মালেকা খাতুনদের নেপালি বস্তি এলাকায় চোলাইয়ের রমরমা কারবার। এলাকার পরিবেশ বিষিয়ে উঠেছে। মালেকাদেবীর অভিযোগ, মদ খাওয়া নিয়ে অনেকের সংসারে অশান্তি, এলাকার তরুণেরা বিপথে যাচ্ছে। পুলিশকে বারবার জানিয়েও কাজ হয়নি। এই অবস্থায় তাঁরা কী করবেন? শিলিগুড়ি পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ওই সমস্যার কথা মহিলাদের সচেতনতা প্রচার অনুষ্ঠানে মালেকাদেবী যখন তুলে ধরেন তাঁকে সমর্থন জানান অন্যান্যরাও। বিদ্যাসাগর কলোনির বাসিন্দা মিনা বণিকের সমস্যা অন্য। চম্পাসারি এলাকায় তাঁর ৫ কাটা জমি রয়েছে। অথচ সেই জমি থেকে ২ কাঠার মতো অন্য জন্যকে সরকারের তরফে পাট্টা দেওয়ায় তিনি বিপাকে পড়েছেন বলে অভিযোগ। কী করবেন তা ভেবেই পাচ্ছেন না। গরিব পরিবারের অনেক মহিলারা জানান তাঁদের বিপিএল কার্ড না থাকায় জন্য সমস্যার কথা। কারও রেশন কার্ড নেই। তা করতে ঠিক কোথায় যাবেন, কী করবেন জানা নেই পম্পি ঘোষ, শ্যামলী ঘোষদের মতো বস্তিবাসী মহিলাদের। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ওমেন স্টাডিজের উদ্যোগে মহিলাদের মধ্যে সচেতনতা প্রচার অনুষ্ঠানে রবিবার এমনই বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন পম্পি ঘোষ, মিনা বণিকদের মতো বাসিন্দারা। মহানন্দাপাড়া প্রাথমিক স্কুলে ওই অনুষ্ঠানে এ দিন আশেপাশের বস্তির শতাধিক মহিলারা অংশ নেন। পারিবারিক ঝুটঝামেলা থেকে নানা সমস্যা নিয়ে বাসিন্দাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে মঞ্চে ছিলেন মহিলা কমিশন এবং জেলা সমাজ কল্যাণ বোর্ডের সদস্য জ্যোৎস্না অগ্রবাল, পারিবারিক সহায়তা কেন্দ্রের কাউন্সেলর শেফালি গোস্বামী বাগচী, শিলিগুড়ি পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর রীতা পাল, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক সুজিত বিশ্বাসরা। তাঁরা জানিয়ে দেন, চোলাইয়ের বিরুদ্ধে এলাকার বাসিন্দাদের প্রয়োজনে একজোট হয়ে দাঁড়াতে হবে। পুলিশ প্রশাসনের সাহায্য নিতে হবে। রাজনৈতিক কর্মী প্রতুল চক্রবর্তী জানান, কারও রেশন কার্ড হারিয়ে গেলে সবার আগে পুলিশে অভিযোগ জানাতে হবে। তার পর নিয়ম মেনে তাঁর প্রতিলিপি-সহ খাদ্য সরবরাহ দফতরে আবেদন করতে হবে। তা শুনে আশ্বস্ত হন শ্যামলী ঘোষরা। বস্তির বাসিন্দা প্রভাতী সরকারের বাঁ হাত অকেজো। একটি হাত দিয়েই তাঁকে যাবতীয় কাজ সারতে হয়। তিনি প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন না। কী করবেন? জ্যোৎস্না দেবী জানান, সরকারের তরফে বিধবা, বয়স্ক এবং প্রতিবন্ধীদের ভাতা দেওয়া হয়। পুরসভা থেকে তা দেওয়া হয়। কাউন্সিলরের মাধ্যমে তাঁরা আবেদন করবেন। তবে প্রার্থীদের বিপিএল তালিকা ভুক্ত হওয়া জরুরি। সে ক্ষেত্রে প্রকৃত গরিব অনেকে বিপিএল তালিকাভুক্ত না হওয়ায় কিছু সমস্যা রয়েছে। বিপিএল তালিকা সংশোধন করতেও উদ্যোগী সরকার। মিনা দেবীর জমি নিয়ে সমস্যা শুনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক সুজিত বিশ্বাস বলেন, “বিষয়টি নিয়ে ব্লকের ভূমি সংস্কার দফতরে অভিযোগ জানাতে হবে।” রেশমি বেগম জানান, তাঁর বাবা হাবিবুল রহমান দুই মাইলে শিলিগুড়ি শিল্প তালুকে সরকারি সংস্থা উড ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতেন। কয়েক বছর হল অবসর নিয়েছেন। কিন্তু পেনশন পাচ্ছেন না। এই পরিস্থিতিতে কী করতে হবে বুঝতে পারছেন না। বিস্তারিত খতিয়ে দেখে পরামর্শ দেবার জন্য সার্ভিস বুক এবং অন্যান্য নথিপত্র নিয়ে তাঁদের যোগাযোগ করতে পরামর্শ দেন সুজিতবাবুরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ওমেন স্টাডিজের প্রজেক্ট অফিসার বীথিকা মণি দত্ত বলেন, “মহিলাদের সচেতন হতে হবে। পরিবার এবং সমাজে নানা সমস্যার শিকার হন তাঁরা। সমাজে এখনও অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা বঞ্চিত থাকেন। শিক্ষা সেই দূরত্ব ঘোচাতে পারে। বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে বস্তি এলাকার বাসিন্দা এই মহিলাদের আইনি সহায়তা, পরামর্শ দিতে ফের এ ধরনের শিবির, কর্মশালা করা হবে।” |