ঝাঁ চকচকে নতুন দোতালা ভবন। প্রতি ঘরে বৈদ্যুতিক আলো, পাখা রয়েছে। জলের সুব্যবস্থা রয়েছে। অথচ আবাসিক পড়ুয়াদের থাকতে হয় ওই ভবন লাগোয়া এক তলার একটি ভাঙাচোরা বাড়িতে। কেননা, আসবাব ও বাসনপত্র কেনার টাকার অভাবে গত তিন মাস ধরে নব নির্মিত বালুরঘাটের জেলা আদিবাসী ছাত্রাবাসটি চালু করা যাচ্ছে না। এতদিন নবনির্মিত ওই ভবনটিতে বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে চালু হচ্ছিল না। গত বছর নভেম্বরের শুরুতে নতুন ওই ছাত্রাবাসে বিদ্যুৎ সংযোগ করা হয়। এবার আবাসিক ছাত্রদের বসবাসের প্রয়োজনীয় আসবাব ও বাসনকোসনের অভাবে গত এক বছর ধরে তৈরি হয়ে পড়ে থাকা ছাত্রাবাসের নতুন বাড়িটি চালু হয়নি। ফলে লাগোয়া পুরানো ভাঙা বাড়িতে কষ্টের মধ্যে থাকতে হচ্ছে জনা পঞ্চাশেক আদিবাসী পড়ুয়াকে। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা অনগ্রসর কল্যাণ দফতর থেকে রাজ্যের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কমিশনারের কাছে ছাত্রাবাসে আবাসিক পড়ুয়াদের থাকার জন্য চৌকি, চেয়ার-টেবিল এবং থালা-বাটি-গ্লাস কেনা বাবদ ১৮ লক্ষ টাকা চেয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়। এ যাবত ওই খাতে কোনও টাকা না-আসায় সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। |
জেলাশাসক দুর্গাদাস গোস্বামী বলেন, “গত মাসেই কলকাতায় গিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগে ওই টাকা বরাদ্দের জন্য তদ্বির করা হয়েছে। সমস্যা কোথায় হচ্ছে, তা খোঁজ নিয়ে দেখছি।” বালুরঘাট শহরের সাহেবকাছারি এলাকায় আদিবাসী ছাত্রদের জন্য জেলার সবচেয়ে পুরানো আবাসিক ছাত্রাবাসের বাড়িটি বেহাল হয়ে পড়ায় রাজ্য সরকার ২০০৭ সালে লাগোয়া নিজস্ব জায়গায় নতুন বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করে। প্রায় ৫৫ লক্ষ টাকা খরচ করে তিনতলা বিশিষ্ট বিশাল ছাত্রাবাসের বাড়ি তৈরির কাজ শেষ হয় ২০১০ সালে। গোটা ভবনে রঙচঙ করে ঝাঁ চকচকে করে তোলা হয়। এরপর বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ না-হওয়ায় নতুন বাড়িটি চালুর উদ্যোগ আটকে যায়। শেষে সংবাদ মাধ্যমে বিষয়টি তুলে ধরা হলে গতবছর নভেম্বরে ভবনটিতে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ শেষ হয়। এরপরই জেলা থেকে খসড়া পরিকল্পনা করে আসবাব ও বাসনের জন্য ওই টাকা চেয়ে রাজ্য দফতরে প্রস্তাব পাঠানো হয়। জেলা অনগ্রসর কল্যাণ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক তথা মহকুমাশাসক দেবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বলেন, “পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির ১০০ আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত ছাত্রদের থাকবার উপযুক্ত করে আশ্রম সমতুল ওই ছাত্রাবাসের বাড়ি তৈরি করা হয়েছে। টাকা মঞ্জুর হলে পুরানো বাড়ি থেকে ছাত্রদের নতুন বাড়িতে স্থানান্তর করা হবে।” দফতর সূত্রের খবর, আবাসিক ছাত্রদের লেখাপড়া ও ভরণপোষন বাবদ সমস্ত খরচ সরকার বহন করে। হস্টেলে থেকে তারা বিভিন্ন স্কুলে পড়ে। রাজ্যের অনগ্রসর কল্যাণ দফতর থেকে আবাসিকদের শোওয়ার কাঠের চৌকি-সহ আসবাব এবং থালা বাটি কেনা বাবদ ১৮ লক্ষ টাকার বাজেটকে অত্যাধিক বলে মনে করে প্রস্তাব আটকে রাখা হয়েছে। বিভাগীয় জেলা কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়ে দিয়েছে, ১০০ জন আবাসিক পড়ুয়ার থাকার ব্যবস্থার জন্য বিভাগীয় ইঞ্জিনিয়র দিয়ে ওই ১৮ লক্ষ টাকার প্ল্যান এস্টিমেট করা হয়। আবাসিক সংখ্যা কমিয়ে ৫০ থেকে ৬০ জন করা হলে এই খাতে টাকা কম লাগবে। সেই প্রস্তাবও গত মাসে রাজ্য দফতরে পাঠানো হলেও রাজ্য দফতরের তরফে সাড়া পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ। |