অসুস্থ মানুষকে এনে নির্বীজকরণ করার চেষ্টা হচ্ছে এই অভিযোগে চিকিৎসক এবং এজেন্টকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখালেন গ্রামের মানুষ। তাঁদের মারধরও করা হয়েছে বলে অভিযোগ। ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার উত্তর ২৪ পরগমনার সন্দেশখালির হাটগাছি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। খবর পেয়ে রাতে পুলিশ গিয়ে চিকিৎসক এবং ওই এজেন্টকে ঘেরাও মুক্ত করেন। পরে মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পেলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। বসিরহাটের এসডিপিও আনন্দ সরকার বলেন, “গ্রামবাসীদের অভিযোগের ভিত্তিতে এজেন্ট কৃষ্ণ শীলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে নির্বীজকরণের জন্য যাঁদের আনা হয়েছিল সকলকেই থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। ওঁরা প্রায় সকলেই ভিক্ষাজীবী। সোমবার তাঁদের আদালতে পেশ করে হোমে পাঠানোর জন্য বিচারকের কাছে আবেদন জানানো হবে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন হাবরা বাণীপুরের বাসিন্দা কৃষ্ণ শীল নামে এক ব্যক্তি শ্যমনগর থেকে কয়েকজনকে হাটগাছি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসেন নির্বীজকরণের জন্য। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, তাঁদের মধ্যে একজনকে অপারশনের জন্য ইঞ্জেকশন দেওয়ার সময় ছুটে স্বাস্ত্য কেন্দ্রে বাইরে বেরিয়ে আসেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলে গ্রামবাসীদের মনে তিনি অসুস্থ। সন্দেহ হওয়ায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভিতরে ঢুকে সব জানতে পেরে চিকিৎসক এবং ওই এজেন্টকে একটি ঘরে আটকে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। কেন অসুস্থ মানুষকে নির্বাজকরণ করা হচ্ছে সে ব্যাপারে চিকিৎসকের কাছে জানতে চান তাঁরা। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাঁদের ঘেরাওমুক্ত করে ও এজেন্ট কৃষ্ণবাবুকে গ্রেফতার করে।
মহকুমা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বাস্থ্যকর্তাদের অনুমতি সাপেক্ষে বেশ কিছুদিন ধরে হাটগাছি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নির্বীজকরণের কাজ হচ্ছে। যাঁর নির্বীজকরণ হয় তাঁকে এক হাজার টাকা ও যিনি তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন তাঁকে ২০০ টাকা দেওয়া হয়। সন্দেশখালি-১ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সবাপতি রণজিত দাস ও স্থানীয় সরবেড়িয়া পঞ্চায়েতের প্রধান মোসলেম শেখের অভিযোগ, “কথা বলে দেখা গিয়েছে, যাঁদের নির্বীজকরণের জন্য আনা হয়েছে তাঁদের প্রায় সকলেই অসুস্থ। অনেকে মানসিক ভারসাম্যহীন। কেন তাঁদের আনা হয়েছে তা জিজ্ঞাসা করা হলে চিকিযসক বা ওই এজেন্ট কেউই কিছু বলতে পারেননি। তাই আমরা তাঁদের আটকে রাখি।” মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত পান্ডে বলেন, “হাটগাছি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দক্ষতার সঙ্গেই চিকিৎসক নির্বীজকরণ করে আসছেন চিকিৎসক শিবপদ দাস। জেলার অন্য চিকিৎসকদেরও তিনি এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন। এখন কেউ যদি অসুস্থতা গোপন করে নির্বীজকরণের জন্য আসেন তাহলে চিকিযসক কী করবেন? তবে এ বিষয়ে কারও কোনও অভিযোগ থাকলে তা লিখিতভাবে দিতে হবে। প্রয়োজনে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে একই সঙ্গে তিনি বলেন, “অপারেশনের জন্য কাউকে আনলে এজন্ট টাকা পান। ওই এলাকায় এজেন্ট্দের দু’পক্ষের মধ্যে গন্ডগোলের জেরে এই ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে। তবে যদি দেখা যায় অসুস্থ বা মানসিক ভারসাম্যহীন কাউকে নির্বীজকরণের জন্য ধরে আনা হয়েছে তাহলে সেটা অন্যায়। সে ক্ষেত্রে তদন্ত করে ওই এজেন্টের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে যে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে গ্রামবাসীদের অভিযোগ সেই শিবপদ দাসকে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাঁর সঙ্গে কথা বলা যায়নি। |