রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবায় চিকিৎসকদের সামাজিক দায়বদ্ধতা এখন প্রশ্নচিহ্নের মুখে। কিন্তু স্বাস্থ্যব্যবস্থার এই ছবি যে কেবলই খণ্ডচিত্র মাত্র, এগরা মেলার স্বাস্থ্যশিবির ফের তা প্রমাণ করে দিল। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী প্রবোধচন্দ্র সিংহের অনুরোধে প্রখ্যাত হৃদরোগ শল্যচিকিৎসক সত্যজিৎ বসু তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে সেই ২০০৩ সাল থেকে পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা মেলায় বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসা করছেন। এ বারও রবিবার তাঁর শিবিরে উপচে পড়ছিল রোগীদের ভিড়।
এগরা থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে নন্দীগ্রামের গোকুলনগর থেকে এসেছেন বৃদ্ধ ভূদেবচন্দ্র দাস অধিকারী। তিনি বলেন, “অনেক জায়গায় ঘুরেছি। কিন্তু সুফল পাইনি। বড় ডাক্তারবাবুরা এখানে আসছেন শুনে তাই অনেক আশায় ছুটে এসেছি।” বিনামূল্যে এগরা শহরের অলুয়াঁ গ্রামের শঙ্কর মান্নার চার বছরের মেয়ের ‘হার্ট ভালভ্ রিপ্লেসমেন্ট’ করে দিয়েছিলেন সত্যজিৎবাবু। উপকার ভোলা সম্ভব নয় শঙ্করবাবুর পক্ষে। তাই এগরা মেলায় ‘ডাক্তারবাবু’র আসার খবর শুনে দেখা করতে এসেছেন তিনিও। শিবিরের বাইরে অপেক্ষারত প্রাক্তন ব্যাঙ্ককর্মী দেবেশচন্দ্র পাল বলেন, “দরিদ্রদের বিনামূল্যে চিকিৎসা করে দেওয়ার পাশাপাশি সহজ মাসিক কিস্তিতে চিকিৎসার খরচ পরিশোধেরও ব্যবস্থা করে দেন ডাক্তারবাবু। ওঁকে হাতের নাগালে পাওয়াও কম ব্যাপার নয়।” |
শিবিরের উদ্যোক্তা এগরা মেলাকমিটির সম্পাদক কেশব নায়েক বলেন, “সত্যজিৎবাবু ও তাঁর হাসপাতালের (‘দ্য মিশন হসপিটাল, দুর্গাপুর’) চিকিৎসকদের কল্যাণে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন আসছেন স্বাস্থ্যশিবিরে। এমনকী ওড়িশা থেকেও রোগীরা আসছেন। সমাজসেবার এই সুযোগ পেয়ে আমরা কৃতজ্ঞ।”
প্রত্যন্ত এলাকায় চিকিৎসা ব্যবস্থার সুফল পৌঁছে দিতে পেরে তৃপ্তি চিকিৎসকদের চোখেমুখেও। সত্যজিৎবাবু জানান, ২০০৮ সালে দ্য মিশন হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা ছিল ২৫০। কিন্তু রোগীদের চাপে সেই হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা বাড়িয়ে ৪০০ করতে হচ্ছে। এ ছাড়া শিলিগুড়ি, রাঁচি ও বর্ধমানের অন্ডালেও হাসপাতাল খোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের ‘মেডিক্যাল টেকনিশিয়ান কোর্স’ করেও বহু তরুণ-তরুণী রাজ্যে ও রাজ্যের বাইরে চাকরি পাচ্ছেন। সত্যজিৎবাবু বলেন, “কিস্তিতে এত কম খরচে চিকিৎসার সুযোগ আর কোথাও পাওয়া সম্ভব নয়। আমরা আদর্শগত দিক থেকে সরকারি হাসপাতালের খরচে চিকিৎসা করি।” |