ভিক্ষা করতে উঠে ট্রেন ছেড়ে দেওয়ায় ট্রেন থেকে নামতে পারেননি জলপাইগুড়ির আমবাড়ির বাসিন্দা তারা বেওয়া। ভাল করে কথা বলতে পারেন না। মালদহে ভিক্ষা করে ১৮টি বছর কাটালেও কাউকেই বলতে পারেননি বাড়ির ঠিকানা। স্থানীয় এক বাসিন্দা কোনও রকমে জানাতে পেরেছিলেন আমবাড়ি এলাকায় তাঁর বাড়ি। মালদহের কুট্টিটোলার বাসিন্দা সফিকুল ইসলাম ওই একটি সূত্র ও তারা বেওয়ার ছবি নিয়ে গিয়েছিলেন আমবাড়িতে। সেখানেই খুঁজে পান তারা বেওয়ার মেয়ে তরিমা বিবিকে। দত শুক্রবার যখন মা-মেয়ের সাক্ষাৎ হল কুট্টিতোলার বাসিন্দাদের চোখে তখন জল। ওই দিন তাঁরা আমবাড়ির সুদামগঞ্জে নিজেদের বাড়িতে ফিরে গিয়েছেন। রবিবার সে কথা বলতে গিয়ে তরিমা খাতুন কেঁদেই ফেলেন। তিনি বলেন, “ভিক্ষে করতে বার হয়ে মা এমন প্রায়ই ট্রেনে উঠে পড়ত। ফিরেও আসত। শেষ বার যখন ফিরল না তখন প্রায় দু বছর ধরে খোঁজাখুজি করেছি। হদিস না-পেয়ে ভেবেছিলাম মা বোধহয় মরেই গিয়েছে। মালদহ থেকে সফিকুল ইসলাম গ্রামে ঘোরাঘুরির সময়ে ছবি দেখে চমকে উঠি। জীবনের শেষ কটা দিন মাকে আর চোখের আড়াল করতে চাই না।” স্বামী এবং এক মেয়ে নিয়ে ভরা সংসার ছিল তারার। বিবাহিত মেয়ে স্বামীকে নিয়ে বাড়িতেই থাকতেন। মেয়ে জামাই একই বাড়িতে থাকলেও স্বামীর মৃত্যুর পরে সংসার চালাতে ভিক্ষের পথই বেছে নেন তিনি। যে ব্যক্তির হাত ধরে তারা বেওয়া পরিবারের হদিস পান সেই সফিকুল ইসলাম বলেন, “আমার বাড়ির বারান্দায় বুড়ি রাত কাটাত। মাঝে অসুস্থ হলে হাসপাতালেও নিয়ে গিয়েছি। বার বার জেরা করে গ্রামের ঠিকানা পেয়ে একটা চেষ্টা করতে চেয়েছিলাম। সত্যিই বুড়ির মেয়েকে খুঁজে পাব সেটা ভাবতেই পারিনি।” সফিকুল ইসলামই জানান, বুড়ি স্পষ্ট করে কথা বলতে পারতেন না। এক পা ছোট তাই খোঁড়াতেন। মালদহ শহরের পিঁয়াজি মোড়, কুট্টিটোলা এলাকায় কারও বারান্দায়, কোনও দোকানের ছাউনিতে শুয়ে বসে রাত কাটাতেন। পেশায় দর্জি সফিকুলই একমাত্র সারা দিন কাজের ফাঁকে বৃদ্ধার পরিচয় জানার চেষ্টা করতেন। সফিকুলের স্ত্রী মঞ্জুয়ারা বিবি বলেন, “আমাদের বাড়ির বারান্দাতেই বেশির ভাগ দিন ওই বৃদ্ধা থাকতেন। এত দিনে নিজের পরিবারকে খুঁজে পেলেন। এখন মনে হচ্ছে আমরা যেন হারিয়ে ফেললাম এক আত্মীয়কে।” |