মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সফরের পাঁচদিন আগে উত্তরবঙ্গে প্রথম মহিলা থানার উদ্বোধন হল। রবিবার বিকালে শিলিগুড়ি থানা চত্বরের একটি ভবনে ওই থানার উদ্বোধন করেন রাজ্য পুলিশের উত্তরবঙ্গের আইজি সঞ্জয় সিংহ। তিনি জানান, একজন ওসি সহ ২০ জন মহিলা পুলিশ কর্মী দিয়ে আপাতত চলবে ওই থানা। থানায় একজন ইন্সপেক্টর সহ আরও কয়েকটি পদ পরবর্তীতে পূরণ করা হবে। শিলিগুড়ি মহকুমায় মহিলা সম্পর্কিত যে কোনও অপরাধের ক্ষেত্রে ওই থানায় মামলা দায়ের করার সুযোগ রয়েছে। আইজি বলেন, “উত্তরবঙ্গে শিলিগুড়িতেই প্রথম মহিলা থানার উদ্বোধন হল। জলপাইগুড়িতে আরেকটি মহিলা থানা হবে। পুরুষচালিত থানায় অনেক সময় মহিলারা সমস্ত কিছু বলতে চান না। সরাসরি অভিযোগ জানাতেও চান না। সেক্ষেত্রে তদন্তে সমস্যা হয়। মহিলা থানা হওয়ায় সেই সমস্যা থাকবে না। এ ছাড়া লোকাল থানার মহিলাঘটিত মামলাও পরবর্তীতে ওই থানায় স্থানান্তরিত করা যাবে।” তিনি জানান, বধূ নির্যাতন, ধর্ষণ, মহিলা অপহরণ, ইভটিজিং, প্রতারণার মতো অপরাধের মামলা করা যাবে ওই থানায়। |
শিলিগুড়ি মহকুমার যে কোনও প্রান্ত থেকে কেউ চাইলে ওই থানায় মহিলাঘটিত অপরাধের মামলা করতে পারেন। শিলিগুড়িতে বর্তমানে ৬৫ জন মহিলা পুলিশ কর্মী রয়েছেন। তাদের মধ্যে ২০ জনকে নিয়ে ওই থানা চালু করা হয়েছে। থানার ওসি করা হয়েছে সাব ইন্সপেক্টর মমতাজ বেগমকে। এ ছাড়াও ৫ জন মহিলা অফিসার রয়েছেন। বাকিরা মহিলা কনস্টেবল। শিলিগুড়ির থানা চত্বরে একটি আলাদা ভবনের দোতলায় তিনটি ঘরে আপাতত থানার কাজ চলবে। ওই থানার জন্য একটি জিপ বরাদ্দ করা হয়েছে। আইজি বলেন, “মহকুমায় যত মহিলা পুলিশ কমী রয়েছেন, তাতে থানা চালাতে অসুবিধে হবে না। তবে রাজ্য বর্তমানে ৫ শতাংশ মহিলা পুলিশ কর্মী রয়েছে। আমরা আশাবাদী ওই সংখ্যা বাড়ানো হবে। তাহলে সুবিধে হবে।” আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি শিলিগুড়িতে আসবেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই দিন তিনি শিলিগুড়িতে পুলিশ কমিশনারেট নিয়েও কিছু বলতে পারেন। সেদিক থেকেও মহিলা থানার গুরুত্ব রয়েছে। সভায় উপস্থিত দার্জিলিংয়ের পুলিশ সুপার আনন্দ কুমার বলেন, “এটা একটা ঐতিহাসিক দিন। রাজ্যে ৫০ শতাংশ মহিলা। সেখানে মহিলারা থানায় যেতে সঙ্কোচ বোধ করেন। কোনও পুরুষের সাহায্য ছাড়া থানায় যেতে চান না। আমার কর্মজীবনে এটা আমি দেখেছি। নতুন সরকার মহিলা থানার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সেই সঙ্কোচ দূর হবে। মহিলার সরাসরি থানায় গিয়ে নিজেদের সমস্যা জানাবেন বলে আমাদের বিশ্বাস।” তিনি জানান, এর আগে প্রত্যেকটি থানায় মহিলা সেল ছিল। কিন্তু সেক্ষেত্রে ওই সেলের সীমাবদ্ধতা ছিল। সেখানে কোনও মামলা দায়ের করা যেত না। মহিলা থানায় সরাসরি মামলা দায়ের হবে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যে ১০টি মহিলা থানা গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। এর মধ্যে দক্ষিণবঙ্গের আসানসোলে মহিলা থানা চালু হয়েছে। এদিনের সভায় শিলিগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি সহ জেলা পুলিশ কর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও কংগ্রেসের দুই মহিলা কাউন্সিলর সীমা সাহা, রুমা নাথ এবং ফোসিনের সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস উপস্থিত ছিলেন। দুই মহিলা কাউন্সিলর বলেন, ‘‘মহিলা থানা খুব জরুরি। সেই সুবিধে চালু হওয়ায় মহিলাদের সুবিধে হবে। আমরা খুশি।” |