দিনহাটা-কাণ্ডে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট ‘লোপাট’ হয়ে যাওয়ার ঘটনায় নতুন তদন্ত কমিশন গড়ার দাবি তুলল ফরওয়ার্ড ব্লক। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নারায়ণচন্দ্র শীলের কমিশন বিগত বাম জমানার শেষ দিকে যে রিপোর্ট মহাকরণে জমা দিয়েছিল, তা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই প্রেক্ষাপটেই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ফ ব-র দাবি, ওই ফাইল হারানোর ঘটনায় নতুন একটি বিচার বিভাগীয় কমিশন গড়া হোক। দিনহাটার ঘটনায় তৃণমূল নেত্রী মমতা কেন ক্ষমতায় এসে প্রতিশ্রুতি পূরণ করছেন না, সেই প্রশ্ন তোলার পাশাপাশিই সিপিএম নেতৃত্বকেও এক হাত নিয়েছেন বাম শরিক নেতৃত্ব।
কোচবিহারের দিনহাটায় ফ ব-র আইন অমান্য আন্দোলনে পুলিশের গুলিচালনায় ৫ জন কর্মী-সমর্থকের মৃত্যুর ঘটনার চতুর্থ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রবিবার এক স্মরণসভায় দলের সাধারণ সম্পাদক অশোক ঘোষ বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই তো বলেন, তিনি পারেন না, এমন কোনও কাজ নেই! ওই রিপোর্ট কেন প্রকাশিত হল না? শুনছি, রিপোর্ট লোপাট হয়ে গিয়েছে মহাকরণ থেকে! কার আমলে হল? এ দিক-ও দিক হয়ে থাকলে তদন্ত কমিশন করুন। সেটাও বিচার বিভাগীয় কমিশন হোক।” অশোকবাবুর বক্তব্য, বাম সরকারের শরিকের আন্দোলনে দিনহাটায় গুলি চলার পরে তৎকালীন বিরোধী দল তৃণমূল নেতৃত্ব মন্তব্য করেছিলেন, এর পরেও ফ ব কেন মন্ত্রিসভা বা বামফ্রন্টে আছে! সেই সময় ‘বাম রাজনীতিকে হেয়’ করার জন্য ওই কথা বলার পরেও সরকারে এসে ৮ মাস পেরিয়ে গিয়েছে। অথচ তৃণমূলের নেতৃত্বাধীন সরকার কেন শীল কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশ করেনি, প্রশ্ন তুলেছেন অশোকবাবু।
দিনহাটা-কাণ্ড নিয়ে ফ ব-র ‘ভোলবদলে’র ইতিহাস সাম্প্রতিক কালের রাজ্য রাজনীতিতে ‘সুবিদিত’! দিনহাটায় ২০০৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ওই ঘটনার পরে ফ ব রাজ্যে বন্ধ ডাকে, বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি তোলে। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বিচার বিভাগীয় কমিশন গড়েন। কিন্তু কমিশনের রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জমা পড়ার পরেই অশোকবাবু ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর কাছে লিখিত দাবি জানান, বাম ঐক্যের স্বার্থে তা অপ্রকাশিত রাখা হোক। তাঁর বক্তব্য ছিল, রিপোর্টে পুলিশ-প্রশাসন বা ফ ব কোনও একটি পক্ষ অভিযুক্ত হলেই ফ্রন্টে শরিকি দ্বন্দ্ব বাড়বে এবং বিরোধীরা তার ‘ফায়দা’ নেবে। কিন্তু অশোকবাবুর এই অবস্থান নিয়ে দলেই ঝড় ওঠে। শেষ পর্যন্ত রাজ্য কমিটির বৈঠকে প্রবল আপত্তির জেরে অশোকবাবুই আবার বিবৃতি দিয়ে দাবি করেন, রিপোর্ট প্রকাশ করতে হবে! এখন মমতার সরকারের উপরে তাঁরা ‘চাপ’ বাড়ানোর রাস্তায় হাঁটছেন।
দিনহাটায় সে দিনের আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন ফ ব-র কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ। কোচবিহার জেলা ফ ব এ দিন দিনহাটায় ‘পঞ্চ শহিদ’কে স্মরণ করেছে। অশোকবাবুর সুরেই অধুনা দিনহাটার বিধায়ক উদয়নবাবু বলেন, “সরকারি নথি হারিয়ে গিয়ে থাকলে সরকার এফআইআর করছে না কেন?” কিন্তু একই সঙ্গে তিনি আক্রমণ করেছেন সিপিএম নেতৃত্বকেও। উদয়নবাবুর কথায়, “পুলিশ আত্মরক্ষায় গুলি চালিয়েছিল, পুলিশেরই দেওয়া এই তথ্য বিধানসভায় বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধবাবু। অথচ পরে পুুলিশই হলফনামা দিয়ে বলেছে, আন্দোলনকারীরা পাথর ছোড়ার জন্য নিচু হচ্ছিল বলে তাদের মাথায় গুলি লেগেছে। অর্থাৎ আন্দোলনকারীরা সশস্ত্র হয়ে আক্রমণ করেছিল, এই তত্ত্বের বিপরীত কথা পুলিশই বলেছে। অথচ বুদ্ধবাবুরা পুলিশের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন!” জেলা সম্পাদকের আরও বক্তব্য, “বুদ্ধবাবু, বিমানবাবুদের প্রতি দয়া হয়! ওঁরা এই সব কাজ করেছিলেন বলেই এখন বাম নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসাচ্ছে তৃণমূলের সরকার। ওঁদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত আমাদের সকলকে করতে হচ্ছে! তবে নিশ্চিন্ত থাকুন। আমরা আপনাদের (সিপিএম) সঙ্গেই আছি।” এ দিনের অনুষ্ঠানে ছিলেন হাফিজ আলম সৈরানি, বরুণ মুখোপাধ্যায়, মইনুদ্দিন শামস প্রমুখ। |