অবশেষে চূড়ান্ত হতে চলেছে ভারতের ‘প্রতিযোগিতা নীতি’ (কম্পিটিশন পলিসি)। সব কিছু ঠিকঠাক চললে আগামী মার্চেই ওই নীতি তৈরির ব্যাপারে আশাবাদী কেন্দ্র। সে ক্ষেত্রে নীতি প্রণয়নের সূচনা পর্ব থেকে বাস্তবায়ন হতে সময় লাগবে প্রায় এক দশক।
প্রতিযোগিতার বাজারে যাতে সকলেই সমান সুযোগ পায় এবং ক্রেতারা সেই প্রতিযোগিতার সুফল পান, তার লক্ষ্যেই এই নীতির তৈরির ভাবনা। এ জন্য ২০০২-এই তৈরি হয় কম্পিটিশন বা প্রতিযোগিতা কমিশন। কিন্তু এই সংক্রান্ত আইনটি পাশ হয় ২০০৯-এ। তারপর খসড়া নীতি পেশ হলেও এখনও পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ নীতি তৈরি করে উঠতে পারেনি কেন্দ্র।
সোমবার ফিকি-র ‘ইন্ডিয়া কর্পোরেট অ্যান্ড ইনভেস্টর মিট’ এবং ক্যালকাটা চেম্বারের বার্ষিক সভায় যোগ দিতে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় কোম্পানি বিষয়ক মন্ত্রী বীরাপ্পা মইলি। ফিকি-র সভার ফাঁকে এ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে মইলি জানান, খসড়া প্রতিযোগিতা নীতি মন্ত্রিসভার সদস্যদের কাছে পেশ করা হয়েছে। তাঁর আশা, মার্চেই তা মন্ত্রিসভার অনুমোদন পাবে।
উল্লেখ্য, ভারতে এই আইন ও নীতি তুলনামূলক ভাবে নতুন হলেও প্রতিযোগিতার বাজারে স্বচ্ছ্বতা আনতে উন্নত দুনিয়ার অনেক দেশেই বহু আগে থেকে বিষয়টির চল রয়েছে। যেমন কানাডা ১৮৮৯-তে তাদের প্রথম প্রতিযোগিতা আইনটি চালু করে। ১৮৯০-এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শেরম্যান আইনও একই উদ্দেশ্যে তৈরি হয়েছিল।
মইলি জানান, প্রতিযোগিতার বাজারে যে কোনও ধরনের একচেটিয়া কারবারের সম্পূর্ণ বিলোপই এই নীতির মূল লক্ষ্য। তাঁর দাবি, সঠিক প্রতিযোগিতা হলে তার সুফল পাবেন ক্রেতারাই। যেমন আমেরিকায় এই নীতি চালু হওয়ার পরে পেট্রো-পণ্যের দাম প্রায় ৫০% কমে গিয়েছিল। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডেও নীতিটি সাফল্য পেয়েছে বলে তাঁর দাবি।
ভারতেও মূল্যবৃদ্ধির হার রোখার ক্ষেত্রে এই নীতি যথেষ্টই কার্যকর হবে বলে মইলির দাবি। কারণ তাঁর বক্তব্য, এই নীতি চালু হলে বণ্টন ব্যবস্থা জোরদার হবে। ফলে খাদ্যপণ্যের মূলবৃদ্ধিতে লাগাম পরানো সহজ হবে। মইলির কথায়, “১৯৯১-এ উদার নীতি চালু হওয়ার পরে এটাই হবে আর্থিক ক্ষেত্রে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সংস্কার।”
এই নীতি তৈরির সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই প্রতিযোগিতা আইন (কম্পিটিশন ল)-এর প্রয়োজনীয় সংশোধনের ব্যপারেও উদ্যোগী হচ্ছে কেন্দ্র। সংসদের আসন্ন বাজেট অধিবেশনে তা পেশ করা হতে পারে। মইলি জানান, কম্পিটিশন কমিশনের পূবর্তন চেয়ারম্যান ধনেন্দ্র কুমারকেই সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, প্রতিযোগিতা নীতি তৈরির দায়িত্বও তাঁকেই দেওয়া হয়েছিল।
কোম্পানি বিলটিও বাজেট অধিবেশনে পাশ করাতে চায় কেন্দ্র। মইলি জানান, নতুন বিলে ছোট শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ফিকি-র সভায় উপস্থিত কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় জানান, কর্পোরেট ক্ষেত্রকে সাহায্য করার উদ্যোগও প্রতিফলিত হবে নতুন কোম্পানি বিলে। কারণ আর্থিক বৃদ্ধির হার বাড়াতে এবং সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কর্পোরেট মহলের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। |