রাজনৈতিক-সাংগঠনিক পর্যালোচনাতেও এ বার দলের মধ্যে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার কৌশল নিচ্ছে সিপিএম।
আগামী এপ্রিলের কোঝিকোড় পার্টি কংগ্রেসের জন্য রাজনৈতিক-সাংগঠনিক পর্যালোচনার কাজ শুরু করছে পলিটব্যুরো। ২০০৮ সালের কোয়ম্বত্তূর পার্টি কংগ্রেসের পর থেকে দল যে সব রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও কর্মসূচি নিয়েছে, তার পর্যালোচনা হবে। দলের নেতারা বলছেন, এই সময়ের মধ্যেই ইউপিএ-সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার, মায়াবতী-জয়ললিতাকে নিয়ে প্রকাশ কারাটের তৃতীয় ফ্রন্ট গঠন, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের সমস্যা ও পশ্চিমবঙ্গ-কেরলে দলের হারের মতো তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। সেখানে কার ভুল, কোথায় ভুল, সে সবের পর্যালোচনা হবে। পলিটব্যুরো সূত্রের খবর, দলের সঙ্কটের মধ্যে কারও উপরেই আলাদা করে দোষ চাপানো হবে না। কারণ পশ্চিমবঙ্গে বিপর্যয়ের জন্য শুধুমাত্র আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের দিকে আঙুল তোলা হলে তাঁরা পাল্টা জাতীয় রাজনীতিতে কারাটের ব্যর্থতার অভিযোগ আনতে পারেন। কাজেই সকলের কিছু কিছু ভুল ছিল বলে স্বীকার করে নেওয়া হবে।
লোকসভা নির্বাচনে বামেদের ভরাডুবির পরেও এই কৌশলই নিয়েছিলেন প্রকাশ কারাট। এক দিকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে পশ্চিমবঙ্গে বিপর্যয়ের প্রশাসনিক, সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক ভুলের দিকে আঙুল তোলা হয়েছিল। আবার আলিমুদ্দিনের নেতাদের দাবি ছিল, সমর্থন প্রত্যাহারের ফলে কংগ্রেস ও তৃণমূলের জোট হয়ে যাওয়াতেই পশ্চিমবঙ্গে তাঁদের সমস্যায় পড়তে হয়েছে। দু’দিক থেকে নেতৃত্ব বদলের দাবিও ওঠে। বিজয়ওয়াড়ার বর্ধিত কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে কারাট তাই ‘কিছু ভুল আপনাদের, কিছু ভুল আমার’ সূত্রে রফা করেন। কোনও দিকেই তাই পরে নেতৃত্ব বদলের দাবি ওঠেনি।
সাংগঠনিক দিকে আবার দলের মধ্যে ‘উপদলীয় ঝোঁক’ এখন সিপিএম নেতৃত্বের সব থেকে বড় মাথাব্যথার কারণ। দলের নেতাদের মতে, দুর্বল পার্টি কেন্দ্রের সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন রাজ্যগুলি নিজেদের মতো কাজ করছে। পলিটব্যুরোর এক সদস্য বলেন, “মজার কথা হল, এই উপদলীয় ঝোঁক সব থেকে বেশি কেরলে। কেরল রাজ্য নেতৃত্ব প্রায়ই এ কে গোপালন ভবনকে অবজ্ঞা করে। সেখানে অনেক জেলা নেতৃত্বই রাজ্য নেতৃত্বকে পাত্তা না দিয়ে নিজের মতো সিদ্ধান্ত নেয়। সংগঠনের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বই এর প্রধান কারণ।” সমস্যা হল, কেরল কারাটেরই রাজ্য। সেখানে তাঁর অনুগামী পিনারাই বিজয়নই রাজ্য সম্পাদক। কাজেই এ নিয়েও বেশি কথা বলতে গেলে সমস্যা আছে।
তাই সকলেরই কিছু কিছু ভুল স্বীকার করে নিয়ে দলে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার পথেই হাঁটছে সিপিএম। |