ফুল জিনিসটি স্বভাবত চিত্তাকর্ষক। সেই কারণেই কাব্যে, গানে ফুলের একাধিপত্য এখনও অব্যাহত। কিন্তু, ফুলের বিপুল সমাহারের সমীপবর্তী হওয়ার চেষ্টায় গা গুলাইয়া উঠে, এমন অভিজ্ঞতা মল্লিকহাট ফুলবাজারে যাঁহারা গিয়াছেন, তাঁহাদেরই হইয়াছে। বাজারটি এশিয়ার বৃহত্তম ফুলের বাজার। সম্ভবত, কুৎসিততমও। দিনে প্রায় তিন হাজার ফুল-চাষি নিজেদের পণ্য লইয়া এই বাজারে আসেন। বাজারটি নোংরা, আবর্জনাময়, বর্ষায় প্রায় অগম্য। বেশ কয়েক বার অগ্নিকাণ্ডও ঘটিয়াছে এই বাজারে। পূর্বতন রাজ্য সরকার কেন্দ্রের নিকট এই বাজারটির আধুনিকীকরণের জন্য অর্থের আবেদন করিয়াছিল। সেই অর্থ মঞ্জুর হইয়া মহাকরণে আসিয়াছিল, এবং ফেরত চলিয়া গিয়াছিল। বর্তমান সরকার সেই টাকা ফেরত আনিয়া বাজারের সংস্কারের উদ্যোগ করিতেছে। সেই সংস্কার আদৌ হইবে কি না, ভবিষ্যৎই বলিবে। কিন্তু, মল্লিকঘাটের বাজারটিই একমাত্র নহে, বস্তুত, শহর কলিকাতার প্রায় সব বাজার একই রকম কুৎসিত, পূতিগন্ধময়, আবর্জনাপূর্ণ। গত এক শত বৎসরে শহর হিসাবে কলিকাতা যদি পঞ্চাশ বৎসরও অগ্রসর হইয়া থাকে, তাহার বাজারগুলি এক বৎসরও আগায় নাই। এই বাজারগুলি সংস্কার করা কত প্রয়োজন, তাহা বোধ হয় আলাদা করিয়া বলিবার প্রয়োজন হয় না।
কলিকাতার, এবং এই শহরের প্রশাসক তথা নেতারা সম্ভবত ভাবেন, বাজার মাত্রেই এই রকম হয়। মাছের বাজারে মাটিতে জল পড়িয়া থাকিবে না, তাহা আবার হয় নাকি? অতি অবশ্যই হয়। বস্তুত, সব সভ্য দেশেই হয়। এমনকী জ্যান্ত মাছও জল না ছড়াইয়াই রাখা সম্ভব কাচের অ্যাকোয়ারিয়ামে। ব্যবস্থাটি কলিকাতার একেবারে অচেনা নহে। এখন যে কোনও শপিং মলের খাদ্যপণ্যের বিপণিতে এই ভাবেই পণ্য রাখা হইয়া থাকে। কিন্তু, শপিং মলে যে ব্যবস্থা চলে, তাহা যে মানিকতলা বাজারেও সমান ভাবে প্রযোজ্য, এই কথাটি মানিতে বোধ হয় সমস্যা হয়। কিন্তু, শহরটিকে প্রকৃত ‘শহর’ করিতে হইলে বাজার সংস্কার না করিয়া গত্যন্তর নাই। সংস্কারের অনেক ধাপ। প্রথমত, বর্জ্য ফেলিবার আধুনিক ব্যবস্থা প্রয়োজন। বাজারের মাঝখানে বর্জ্যের স্তূপ জমিতে দেওয়ার কোনও প্রশ্নই নাই। পসরা লইয়া বসিবার ‘স্টল’ তৈরি করিতে হইবে, ক্রেতার চলাচলের জন্য যথেষ্ট এবং নির্দিষ্ট রাস্তা রাখিতে হইবে। অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা রাখিতে হইবে। বাজারের মধ্যে যাহাতে যথেষ্ট আলো-হাওয়ার ব্যবস্থা থাকে, তাহা দেখিতে হইবে। কলিকাতার অধিকাংশ বাজারেরই মালিকানা লইয়া বিস্তর প্রশ্ন আছে। তাহার নিষ্পত্তি প্রয়োজন। পুরসভা বা অন্য কোনও সরকারি দফতর বাজার চালাইবে না। তাহা বেসরকারি হাতে ছাড়িয়া দেওয়াই বিধেয়। পুরসভার কাজ হইবে নজর রাখা কেহ নিয়ম পালনে ব্যর্থ হইলে কঠোর ব্যবস্থা করা। বাজারে পসরা লইয়া বসিতে হইলে একটি নির্দিষ্ট অর্থমূল্য দিতে হইবে। তাহাতে বিক্রেতাদের সমস্যা নাই, সেই মূল্য শেষ পর্যন্ত গ্রাহকের ওপর চালান করা যাইবে। তবে এ সকলই খুঁটিনাটি। সংস্কারের লক্ষ্যটি স্বীকৃত হইলে পন্থা স্থির করা কঠিন নহে। |