দিনহাটা কাণ্ড নিয়ে বড়শরিক সিপিএমকে দুষলেও বামফ্রন্ট ছাড়ার প্রশ্ন নেই বলে সাফ জানিয়ে দিল ফরওয়ার্ড ব্লক। রবিবার দিনহাটায় আয়োজিত শহিদ দিবস পালনের অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা নেতৃত্ব দলের ওই অবস্থানের কথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। দলের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ ওই অনুষ্ঠানে সরাসরি বাম জমানায় দিনহাটা কাণ্ডের আসল অপরাধীদের আড়াল করা হয়েছে বলে তোপ দেগেছেন। এমনকী, ওই আড়াল করার ফল যে ভাল হয় না তা বোঝাতে সুশান্ত ঘোষের জেলে যাওয়া, লক্ষণ শেঠের পালিয়ে থাকার উদাহরণও টেনেছেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ বলেন, “বামফ্রন্টের পুলিশের গুলিতে আমাদের ৫ জন কর্মী শহিদ হলেও আমাদেরই ৬৩ জনের বিরুদ্ধে খুনের মামলা করা হয়। দিনহাটা কাণ্ডে যাদের শাস্তি দেওয়া দরকার ছিল তাদের রক্ষা করতেই তখনকার মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় রিপোর্ট দিয়েছিলেন। পুলিশের দেওয়া রিপোর্ট মেনে নিয়ে বলা হয়েছিল, পুলিশ কর্মীরা নিজেদের প্রাণ রক্ষার জন্য গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছিলেন। অথচ পরে কমিশনে পুলিশই বলেছে, আমাদের কর্মীরা পাথর ছোঁড়ার জন্য নিচু হয়েছিলেন বলে তাঁরা পা লক্ষ্য করে গুলি করলেও তা মাথায় লাগে।” |
তারপরেই সিপিএমকে কটাক্ষ করে ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক বলেন, “এখন কারও পার্টি অফিস থেকে কঙ্কাল, কোথাও বা পার্টি অফিসের পাশ থেকে জিলোটিন স্টিক পাওয়া যাচ্ছে। সুশান্ত ঘোষ জেলে গেলে কিংবা লক্ষ্মণ শেঠকে পালিয়ে থাকতে হলে তারা চক্রান্তের কথা বলছেন। বুদ্ধবাবু, বিমান বসুদের জন্য আমার দয়া হয়। এখনকার সরকার তাদের দেখানো পথেই হাঁটছে।” এসবের পরেও তারা যে বামফ্রন্ট ছাড়ছেন না তাও এদিন জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। উদয়নের যুক্তি, “সেদিন কোচবিহারে ফরওয়ার্ড ব্লককে শেষ করার চেষ্টা হয়েছিল। কোচবিহার থেকে আলিমুদ্দিন পর্যন্ত সব নেতারাই বলেছিলেন, আমাদের কর্মীরা সশস্ত্র ছিল। অথচ পুলিশের বাজেয়াপ্ত সামগ্রী তালিকায় ছিল শুধুমাত্র কিছু লাঠি। এসবের পরেও আমরা অবশ্য সিপিএমের সঙ্গে একসঙ্গে আন্দোলন চালিয়ে যাব, যেহেতু আমাদের মূলশত্রু তৃণমূল।” গোটা ঘটনায় অস্বস্তি বেড়েছে সিপিএমের জেলা নেতাদের। প্রাক্তন বনমন্ত্রী অনন্ত রায় বলেন, “ফ্রন্টের বৈঠকে আলোচনার পরেই এসব নিয়ে যা বলার বলব।” ২০০৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারির ফরওয়ার্ড ব্লকের আইন অমান্য কর্মসূচিকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দিনহাটা। মহকুমা শাসক দফতর চত্বরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান ফরওয়ার্ড ব্লকের ৫ কর্মী। এদিন তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দিনহাটা মহকুমাশাসকের দফতরের সামনে মেন রোডের ওপর অস্থায়ী মঞ্চ করে শহিদ দিবসের অনুষ্ঠান করা হয়। ফলে দিনহাটা-কোচবিহার রাস্তায় ঘুরপথে যান চলাচলের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে নিত্যযাত্রীদের। এদিনের ওই অনুষ্ঠানে দিনহাটা কাণ্ডের তদন্ত রিপোর্ট হারিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে রহস্য উন্মোচনে তদন্তের দাবিও জানান ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতারা। উদয়ন গুহ বলেন, “সরকারি দফতর থেকে রিপোর্ট হারালেও কেন পুলিশে অভিযোগ দায়ের হল না? আমরা ওই রিপোর্ট হারানোর ঘটনার তদন্ত চাইছি। রিপোর্ট প্রকাশেরও দাবি আমাদের আছে। তাতে যদি আমরা দোষী হই তবে শাস্তি হবে।” মহকুমাশাসকের দফতরের সামনে আয়োজিত ওই সভায় সাংসদ নৃপেন রায় আরও একধাপ এগিয়ে বলেন, “তখনকার শাসক দল কমল গুহের দিনহাটায় ফরওয়ার্ড ব্লককে খতম করতে চেয়েছিল।” বিধায়ক অক্ষয় ঠাকুর বলেন, “সেদিন গুলি চালানোর নির্দেশ কে দিয়েছিল? এসডিও, আইসি না কি রাইটার্স থেকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য? তা জানতেই তদন্ত কমিশনের দাবি করছিলাম।” পরেশ অধিকারী, দীপক সরকার-সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দও বক্তব্য রাখেন। |