১৯০৮ সালে ইংরেজ আমলে রচিত ‘ছোটনাগপুর টেনেন্সি (সিএনটি) অ্যাক্ট’ কার্যকর করার দাবিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ঝাড়খণ্ডের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। পাশাপাশি ওই আইন কার্যকর করার প্রশ্নে এই মুহূর্তে দুই ভিন্ন মেরুতে দাঁড়িয়ে রাজ্যের জোট সরকারের প্রধান দুই শরিক বিজেপি এবং ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম)। সরকারের অন্যতম দুই শরিকের মতবিরোধের জেরে প্রশাসনিক জটিলতা সৃষ্টিরও আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক মহল। আজ সকাল থেকে সিএনটি অ্যাক্টের পক্ষে-বিপক্ষে দুই শিবিরের মিছিল-ধর্না-সমাবেশে উত্তাল হয়ে ওঠে উত্তর ছোটনাগপুরের ধানবাদ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এ দিন শহরের রণধীর বর্মা চকে ১৪৪ ধরা জারি করা হয়েছে বলে জানান ধানবাদের মহকুমাশাসক ।
জল-জঙ্গল-জমির উপরে মূলত ভুমিপুত্র আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ লড়াইয়ের প্রেক্ষিতে ব্রিটিশ শাসনকালে ১৯০৮ সালে তৈরি হয়েছিল সিএনটি অ্যাক্ট। ওই আইনে বলা আছে, ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায় আদিবাসীদের দখলে থাকা জমির অধিকার সংশ্লিষ্ট আদিবাসী পরিবারের হাতেই থাকবে। ওই এলাকার আদিবাসী ছাড়া বহিরাগত কেউ সেই জমি কিনতেও পারবে না। কিন্তু ঘটনা হল, ওই আইনকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে দীর্ঘকাল ধরেই ছোটনাগপুর এলাকায় জমি কেনাবেচার কারবার চলছে। সিএনটি আইন উপেক্ষা করে সেখানে গড়ে উঠেছে অসংখ্য দালান কোঠা, বহুতল এবং বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংস্থা।
ছোটনাগপুরের সর্বত্র জমি কেনাবেচার ক্ষেত্রে সিএনটি আইন কঠোর ভাবে বলবৎ করতে চায় জেএমএম। এর জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছিল রাজ্য প্রশাসন। কিন্তু সরকারের বড় শরিক বিজেপির আপত্তিতে ওই নির্দেশ কর্যকর করা স্থগিত হয়ে যায়। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করে জেএমএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুপ্রিয় ভট্টাচার্য আজ বলেন, “সিএনটি বিধি কাযর্কর করার দাবি থেকে সরবে না জেএমএম। এ নিয়ে আপসের রাস্তা নেই।” মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ রাজ্য বিজেপি সভাপতি দীনেশানন্দবাবু বলেন, “রাজ্যের মূল লক্ষ্য উন্নয়ন। জমি ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। এই সঙ্গেই সামাজিক ঐক্য রক্ষাও সরকারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য সমাজের সমস্ত শ্রেণির স্বার্থই সরকারকে দেখতে হবে।” দীনেশানন্দের মত, আদিবাসীদের পাশাপাশি ছোটনাগপুরের বিভিন্ন এলাকায় তফসিল জাতি ও ওবিসিভুক্ত জনগোষ্ঠীর জমির অধিকার সুনিশ্চিত করা প্রয়োজন। তাই সিএনটি সংশোধনের দাবি তুলেছে বিজেপি। |