সম্পাদকীয় ১...
হস্তক্ষেপ নয় কেন
সিরিয়ায় জমানা বদলের প্রস্তাব রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়া ও চিনের ভোটে খারিজ হইয়াছে। গত বছর মার্চ হইতে টিউনিসিয়া ও মিশরের আরব বসন্তের বজ্রনির্ঘোষ পশ্চিম এশিয়ার অন্যান্য দেশের মতো সিরিয়াতেও প্রেসিডেন্ট বাশার আসাদের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে যে ব্যাপক ও জনপ্রিয় প্রতিবাদের সূচনা করে, তাহা দমন করিতে সেনাবাহিনী এ যাবৎ সাত হাজার অসামরিক নাগরিককে হত্যা করিয়াছে। সেই প্রেক্ষিতেই জমানা বদলের প্রস্তাব। কেননা আসাদ কোনও রকম গণতান্ত্রিক সংস্কারের পথই অবলম্বন করিতে চাহেন নাই। সামরিক বুটের তলায় নির্মম ভাবে গণ-আন্দোলনকে বিধ্বস্ত করিয়া চলিয়াছেন। গণতন্ত্রীরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করিলেও তাহা হিংসার দ্বারা নৃশংস ভাবে দলিত। এ অবস্থায় জমানা বদল ছাড়া সে-দেশে নিরীহ মানুষদের রক্তপাত ও গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনা এড়ানো যাইবে কী রূপে? বস্তুত, কোনও একটি দেশে যদি এই মুহূর্তে রাষ্ট্রপুঞ্জের হস্তক্ষেপ জরুরি হইয়া থাকে, তবে সেটি সিরিয়া। কিন্তু রাশিয়া ও চিনের ‘ভেটো’য় সেই হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা বানচাল হইয়া গেল। ইহা দুর্ভাগ্যজনক।
শ্রীলঙ্কায় তামিলদের গণহত্যা রোধে রাষ্ট্রপুঞ্জের হস্তক্ষেপের সম্ভাবনাও এই দুই রাষ্ট্রের বাধায় বিনষ্ট হয়। মুখে প্রগতির বুলি আওড়ানো উভয় রাষ্ট্রই বর্তমানে দেশে দেশে প্রতিক্রিয়া ও স্বৈরাচারের শক্তিকে পৃষ্ঠপোষকতা দিতেছে। সিরিয়া সুন্নিপ্রধান (জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ) দেশ, কিন্তু সেখানে শিয়া শাসকদের বংশানুক্রমিক আধিপত্য। প্রতিবাদীরা অধিকাংশই সুন্নি, আর তাহাদের দমনকারীরা শিয়া। স্বভাবতই সিরিয়ার গণতান্ত্রিক সংস্কারের আন্দোলনে শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্বের উপাদানগুলি উপেক্ষণীয় নয়। শিয়া শাসকদের সেনাবাহিনীতেও শিয়াদেরই প্রাধান্য। তাই সুন্নি ভাইবোনদের উপর সামরিক নিপীড়ন সহ্য করিতে না পারিয়া বাহিনীর সুন্নি অফিসার ও জওয়ানরা অস্ত্রশস্ত্র লইয়া প্রতিবাদীদের সহিত যোগ দিয়াছেন। আর তাহাতেই এত দিনের অহিংস ও নিরস্ত্র বিক্ষোভ সম্প্রতি কোথাও কোথাও সেনার বিরুদ্ধে পাল্টা প্রত্যাঘাতের চেহারা লইয়াছে। প্রতিদিনই কয়েক ডজন করিয়া সিরীয়র মৃত্যু হইতেছে। এখনই হয়তো ইহা সর্বাত্মক গৃহযুদ্ধে পরিণত হইবে না। কারণ আসাদের সামরিক বাহিনী অত্যন্ত শক্তিশালী, তাহার অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রের সম্ভারও বিপুল। নিরস্ত্র জনতার মোকাবিলায় প্রথমাবধি এই বাহিনী ট্যাংক, সাঁজোয়া গাড়ি, ভারী কামান, মর্টার প্রভৃতি ব্যবহার করিতেছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নিরা ক্ষমতায় আসিলে শিয়া, কুর্দ ও খ্রিস্টান সহ বিভিন্ন সংখ্যালঘুদের উপর প্রতিশোধ লইতে পারে, এই শঙ্কাও শাসক গোষ্ঠীকে দমননীতি অবলম্বনে প্ররোচিত করিয়া থাকিতে পারে।
সিরিয়া রাশিয়ার দীর্ঘ দিনের মিত্র। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের জমানা হইতেই পশ্চিম এশিয়ায় রুশ স্বার্থ রক্ষায় সিরিয়ার তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট হাফেজ আসাদ সক্রিয় থাকিয়াছেন। রাশিয়ার একমাত্র ভূমধ্যসাগরীয় নৌ-ঘাঁটি সিরিয়ার উপকূলেই। সিরীয় সেনাবাহিনীও প্রথমাবধি রুশ অস্ত্রসম্ভারে সজ্জিত। কিন্তু চিনের ভেটোর কারণ রহস্যময়। হয়তো সিরিয়ার তেল-সম্পদ চিনা কমিউনিস্টদের লোভের বস্তু। কিন্তু মানবিকতার বিচারে এই সংকীর্ণ স্বার্থ উপেক্ষা করিয়া সিরিয়ার দমনতন্ত্রকে কোণঠাসা করার যে-সুযোগ রাষ্ট্রপুঞ্জ করিয়া দিয়াছিল, তাহা হেলায় হারানো অনুচিত হইয়াছে। উল্লেখ্য, আরব লিগের পর্যবেক্ষকরাও সিরিয়ার গৃহযুদ্ধপ্রতিম পরিস্থিতি লাঘব করিতে পারেন নাই। নিরাপত্তা পরিষদে আরব লিগ যে প্রস্তাব জমা দেয়, তাহাতেও সিরিয়ায় বাশার আসাদের স্বৈরাচারকে ক্ষমতাচ্যুত করার কথা ছিল। সে প্রস্তাব খারিজ হইয়া যাওয়ায় এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটেন, জার্মানি ও ফ্রান্সকে লইয়া একটি বিকল্প আন্তর্জাতিক জোট গড়িতে সচেষ্ট, যাহা ভবিষ্যতে লিবিয়ার মতো সিরিয়াতেও ন্যাটোকে মোতায়েন করিতে পারে। কিন্তু সিরিয়ার সৈন্যবাহিনী গদ্দাফির বাহিনীর মতো দুর্বল, নড়বড়ে ও বিভক্ত নয়। তাই যে কোনও সামরিক হস্তক্ষেপ সে দেশে দীর্ঘস্থায়ী প্রতিরোধের সম্মুখীন হইতে বাধ্য। সিরিয়ার জনসাধারণের সামনে অতএব এখনও অনেক অমাবস্যার রাত্রি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.