চলতি মাসের গোড়া থেকেই আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীরা খাবারের মান ও পরিমাণ নিয়ে প্রশ্ন তুলছিলেন। এ নিয়ে নালিশও জানিয়েছিলেন সুপারের কাছে। রবিবার দুপুরে খাবার নিয়ে ফের সেই একই অভিযোগ তুলে পুরুষ শল্য বিভাগের (মেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ড) রোগীরা খাবার বয়কট করলেন। এ নিয়ে অশান্তিও হয়। ওই রোগীরা কর্তব্যরত নার্সদের কাছে বিক্ষোভ দেখান। রোগীদের আত্মীয়-স্বজনদের একাংশ এবং স্থানীয় কিছু লোক খাবার সরবরাহকারী ঠিকাদার সংস্থার কর্মীদের নিগ্রহ করেন এবং ওয়ার্ড-মাস্টারকে হেনস্থা করেন বলে অভিযোগ।
হাসপাতালের সুপার নির্মাল্য রায় এ দিন হাসপাতালে ছিলেন না। তিনি ঘটনার কথা ওয়ার্ড-মাস্টার নিমাই মণ্ডলের কাছ থেকে জানতে পারেন। সুপার জানান, আজ, সোমবার ঠিকাদার সংস্থার সঙ্গে কথা বলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ পরিকল্পিত ভাবে গোলযোগ পাকাচ্ছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন খাবার সরবরাকারী ঠিকাদার সংস্থা। সংস্থার কর্ণধার রবিশঙ্কর প্রামাণিক বলেন, “স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ মেনেই আমরা খাবার সরবরাহ করি। পরিমাণ বা মান নিয়ে অভিযোগ থাকার কথা নয়। এর পিছনে কোনও চক্রান্ত হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” প্রসঙ্গত, বরাত পেয়ে ২ ফেব্রুয়ারি থেকে এই সংস্থাই খাবার সরবরাহ করছে রোগীদের।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরুষ শল্য বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩১ জন। প্রতিদিনের মতো হাসপাতালে সকাল সাড়ে ১১টায় দুপুরের খাবার দেওয়া শুরু হয়। প্রসূতি বিভাগ, মহিলা ও পুরুষ মেডিসিন বিভাগের রোগীরা খাবারের মান ও পরিমাণ নিয়ে আপত্তি তুললেও কোনও বিক্ষোভ দেখাননি। কিন্তু পুরুষ শল্য বিভাগে খাবার দেওয়া শুরু হওয়া মাত্র গোলমাল শুরু হয়। তত ক্ষণে এক রোগীর আত্মীয় রোগীদের দৈনিক খাদ্য-তালিকা সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশিকাও জোগাড় করে ফেলেন। সেই তালিকার সঙ্গে পরিমাণের সামঞ্জস্য মিলছে না, এই অভিযোগ ওঠে। শুরু হয় বচসা। খাদ্য সরবরাহকারী কর্মীদের নিগ্রহ করা হয় বলে অভিযোগ।
ওই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আরামবাগের সামতা গ্রামের জাহাঙ্গির মিদ্দা বলেন, “আমি ডায়াবেটিস রোগী। অথচ, তরকারিতে বেশি পরিমাণে আলু থাকে। অথচ, আমাদের মতো রোগীদের খাবারের জন্য সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী, দুপুরের তরকারিতে মাথাপিছু লাউ ৭৫ গ্রাম এবং সব্জি ১০০ গ্রাম থাকার কথা। কিন্তু তা থাকছে না।” অস্বাস্থ্যকর ভাবে হাসপাতালে খাবার দেওয়া হয় বলে অভিযোগ তুলেছেন ওই ওয়ার্ডেই চিকিৎসাধীন আরামবাগের আরান্ডি গ্রামের অনুপকুমার স্বর্ণকারও। বহু রোগীই অভিযোগ তোলেন, স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকা অনুযায়ী পরিমাণ মতো খাবার দেওয়া হচ্ছে না।
এ দিন পুরুষ শল্য বিভাগের রোগীরা খাবার বয়কট করলেও হাসপাতালের তরফে কোনও বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়নি। এ ব্যাপারে সুপার জানান, তিনি হাসপাতালে না থাকায় বিকল্প ব্যবস্থা করে উঠতে পারেননি। তবে, অভুক্ত রোগীদের খাবারের ব্যবস্থা করে হাসপাতালের ঠিকাকর্মীদের সংগঠন (সারা বাংলা হাসপাতাল রোগী কল্যাণ ও অস্থায়ী ঠিকাকর্মী ঐক্য কেন্দ্র)। সংগঠনের আরামবাগ শাখার সম্পাদক পঙ্কজ নন্দী বলেন, “গোলমালের জেরে খাবার সরবরাহকারী ঠিকাদার সংস্থার লোকেরা রান্নাঘরে তালা মেরে পালায়। অভুক্ত রোগীদের জন্য আমাদের সংস্থার তহবিল থেকে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়।” |