সমালোচনার মুখে চিনও
সব ছেড়ে ভারতীয় পথেই সমাজতন্ত্র গড়বে সিপিএম
রাশিয়া ও চিনের ছাতার তলা থেকে বেরিয়ে এবং লাতিন আমেরিকাকে পুরোপুরি অনুসরণ না করে এই প্রথম পুরোপুরি ভারতীয় পথে সমাজতন্ত্রের পথে এগোনোর কথা বলল সিপিএম।
সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতন্ত্রের বিপর্যয়ের পরে মতাদর্শগত দলিল তৈরি করে ‘পার্টি কর্মসূচি’ সংশোধন করেছিল সিপিএম। তার পরে দলের সামনে সমাজতন্ত্রের আদর্শ হিসেবে ছিল চিন। কিন্তু তিন দশকের আর্থিক সংস্কার কর্মসূচির ফলে চিনের আর্থিক উন্নতি হলেও যে ভাবে অসাম্য ও দুর্নীতির মতো নেতিবাচক ঘটনা বেড়েছে, মতাদর্শগত দলিলে তার সমালোচনা করে বেজিঙের পথও এ বার ত্যাগ করল সিপিএম। পুঁজিবাদের মধ্যে থেকেও লাতিন আমেরিকার দেশগুলি যে ‘বিকল্প নীতি’ নিয়েছে, তাকে শুধু মাত্র অনুপ্রেরণা হিসেবেই সামনে রাখছে দল। আজ মতাদর্শগত দলিলের আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করে সিপিএম নেতৃত্ব স্পষ্ট করে দিলেন যে, লাতিন আমেরিকার দেশগুলির অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিলেও ভারতীয় বাস্তবতা মেনেই এ দেশে সমাজতন্ত্রে উত্তরণের পথ নেবে দল।
সেই পথ কী, তার অবশ্য কোনও স্পষ্ট দিশানির্দেশ এই দলিলে নেই। কিন্তু সিপিএম নেতৃত্বের যুক্তি, ভারতীয় পথে সমাজতন্ত্রে উত্তরণের পথ খোঁজার যে কথা বলা হচ্ছে, তা-ও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যেই সমাজতন্ত্রের বিকাশের পথে এগোনোর কাজকে কীভাবে দ্রুত রূপ দেওয়া যায়, সেটাই আশু লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিচ্ছে দল। আর সে জন্য ২০০০ সালে সংশোধিত পার্টি কর্মসূচিকেই নতুন করে তুলে ধরা হচ্ছে। ভারতের পরিস্থিতি মেনে কোন পথে সিপিএম এ দেশে সমাজতন্ত্রে উত্তরণের চেষ্টা করবে, তা বোঝাতে এক যুগ আগের ওই ‘সংশোধিত পার্টি কমর্সূচি’-রই পুনরাবৃত্তি করছেন সিপিএম নেতৃত্ব।
দিশার খোঁজে
দলের মতাদর্শগত দলিলের খসড়া প্রকাশ অনুষ্ঠানে সিপিএম নেতা
প্রকাশ কারাট ও সীতারাম ইয়েচুরি। সোমবার পিটিআইয়ের ছবি।
সিপিএম নেতৃত্ব মনে করছেন, ‘ভারতীয়’ পথে এগোনোর কথার পাশাপাশি এই দলিলের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এই প্রথম চিনের সমালোচনা করল দল। মতাদর্শগত দলিলে চিনের উন্নতি মেনে নিয়েও তার অসাম্য, দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে বলা হয়েছে, ‘এই সব পরস্পর বিরোধিতা চিন কী ভাবে সামলায়, তার উপরেই তার ভবিষ্যতের রূপরেখা নির্ভর করছে।’ কেন তাঁরা কিউবা, ভেনেজুয়েলার মতো লাতিন আমেরিকার দেশগুলিকে পুরোপুরি অনুসরণ করার কথা বলছেন না, তা বোঝাতে গিয়ে ইয়েচুরি বলেন, “এই দেশগুলি পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মধ্যেই বিকল্প নীতি নিচ্ছে। কিন্তু আমরা পুঁজিবাদকেই সরিয়ে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলছি।”
নতুন হলেও এই মতাদর্শগত দলিল যে নতুন কোনও দিশানির্দেশ করছে না, আজ তা স্বীকার করে নিয়েছেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি। দলিলের আনুষ্ঠানিক প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রকাশ কারাট, এস আর পিল্লাই, বৃন্দা কারাটকে পাশে নিয়ে ইয়েচুরি বলেন, “ভারতীয় বাস্তবতা মেনেই আমাদের সমাজতন্ত্রের পথে হাঁটতে হবে। এবং পরিস্থিতি বিশ্লেষন করে আমরা দেখেছি যে, আমাদের এই অবস্থানে কোনও ভুল নেই।” দলের সদস্যদের কাছে সিপিএম নেতৃত্বের বার্তা, পুঁজিবাদের যে অসুখের কথা কমিউনিস্টরা বরাবরই বলে এসেছেন, আমেরিকা-ইউরোপে একের পর এক আর্থিক মন্দায় সেই অসুখই ফুটে উঠেছে। কাজেই মার্ক্সবাদের মূলগত তত্ত্বে কোনও ভুল নেই। দলের নেতারা মনে করছেন, পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছরের বাম-দুর্গে পতন এবং জাতীয় রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়ায় দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। ‘জনগণতান্ত্রিক বিপ্লব’ সোনার পাথরবাটি কি না, সেই প্রশ্নও তুলছেন তাঁরা। এই দলিল তাঁদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে।
দলিলে সব থেকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে গণ-আন্দোলন গড়ে তোলার উপরে। পলিটব্যুরো নেতারা মানছেন, গণ-আন্দোলন গড়ে তোলার বিষয়ে খামতি রয়েছে।
পুঁজিবাদের সঙ্কট বা আর্থিক মন্দার ফলে মার্ক্সবাদী তত্ত্ব নতুন করে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। কিন্তু এ দেশে তার ফায়দা তোলা যায়নি। মতাদর্শগত দলিলেও সেই সংসদের ভিতরে-বাইরে আর্থিক উদারনীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন, শ্রমিক-কৃষক ঐক্য গড়ে তোলা, জাতপাত ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াই, জাতিসত্তার রাজনীতির মোকাবিলার পুরনো কথাই বলা হয়েছে।
এ নিয়ে দলের মধ্যে প্রশ্ন উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন নেতারাই। এক পলিটব্যুরো সদস্যের কথায়, “অনেকে ইতিমধ্যেই বলতে শুরু করেছেন যে, মতাদর্শের সাফল্যকে ঢাল করে দলীয় নেতৃত্ব নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে চাইছেন।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.