে গিয়েছেন যুবরাজকে ঘিরে প্রায় ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়া এই প্রতিক্রিয়ায়। এটা যদি ভাল লাগা হয়, খারাপ লাগার উপাদানও তৈরি হয়ে গিয়েছে পাশাপাশি।
কথা ছিল, অত্যন্ত সন্তর্পণে এই নিয়ে কথা বলা হবে। রোগ ধরা পড়ার পর পরিবারের বাইরে জানানো হয়েছিল একমাত্র সচিন তেন্ডুলকর, পুণে কর্তা সুব্রত রায় আর বোর্ড প্রেসিডেন্ট শ্রীনিবাসনকে। এমনকী, মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকেও জানানো হয়নি। জানানো হয়নি সহবাগদেরও। শুরুর দিকে পুরোটা জানতেন না তাঁর বাবা যোগরাজ সিংহও। বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর যুবরাজ অনেক বেশি সময় কাটান মায়ের সঙ্গে। পুরো চিকিৎসা এবং খবর কী ভাবে চেপে রাখা হবে, তা মা-ই নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন। বোর্ড প্রধানও তাঁদের বলেছিলেন, “যদি একান্তই কিছু বলতে হয়, বোর্ডের মাধ্যমে এমন ভাবে বলা হবে যাতে যুবরাজের ক্ষতি না হয়।” আনন্দবাজারে গত ২৮ নভেম্বরে যুবরাজের ক্যানসারের খবর বার হয়ে যাওয়ার পরেও বোর্ড পরামর্শ দিয়েছিল, প্রতিক্রিয়া দেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। কিন্তু যুবরাজের বিকল্প না দেওয়া নিয়ে সহারা বনাম বোর্ড যুদ্ধের পর মিডিয়ার সমুদ্রগর্জন যে পর্যায়ে গিয়েছে, তাতে প্রতিক্রিয়া না দিয়ে পরিবারের উপায় ছিল না। তাঁদের আরও সমস্যায় ফেলে দিয়েছেন যুবরাজের ফিজিও যতীন চৌধুরি। মোটামুটি ভারতে যত নিউজ চ্যানেল আছে, রবিবারের বাজারে তাদের সবাইকে সাক্ষাৎকার দিয়ে যতীন জানিয়েছেন যে, হ্যাঁ, যুবরাজের ক্যানসারই হয়েছে। |
|
ঈশ্বরের প্রতি
আমার
বিশ্বাস আছে। |
লতা মঙ্গেশকর |
|
অমিতাভ বচ্চন |
যুবরাজ, সকালে ঘুম থেকে
উঠে চিৎকার করে বলো...
“প্রতিদিন আমি সব রকম ভাবে
আরও সুস্থ হচ্ছি”!!....তুমি পারবে!! |
|
আমি মিডিয়াকে অনুরোধ করছি
যুবরাজকে নিশ্চিন্তে সুস্থ হয়ে ওঠার সুযোগ দিন।
ও দারুণ ভাবে ফিরে আসবে। |
হরভজন সিংহ |
|
|
যুবরাজের সঙ্গে যতীন কয়েক মাস আগেও সর্বত্র গিয়েছেন। জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে সঙ্গে থাকতেন। পুণে ওয়ারিয়র্স টিমে যতীনকে যুক্ত করার জন্য যুবরাজ প্রাণপণ করেছেন। তাঁকে মুম্বইয়ে সচিনের কাছেও পাঠিয়েছেন। এক কথায় ফিজিও এবং বিশ্বাসী বন্ধু। সেই লোক যে ‘প্রচারলোভী’ হয়ে এ ভাবে সংবাদমাধ্যমের সামনে সব কিছু ফাঁস করে দেবেন, কেউ ভাবতেই পারেননি। আমেরিকায় বসে শবনমরা হতবাক হয়ে গিয়েছেন, এমনিতেই এত সমস্যা-বিদীর্ণ সময়ে কাছের মানুষ কী করে এত সমস্যা তৈরি করতে পারে! পরিবার যদি তাঁকে বলত যে, হ্যাঁ, সংবাদমাধ্যমকে কিছু বল, তা হলে একটা কথা ছিল। কথা নেই বার্তা নেই, এত স্পর্শকাতর বিষয়ে তিনি এমন ভাবে খুলে-আম টিভি ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে পড়লেন যে সেটা যুবরাজ-পরিবারের কাছে বিরাট কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। টিম যুবরাজের এক সদস্য বিরক্ত ভাবে রাতে আনন্দবাজারকে বললেন, “আজকের মিডিয়া কি খবরের জন্য এতই উন্মাদ যে, ক্যানসার নিয়ে কোনও ফিজিওর ইন্টারভিউ দেখাচ্ছে! শুধু যতীনকে দোষ দিয়ে কী লাভ। দু’পক্ষেরই তো সমান লোভ।”
বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন যুবরাজের বাবা যোগরাজ সিংহও। তিনিও এমন সব মন্তব্য করছেন যাতে টিম যুবরাজের কোর সদস্যদের সায় নেই। চণ্ডীগড়ে যোগরাজ সিংহ এ দিন সাংবাদিকদের বলেছেন, “আর্মস্ট্রংকে যিনি অণ্ডকোষের ক্যানসারের জন্য চিকিৎসা করেছিলেন তিনি যুবিকে বলে দিয়েছেন, তোমাকে আমি নতুন চ্যাম্পিয়ন করে ফেরত পাঠাব। তুমি আগের চেয়েও শক্তিশালী হয়ে ফিরবে। তখন তোমার মনে হবে বুকে তোমার টিউমারটা কখনও হয়নি।” টিম যুবরাজ জানে, এটা পুরোটা সত্যি নয়। ১৯৯৬-তে ক্যানসার আক্রান্ত আর্মস্ট্রংয়ের চিকিৎসা করেছিলেন ডাক্তারদের সংগঠিত একটা দল। যোগরাজ এ দিন যাঁর কথা বলেছেন তিনি সেই টিমের এক সদস্য মাত্র। মূল চিকিৎসক নন।
যোগরাজ আরও বিতর্ক তৈরি করেছেন এই বলে যে, যুবরাজের চিকিৎসা আরও আগেই শুরু হওয়া উচিত ছিল। ছ’মাস আগেই যেখানে রোগ ধরা পড়ে, সেখানে উচিত ছিল যুবিকে আগেই আমেরিকায় নিয়ে যাওয়া। এটা অবশ্যই চিকিৎসার পদ্ধতি নিয়ে যুবরাজের মা এবং বাবার মধ্যে মতভেদ। যুবরাজের ঘনিষ্ঠদের মধ্যে কারও কারও অবশ্য মনে হচ্ছে, যোগরাজের এই কথায় যুক্তি আছে। আরও আগেই প্রতি-আক্রমণাত্মক ক্যানসার নিরোধক চিকিৎসা শুরু হওয়া উচিত ছিল যুবরাজের। কিন্তু অনেকটা সময় নষ্ট করা হয়েছে আয়ুর্বেদিক, জড়িবুটি জাতীয় সমাধান খুঁজতে গিয়ে। গুরুর পরামর্শও নেওয়া হয় চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে। মোক্ষ নামক যোগ পদ্ধতিতে ক্যানসার নিরাময় হয়, এমন বিশ্বাসও যুবরাজকে কেউ বা কারা দিয়েছিলেন। তাতেও বেশ কিছুটা সময় যায়। |
|
ক্যানসারের ছোবল
সামলে ফের ২২ গজে |
অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক ২০০৬-এ ত্বকের ক্যানসারে
আক্রান্ত হন। তবে চিকিৎসায় সাড়া দিয়ে তাড়াতাড়ি
সুস্থ হয়ে মাঠে ফেরেন। তিনি এখন ত্বকের ক্যানসার
নিয়ে সচেতনতার প্রচারে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর। |
মাইকেল ক্লার্ক |
|
সাইমন ও’ডোনেল |
’৮৭-র বিশ্বকাপ জয়ী অস্ট্রেলিয়া দলের ক্রিকেটার
এক ধরনের রক্তের ক্যানসারে আক্রান্ত হন।
ক্যানসারে সঙ্গে যুদ্ধ করে এক বছর পরে মাঠে
ফিরে ওই সময়ে একদিনের ক্রিকেটে
দ্রুততম ৫০ (১৮ বলে) করেছিলেন। |
|
দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটার ’৯১-এর
সেপ্টেম্বরে অন্ডাশয়ের ক্যানসারে আক্রান্ত হন।
এক বছরের মধ্যে দলে ফিরে নিউজিল্যান্ডের
বিরুদ্ধে প্রথম ওয়ান ডে-তেই করেন
১৪৩ বলে ১৬৯, হন ম্যান অব দ্য ম্যাচ। |
ডেভ কালাঘান |
|
|
টিম যুবরাজ অবশ্য এই মুহূর্তে প্রয়োজনের বেশি একটা কথাও বলতে চায় না। বিশেষ করে যোগরাজের মন্তব্য নিয়ে পাল্টা কথা বলতে গেলে পারিবারিক বিতর্ককেই এই মহাসঙ্কটের সময়ে আহ্বান করা হবে, সেটা তারা জানে। তাই তারা অত্যন্ত সাবধানী। এমনকী, বস্টনেই যুবরাজ চিকিৎসা চলছে কি না, সেটাও নিশ্চিত করে বলতে চায় না তারা। এক পারিবারিক বন্ধু বললেন, “বিস্তারিত তথ্য দেওয়া মানেই ভারতের যত টিভি চ্যানেল আছে, সব ওখানে গিয়ে জড়ো হবে। প্লিজ একটা কথা বুঝুন। ওর চিকিৎসাটা শান্তিতে হওয়া সবচেয়ে দরকার।”
ভারতে যুবরাজকে চিকিৎসা করা দুই ক্যানসার বিশেষজ্ঞ এ দিন নয়াদিল্লিতে তাঁর ম্যানেজারের সঙ্গে বসে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। শবনমের সম্মতিক্রমেই এই সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন। আর সেখানে থাকা চিকিৎসক নিকেশ রোহতগি ব্যাখ্যা করেন, “যুবরাজের যা হয়েছে তাকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলে একস্ট্রা গোনাডাল সেমিনোমা। অত্যন্ত বিরল ধরনের একটি টিউমার। বিশ্বে যত মানুষ ক্যানসার আক্রান্ত, তার মধ্যে শতকরা এক শতাংশেরও কমের এই রোগ হয়।” জানান, এটা সাধারণত অণ্ডকোষ থেকে শুরু হয়। কিন্তু যুবরাজের ক্ষেত্রে শুরু হয়েছে বুক থেকে। সাধারণত কমবয়সীদের এ রকম ধরনের ক্যানসার হয়। একই সঙ্গে রোহতগি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা যুবরাজ ভক্তদের আশ্বস্ত করেন এই বলে যে, “এ ধরনের ক্যানসারের পক্ষে কেমোথেরাপিই সেরা ওষুধ। ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে এটা পুরো সেরেও যায়।” যুবরাজ শিবির থেকে বলার চেষ্টা হচ্ছে, আগামী দশ সপ্তাহের মধ্যে সবুজ ঘাসে ফের তাঁর পা পড়বে।
সত্যি কি তাই? মুম্বই ক্রিকেটমহলে কেউ কেউ সোমবার বলছিলেন, ভারতীয় দলে যুবরাজকে ঘিরে আর স্বপ্ন না দেখাই ভাল। যুবরাজ বরং ফিরে আসুক স্বাভাবিক জীবনে। অনেকের মনে হচ্ছে, সফল টেস্ট ক্রিকেটার যে হতে পারেননি, তা নিয়ে একটা অশান্তি সব সময় তাড়া করে বেরিয়েছে যুবরাজকে। স্বাভাবিক জীবনে যদি প্রত্যাবর্তন ঘটাতে পারেন এই মারণ রোগকে হারিয়ে, তা হলে ক্রিকেটের বাইরে অনেক বৃহত্তর সমাজের কাছে তিনি রোলমডেল হয়ে থাকবেন।
যুবরাজ অবশ্য ক্রিকেট মাঠে প্রত্যাবর্তনকেই এখনও লক্ষ্য ধরে রয়েছেন। নইলে কেমোথেরাপির ফাঁকে (ডাক্তারের অনুমতি নিয়েই) হাল্কা ট্রেনিং শুরু করতেন না। নইলে আর্মস্ট্রংকে মেল করতেও যেতেন না। |
|
|
|
|
|