দু’জনেই ভর্তি ছিলেন হাসপাতালে। দু’জনই নিখোঁজ হলেন হাসপাতাল থেকেই। এক জনের মৃতদেহ মিলল হাসপাতাল চত্বরেই একটি নর্দমায়। অন্য জনের মৃতদেহ রেললাইনের পাশ থেকে উদ্ধার করল রেলপুলিশ। প্রথমটি বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ঘটনা। দ্বিতীয় জন ভর্তি ছিলেন কল্যাণী ইএসআই হাসপাতালে। কী ভাবে হাসপাতাল থেকে নিখোঁজ হলেন রোগী, দুই হাসপাতালের কর্তৃপক্ষই অবশ্য তার সদুত্তর দিতে পারেননি।
বর্ধমান মেডিক্যালের ঘটনায় রোগীর মৃত্যুর কারণ বা কী ভাবে দেহ নর্দমায় গেল তা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানাতে পারেননি। হাসপাতাল সুপার অসিতবরণ সামন্ত বলেন, “ঘটনার তদন্ত হবে।” কল্যাণীর ওই রোগী আত্মঘাতী হয়েছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে রেল পুলিশের অনুমান।
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ জানুয়ারি জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন সঞ্জয় বাগদি (৩৭)। হাসপাতালের রেকর্ড অনুযায়ী, তাঁর বাড়ি বর্ধমান শহরের মেহেদিবাগানে। সুপার জানান, শনিবার রাতেও ওয়ার্ডে তাঁকে ঘোরাফেরা করতে দেখা গিয়েছিল বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের কয়েক জন কর্মী। কিন্তু রবিবার সকাল থেকে তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। সকাল ৮টা নাগাদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বর্ধমান থানায় ওই রোগী নিখোঁজ হওয়ার খবর দেন। এর পরে ১০টা নাগাদ মেডিসিন বিভাগের কাছে রাধারানি ওয়ার্ডের বাইরে একটি নর্দমায় তাঁকে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
সুপার অসিতবাবু জানান, সঙ্গে সঙ্গে ওই রোগীকে জরুরি বিভাগে পাঠানো হলে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। কী ভাবে ওই রোগী ওয়ার্ডের বাইরে গেলেন বা কী কারণে তাঁর মৃত্যু হল, তার কোনও সদুত্তর সুপার দিতে পারেননি। তিনি বলেন, “যত দূর জেনেছি, ওই ব্যক্তি গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। তাঁর দেহে কোনও আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। মৃত্যুর কারণ জানার জন্য ময়না-তদন্ত করানো হয়েছে।”
বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ মির্জা জানান, এ দিন সকালে ওই রোগীর নিখোঁজ হওয়ার কথা হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছিল। পরে মৃতদেহ মিললেও এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁর কোনও আত্মীয়স্বজন দেহ নিতে আসেননি। মেহেদিবাগান এলাকায় খোঁজ করেও ওই ব্যক্তির বাড়ির হদিস মেলেনি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পেটে ব্যথা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার কল্যাণী ইএসআই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার হাজিনগরের বাসিন্দা মহম্মদ সুলেমান (২৫)। শনিবার সন্ধ্যায় হাসপাতাল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে রেললাইনের পাশে তাঁর দ্বিখণ্ডিত দেহ মেলে। মৃতের কাকা মহম্মদ মমতাজ বলেন, “শনিবার বিকেলে হাসপাতালে গিয়ে সুলেমানের খোঁজ পাইনি। অন্য রোগীরা জানান, হয়তো ধারেকাছে কোথাও গিয়েছে। সন্ধ্যায় রেলপুলিশ ফোনে জানায়, লাইনের ধারে এক যুবকের দেহ মিলেছে।” রবিবার রানাঘাট জিআরপি-তে দেহ শনাক্ত করেন সুলেমানের বাড়ির লোকজন।
প্রাথমিক তদন্তে রেলপুলিশের ধারণা, ওই যুবক আত্মঘাতী হয়েছেন। ইএসআই হাসপাতালের সুপার অমিতাভ সাহার দাবি, “ওই দিন বিকেলে বাড়ির লোকেদের উপস্থিতিতেই ছেলেটি নিখোঁজ হয়ে যায়। আমরা পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েছি।” রেলপুলিশ জানায়, তদন্ত চলছে। |