উত্তরপ্রদেশে দলের মুখ তিনিই, বোঝালেন রাহুল
য় হোক বা পরাজয়, উত্তরপ্রদেশ ছেড়ে পালাবেন না রাহুল গাঁধী। উত্তরপ্রদেশে প্রথম দফার ভোটগ্রহণের ৪৮ ঘণ্টা আগে আজ তিনি বললেন, “প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য মোহাচ্ছন্ন নই। একটাই লক্ষ্য, তা হল উত্তরপ্রদেশে পরিবর্তন আনা। ফলাফল যা-ই হোক উত্তরপ্রদেশ ছেড়ে যাব না।”
গতকালই রায়বরেলীতে সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন প্রিয়ঙ্কা বঢরা। জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী পদে বসা রাহুল গাঁধীর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নয়। আজ আবার বারাণসীতে সাংবাদিক বৈঠক করে তারই পুনরাবৃত্তি করেন রাহুল। এবং বুঝিয়ে দেন, উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের নেতা তিনিই। কংগ্রেসের মুখ তিনিই। তাঁর উপরে আস্থা রেখেই কংগ্রেসকে ভোট দিতে পারেন উত্তরপ্রদেশবাসী।
ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করা কংগ্রেস রাজনীতির দস্তুর নয়। কিন্তু সর্বজনগ্রাহ্য কোনও নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী হিসাবে তুলে ধরলে যে ভোট রাজনীতির অঙ্কে অনেকটাই ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে তাও এখন বুঝতে পারছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। সে কথা বুঝেই এ বার পঞ্জাবে ভোট প্রচারে গিয়ে রাহুল জানিয়ে দেন, কংগ্রেস ভোটে জিতলে ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিংহই মুখ্যমন্ত্রী হবেন। কিন্তু উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের নেতা কে? হিন্দি বলয়ের সব থেকে বড় এই রাজ্য থেকে কেন্দ্রে কংগ্রেসের ছ’জন মন্ত্রী, ২২ জন সাংসদ। তবু রাজ্যস্তরে নেতৃত্বের সংকট অব্যহত। এই পরিস্থিতিতে আজ ‘মোক্ষম কৌশল’ নিয়েছেন রাহুল গাঁধী। কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, রাজ্যে যখন সর্বজনগ্রাহ্য কংগ্রেস নেতার অভাব, তখন নিজের ‘ছবিটাই’ ব্যবহার করতে চাইছেন রাহুল। রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী পদের দৌড়ে না থাকলেও তিনি বোঝাতে চাইছেন, রাজ্যে কংগ্রেসের নেতা যিনিই হোন না কেন, ভালো-মন্দের দায়িত্ব বরাবর তাঁরই থাকবে। এ ব্যাপারে তিনিই দলের শেষ কথা। কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার কথায়, রাহুলের এই ধরনের মন্তব্যে আরও একটি কৌশল রয়েছে। ভুলে গেলে চলবে না সনিয়া গাঁধীর জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে, প্রধানমন্ত্রী পদের দাবি ছেড়ে দেওয়ার পর। ফলে রাহুলের এই অবস্থান জনমানসে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেই আশা করা হচ্ছে।
উত্তরপ্রদেশে প্রথম দফার ভোট গ্রহণ ৮ ফেব্রুয়ারি। তার আগে রাহুলের সাংবাদিক বৈঠক করাও ছিল একটা কৌশল। কারণ, তাঁর সেই দীর্ঘ সাংবাদিক বৈঠক দিনভর বৈদ্যুতিন মাধ্যমে বারবার সম্প্রচারিত হয়েছে। কংগ্রেস তো বটেই রাজনৈতিক নেতৃত্বের মতে, সেই সাংবাদিক বৈঠকে প্রতিটি প্রশ্নের জবাবে প্রতিফলিত হয়েছে গাঁধী পরিবারের নবীন প্রজন্মের ‘দাপট’। উত্তরপ্রদেশে দীর্ঘ সফরের অভিজ্ঞতা এবং তাঁর আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে রাহুল সেখানে বলেন, “উত্তরপ্রদেশে ক্ষয়িষ্ণু কংগ্রেসকে নিজের পায়ে দাঁড় করানো ছিল চ্যালেঞ্জ। কংগ্রেস এখন নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছে।” এ কথা বলেই, দাঁড়িয়ে পড়েন রাহুল। তার পর বলেন, “কংগ্রেস ২০০ আসন পাক বা ১০০, উত্তরপ্রদেশের রাজনীতি এখন কংগ্রেসই নিয়ন্ত্রণ করবে। রাজ্য-রাজনীতির সংজ্ঞা বদলে দেবে। রাজনীতির সূচিমুখ হবে উন্নয়ন।”
তবে সনিয়া-তনয়ের এই আত্মবিশ্বাস সত্ত্বেও রাজনৈতিক শিবিরে জল্পনা এটাই যে উত্তরপ্রদেশে একার ক্ষমতায় সরকার গঠনের মতো ফল হবে না কংগ্রেসের। তাই ভোটের পর সরকার গড়তে কংগ্রেস-সমাজবাদী পার্টির জোট হবে। স্বাভাবিক ভাবেই এ ব্যাপারে আজ প্রশ্ন ওঠে। জবাবে রাহুল বলেন, “মায়াবতী ও মুলায়ম সিংহ দু’জনকেই শ্রদ্ধা করি। কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করতে চাই না। কিন্তু এঁদের কেউই উত্তরপ্রদেশের উন্নয়ন নিয়ে চিন্তা করেননি। কিন্তু কংগ্রেস উন্নয়নের প্রশ্নে কারও সঙ্গে সমঝোতা করতে চায় না। সমঝোতা হবে শুধু মানুষের সঙ্গে।” রাজনৈতিক সূত্রের মতে, উত্তরপ্রদেশে মায়াবতী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান-বিরোধী ভোট যাতে কংগ্রেসের অনুকূলেই আসে তা সুনিশ্চিত করতে সচেষ্ট রাহুল। সেই কারণেই, সপা-র সঙ্গে প্রকাশ্যে ঘনিষ্ঠতা দেখাতে নারাজ রাহুল। গত বিধানসভা ভোটে উত্তরপ্রদেশে এই কৌশলেই সাফল্য পেয়েছিলেন মায়াবতী।
পাশাপাশি রাহুল আজ বারবার বলেন, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য নয়, মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য রাজনীতি করেন তিনি। তাঁর কথায়, “দেশে বড় বড় সব নেতার একটাই লক্ষ্য। তা হল প্রধানমন্ত্রী হওয়া। কিন্তু সেই মোহ আমার নেই। আমার ভূমিকা ‘ট্রান্সমিটারের’। কিছু মানুষকে এখান থেকে সংসদে পাঠানোর। যাঁরা মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করবেন।” সাংবাদিক বৈঠকে আজ লালকৃষ্ণ আডবাণীকেও কটাক্ষ করেন রাহুল। বলেন, “আডবাণী রথযাত্রায় বেরিয়েছিলেন। অথচ তিনি মানুষের কথা শুনতে চাননি। নিজের কথা বোঝাতে চেয়েছেন। কিন্তু আমি মানুষের অভাব-অভিযোগ শোনার জন্যই সফর করি।” শুধু তা-ই নয়, আডবাণী দুর্নীতির বিরুদ্ধে যাত্রায় নেমেও বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে দুর্নীতির বিষয়গুলো এড়িয়ে গিয়েছেন বলে তাঁর অভিযোগ। রাহুল বলেন, “আডবাণীকে প্রশ্ন করুন, দুর্নীতি ঠেকাতে বিজেপি কী করেছে?”
রাহুল সম্পর্কে কোনও মন্তব্য না করলেও আজ আডবাণী বলেন, “আদালতের রায়কে নিয়ে (চিদম্বরম প্রসঙ্গে) কংগ্রেস বিজয়োল্লাসে নেমেছে। যেন টোয়েন্টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিতেছে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে।” আর বিজেপি মুখপাত্র শাহনওয়াজ হোসেন বলেন, প্রথম পর্বের ভোট শুরুর আগে রাহুল আজ হার স্বীকার করলেন। তিনি কবুল করে নিলেন, এ বারের ভোটে কংগ্রেস ক্ষমতা দখলের অবস্থায় নেই। বিজেপির আর এক সাংসদ, রাহুলের কাকিমা, মেনকা গাঁধীও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। তাঁর বক্তব্য, “আসল প্রশ্নটা তো হল, লোকে কংগ্রেসকে আর ক্ষমতায় ফেরাতে চায় কি না?”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.