গোয়ালতোড় থানা এলাকার দামোদরপুর গ্রামের বিশ্বনাথ সিংহের জন্ম থেকেই দু’টি হাত নেই। পা দিয়েই লিখতে হয়। মাধ্যমিকে ৫৯৮ নম্বর পাওয়া তফসিলি সম্প্রদায়ের অম্বেডকর পুরস্কার পাওয়া এই ছাত্র এ বার সরকারি উদ্যোগে আয়োজিত কেরিয়ার অ্যাপটিটিউট টেস্টে যোগ দিয়েছিলেন। উচ্চমাধ্যমিকের কলা বিভাগের ছাত্র বিশ্বনাথ পা দিয়েই উত্তরপত্র লেখা শেষ করে জানালেন, পরীক্ষা হয়েছে ভালই।
প্রতিবন্ধী এই ছাত্রের সমস্যা দেখে তফসিলি জাতি ও উপজাতি বিত্ত নিগমের আধিকারিকেরাও এক নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করলেন। নিগমের অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার জ্যোতির্ময় তাঁতি এবং নিগমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা আধিকারিক রাহুল নাথ বলেন, “কোন ছাত্রছাত্রীর ঝোঁক কোন দিকে তা দেখার জন্যই এই ধরনের পরীক্ষার আয়োজন। কিন্তু তারই সঙ্গে কার-কী ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে সেটা জানাও জরুরি। যাতে সুযোগ থাকলে সরকারি প্রকল্পে সাহায্য করা যায়। পরীক্ষার ফল বেরনোর পর প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর জন্যই আলাদা করে রিপোর্ট-কার্ড তৈরি করা হবে।” |
তফসিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের কৃতী মাধ্যমিক ছাত্রছাত্রীদের বি আর অম্বেডকর পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল আগে। আর এ বার ২০১০ ও ২০১১ সালের কৃতী ছাত্রছাত্রীদের জন্য কেরিয়ার অ্যাপটিটিউট টেস্টের আয়োজন করা হয়েছে। রাজ্যে বি আর অম্বেডকর পুরস্কার পাওয়া ২ হাজার ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ১৪৬১ জন পরীক্ষায় বসেছিলেন। অন্য জেলার তুলনায় পশ্চিম মেদিনীপুরে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতির হার ছিল বেশি। ২২০ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ১৭৮ জনই পরীক্ষায় বসেছিলেন। অর্থাৎ যোগদানের হার ৮১ শতাংশ ছাত্রছাত্রী। যেখানে রাজ্যে পরীক্ষায় বসার হার ছিল ৭৩ শতাংশের কাছাকাছি।
প্রশাসন জানিয়েছে, এই পরীক্ষার মাধ্যমে ছাত্র বা ছাত্রীরা কোন বিষয় নিয়ে পড়তে ইচ্ছুক তা বোঝা যাবে। অর্থাৎ কে অঙ্কে পারদর্শী, কে সাহিত্যে কিংবা কোন ছাত্র প্রযুক্তিবিদ্যার দিকে যেতে চাইছেপরীক্ষার ফল বেরনোর পরে সে বিষয়ে একটি স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে। আবার কোন বিষয়ে ওই ছাত্রছাত্রীর দুর্বলতা রয়েছে তা-ও বোঝা যাবে। রিপোর্ট কার্ড তৈরির পরে ছাত্রছাত্রীদের পড়াসোনার উপরে নজর রাখা হবে ৬ বছর। ওই সময়ের মধ্যে পঠন-পাঠনে নানা ভাবে সাহায্যেরও চেষ্টা করবে সরকার। যদিও এ বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে বিষয়টি পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে। বিত্ত নিগমের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়াও তফসিলি ছাত্রছাত্রীদের জয়েন্ট এন্ট্রান্সের জন্য বিশেষ কোচিংয়েরও ব্যবস্থা করে নিগম। এ সব ছাড়াও অন্য কী ভাবে সাহায্য করা যায় তা নিয়ে রাজ্য সরকার চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছে। সেই সাহায্যের পথ খুঁজে বার করার জন্যই বিশেষ এই টেস্টের আয়োজন। |