বিপিএল তালিকাভুক্তদের চিকিৎসার খরচ জোগানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ‘রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্যবিমা যোজনা’ চালু করেছে প্রায় আড়াই বছর আগে। জেলার অন্য অংশের বাসিন্দারা এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে শুরু করেছেন। কিন্তু পুরসভার প্রয়োজনীয় উদ্যোগের অভাবে দুর্গাপুর পুর এলাকার বাসিন্দারা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ। পুরসভা অবশ্য সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
পরিবারের কর্তা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে আয় বন্ধ হয়ে যায়। সেই সঙ্গে তাঁর চিকিৎসার খরচ জোগাতে হয়। দুই দিক সামলাতে গিয়ে অনেক দুঃস্থ পরিবারকে জমি-বাড়ি বিক্রি করতে হয়। বিপাকে পড়ে পরিবারটি। বিপিএল তালিকাভুক্তদের এই সমস্যা থেকে রেহাই দিতে কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান দফতর রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্যবিমা যোজনার পরিকল্পনা নেয়। ২০০৮ সালের ১ এপ্রিল থেকে এই সরকারি স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্পটি চালু হয়। এই প্রকল্পে বিপিএল তালিকাভুক্ত পরিবারকে মাত্র ৩০ টাকা দিয়ে নাম নথিভুক্ত করতে হয়। বিমার কিস্তি মেটায় সরকার। কেন্দ্র দেয় ৭৫ শতাংশ, রাজ্য ২৫ শতাংশ। উত্তর-পূর্বের ৭টি রাজ্য এবং জম্মু ও কাশ্মীরের ক্ষেত্রে কেন্দ্র দেয় ৯০ শতাংশ। বাকিটা রাজ্য দেয়। এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্তদের ‘স্মার্ট কার্ড’ দেওয়া হয়। হাসপাতালে ভর্তি হলে সেই কার্ড দেখিয়ে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার খরচ মেলে। শুধু সরকারি নয়, নথিবদ্ধ দেশের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালেও চিকিৎসার সুযোগ পাওয়া যায়। একটি পরিবারের সর্বাধিক ৫ জন এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে পারেন।
কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত বর্ধমান জেলার ৫৯৫৭১৮ জন বিপিএল তালিকাভুক্তের মধ্যে ৩৭৪০৫৩ জনের নাম এই সরকারি স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্পে নথিভুক্ত হয়েছে। ইতিমধ্যেই চিকিৎসাজনিত সুবিধা পেয়েছেন ৫২৬৬ জন। কিন্তু দুর্গাপুর পুর এলাকায় এই প্রকল্প আজও চালু করা যায়নি।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বছরখানেক আগে পুর এলাকার ২০ হাজারেরও বেশি বিপিএল তালিকাভুক্তের নামের তালিকা তৈরি করে পাঠানো হয়েছিল জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দফতরে। পুরসভার ডেপুটি মেয়র শেখ সুলতান বলেন, “বছর গড়িয়ে গেলেও প্রশাসনের তরফে কোনও উদ্যোগ হয়নি। ফলে এই সরকারি স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্পটি চালু করা যায়নি পুর এলাকায়।”
পুরসভার এমন অভিযোগ মানতে চায়নি প্রশাসন। জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট দফতরে খোঁজ নিয়ে তিনি জেনেছেন, এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে গেলে পুর কর্তৃপক্ষকে শিবিরের আয়োজন করতে হয়। সেই শিবিরের মাধ্যমে এক জন ‘কি পার্সন’ বেছে নেওয়া হয়। তাঁর মাধ্যমে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিমা সংস্থাগুলি নাগরিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাকি কাজ করে নেয়। জেলাশাসক বলেন, “দুর্গাপুর পুরসভার দিক থেকে নিয়ম মেনে পদক্ষেপ না করায় এই পুর এলাকায় সরকারি স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্পটি চালু করা যায়নি।” |