‘ভুল’ নিয়ে ভ্রান্তিবিলাস, তোপ বুদ্ধ-বিমানকে
বিগত বাম জমানার ‘ভুল’ স্বীকার করতে গিয়েই এ বার দলের কর্মীদের তোপের মুখে পড়তে হল সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বকে! ‘ভুল’ করার সময় ‘ভুল’ বুঝতে না-পারাই যে বড় ভুল, রাজ্য নেতৃত্বকে স্মরণ করিয়ে দিলেন কর্মীরা। এমনকী, রাজ্য সম্মেলনের আগেই ছোট ছোট ইউনিটের কর্মীরা কেন এত প্রশ্ন তুলছেন, জবাবি ভাষণে সেই পাল্টা প্রশ্ন তুলতে গিয়ে প্রতিবাদের মুখে পড়তে হল রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুকে!
বস্তুত, সিপিএমের আসন্ন রাজ্য সম্মেলনের মিনি-মহড়াই যেন হয়ে গেল রবিবার দলের রাজ্য কেন্দ্রের সম্মেলনে। সরাসরি আলিমুদ্দিনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে যাঁরা কাজ করেন, সেই রাজ্য কেন্দ্রের কর্মীদের সম্মেলন বলেই এ দিনের ঘটনাপ্রবাহ যথেষ্ট ‘তাৎপর্যপূর্ণ’। সম্মেলনের শুরুতে তাঁর স্বাভাবিক কায়দায় ‘ভুল’ স্বীকার করেছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তার পরে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর অন্তত চার জন সদস্যের উপস্থিতিতে দলের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্বের একের পর এক ‘ভুল’ নিয়ে সরব হন প্রতিনিধিরা। যার জবাব দিতে গিয়ে বিমানবাবু প্রথমে ঈষৎ ‘চড়া সুরে’ শুরু করেও প্রতিবাদের মুখে ব্যাখ্যা করেন, দলীয় নেতৃত্বও কোনও ভাবেই মূল্যায়নের ঊর্ধ্বে নন। রাজ্য সম্পাদক হিসাবে তাঁর কাজের জন্যও তিনি দলীয় কর্মীদের কাছে ‘জবাবদিহি’ করবেন। সিপিএমে গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার নীতি আছে বলেই এই প্রক্রিয়া চালানো সম্ভব। কলকাতা জেলা সিপিএমের কার্যালয় যে প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে এ দিন রাজ্য কেন্দ্রের সম্মেলন হয়েছে, সেই ভবনেই আগামী ১৫-১৮ ফেব্রুয়ারি দলের রাজ্য সম্মেলন বসছে।
সিপিএম সূত্রের খবর, রাজ্য কেন্দ্রের এক দিনের সম্মেলন ছিল অনেকটাই সদ্যসমাপ্ত কলকাতা জেলা সম্মেলনের সুরে বাঁধা। শুরুতে দলের পলিটব্যুরো সদস্য বুদ্ধবাবু বলেন, প্রশাসনিক কাজ থেকে শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণে ‘তাড়াহুড়ো’, দলের একাংশের ‘ঔদ্ধত্য, দুর্নীতি’ থেকে প্রচারে যথাযথ বিষয় তুলে ধরতে না-পারা তাঁদের কাজে বেশ কিছু ‘ভুল’ হয়েছিল। ভুল-ত্রুটি শুধরে দলকে এখন সেই ভাবেই গড়ে তুলতে হবে, যে ভাবে মানুষ বামপন্থীদের দেখতে চান। কিন্তু বুদ্ধবাবুর বক্তব্যের সূত্র ধরেই প্রশ্ন তোলেন প্রতিনিধিরা। দলীয় সূত্রের খবর, তাঁদের অধিকাংশেরই বক্তব্যের মর্মার্থ সপ্তম বামফ্রন্ট সরকারের আমলে একের পর এক ‘ভুল’ ঘটে চলল। তার পরে শুরু হল ‘ভুল’ স্বীকারের ধুম! ‘ভুলে’র জন্য দলের কী পরিণতি হয়েছে, তা চোখের সামনেই দেখা যাচ্ছে! দলের নিচু তলার কর্মীদের আচরণের ত্রুটি বা জেলা নেতৃত্বের ‘ব্যর্থতা’ নিয়ে প্রকাশ্যেই সরব হচ্ছেন রাজ্য নেতৃত্ব। কিন্তু নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে, বিগত সরকারের পথ চলার ক্ষেত্রে যে সব ‘ভুল’ হয়েছিল, তার জন্য রাজ্য নেতৃৃত্বের ‘মূল্যায়ন’ কে করবে? রাজ্য কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন ইউনিট মিলে সদস্যসংখ্যা প্রায় ন’শো। জবাবি বক্তৃতায় সেই জন্যই বিমানবাবু প্রশ্ন তোলেন, সারা রাজ্যের পার্টির জন্য রাজ্য সম্মেলন আছে। সেখানে সব প্রশ্ন নিয়েই আলোচনা হবে। তার জন্য অপেক্ষা করা উচিত। কিন্তু প্রতিনিধিদের একাংশ দাবি তোলেন, তাঁরা যখন সুযোগ পেয়েছেন, তখনই প্রশ্ন তুলেছেন। অতএব, কর্মীদের স্বার্থেই জবাব দেওয়া উচিত। থমকে গিয়ে ফের ভাষণ শুরু করে বিমানবাবু তাঁর তরফে ব্যাখ্যা দেন।
প্রতিনিধিদের বক্তব্য ছিল; বাম জমানার শেষ কয়েক বছরে প্রশাসন প্রায় ‘পঙ্গু’ হয়ে গিয়েছিল। অতিরিক্ত ‘আমলা-নির্ভর’ হয়ে পড়ার ‘মাসুল’ দিতে হয়েছে। শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের সময়েও ওই ‘আমলানির্ভরতা’ প্রকট হয়ে গিয়েছিল। দলের সঙ্গে প্রয়োজনীয় আলোচনা সব সময় করা হয়নি। পরমাণু চুক্তির মতো একটি প্রশ্নে ইউপিএ সরকারের উপর থেকে সমর্থন তোলা উচিত হয়েছিল কি না, সেই প্রশ্নও ওঠে। কারণ, সমর্থন প্রত্যাহারের জেরেই গত লোকসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেস ও তৃণমূলের জোটের পথ প্রশস্ত হয়েছিল। লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে বহিষ্কারও জনমনে বিরূপ প্রভাব ফেলেছিল। কোনও কোনও নেতা দলীয় কর্মীদের একাংশের ‘দুর্নীতি’র কথা প্রকাশ্যে এমন ভাবে বলেছেন, যাতে মনে হয়েছে গোটা দলটাই ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ হয়ে গিয়েছে! দুর্নীতি বা ‘আচরণগত ত্রুটি’ হয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা কেন নেওয়া হয়নি? রাজ্য সম্পাদক বিমানবাবুর প্রতি সরাসরিই ইঙ্গিত করে প্রতিনিধিদের একাংশ বলেন, সংবাদমাধ্যমের সামনে তাঁর ভূমিকা ‘আদর্শ’ নয়। প্রসঙ্গত, প্রায় একই ধরনের প্রশ্ন উঠেছিল কলকাতা জেলা সম্মেলনে। তবে এক দিনের সম্মেলনে রাজ্য কেন্দ্রে যা হয়েছে, কলকাতায় ঘটনার প্রাবল্য ততটা ছিল না।
দলের মধ্যেকার আলোচনা কেন বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে, তা নিয়ে বেশ কয়েকটি জেলা সম্মেলনের মতো এ দিনও ‘উষ্মা’ প্রকাশ করেছেন রাজ্য সম্পাদক। কিন্তু সংবাদমাধ্যমের সামনে তাঁর ‘আচরণ’ নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন দলীয় কর্মীরা। এর পরে রাজ্য সম্মেলনে সমালোচনার ঝড় বুদ্ধবাবু-বিমানবাবুরা কী ভাবে সামলান, তা-ই দেখতে চায় গোটা সিপিএম!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.