বিষয়: ভারতের ন্যাশনাল পার্ক
মরা সবাই কোনও না কোনও সময়ে ছুটি কাটাতে বেরিয়ে পড়ি। যারা একটু আগেই আটঘাট বেঁধে নিতে ভালবাসে, তাদের বলে রাখি, ছুটির প্ল্যান করার এটাই ঠিক সময় (যদিও গ্রীষ্মের ছুটির এখনও তিন-চার মাস দেরি আছে, তবুও আগেভাগে পরিকল্পনা করে রাখলে পরে অনেক কাজে দেয়)। সাধারণত ছুটি কাটাতে লোকে সমুদ্রের ধারে, হিল স্টেশন কিংবা চটজলদি বিদেশভ্রমণ বলতে সিঙ্গাপুর, ব্যাঙ্কক কিংবা কাঠমাণ্ডুকে বেছে নেয়। আমি কিন্তু ও সব দিকে যাব না। এ বার নতুন কোথাও যাওয়ার কথা ভাবছি। কোনও জাতীয় উদ্যানে (ন্যাশনাল পার্ক) বেড়াতে গেলে কেমন হয়?
এত বছরে আমি মাত্র দু’দিন একটি জাতীয় উদ্যানে কাটিয়েছি। তাই ভাবছি এ বছর ভারতেরই কোনও একটা জাতীয় উদ্যানে তিন-চার দিন কাটিয়ে আসব। এই সূত্রে মনে পড়ল ঠিক ষাট বছর আগে আজকের দিনেই কেনিয়ার এক ‘ট্রিটপ হোটেল’-এর ভিসিটরজ রেজিস্টারে এক ভদ্রলোক লিখেছিলেন, ‘এক দিন এক রাজকুমারী একটি গাছে চড়লেন। তাঁর জীবনের সবচেয়ে রোমঞ্চকর অভিজ্ঞতাটি অর্জন করে যখন তিনি সেই গাছ থেকে নামলেন, তখন কিন্তু তিনি আর রাজকুমারী নন, রানি। ঈশ্বর তাঁকে আশীর্বাদ করুন।’ মন্তব্যটি জিম করবেটের। আর সেই রাজকুমারী হলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। যাই হোক, যদি এ বার কোনও ন্যাশনাল পার্কে না-ও যাও, বাকিটা পড়ে ফেলো।

ভারতের অন্যতম ক্ষুদ্র ন্যাশনাল পার্ক হল কেরল-এর ‘পামপাদুম শোল ন্যাশনাল পার্ক’।
উদ্যানটি কেরল ও তামিলনাড়ুর সীমান্তবর্তী এলাকার কাছে অবস্থিত। পামপাদুম শোল-এর
নামটি এসেছে একটি তামিল শব্দ থেকে। শব্দটির অর্থ সেই বন, যেখানে সাপ নাচে।

জানো কি
ভারত তখন ব্রিটিশ শাসনাধীন। সেই সময় ১৯৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের প্রথম জাতীয় উদ্যান, হেইলি ন্যাশনাল পার্ক। স্বাধীনতার বেশ কিছু বছর পরে এর নতুন নাম দেওয়া হয় ‘রামগঙ্গা ন্যাশনাল পার্ক।’ পরবর্তী কালে আবার এটির নাম পাল্টে হয় ‘জিম করবেট ন্যাশনাল পার্ক’। ১৯৭৩-৭৪ সালে যখন দেশে ‘ব্যাঘ্র প্রকল্প’ আরম্ভ হয়, তখন যে ক’টি অভয়ারণ্যকে বেছে নেওয়া হয়েছিল, এটি তার অন্যতম।

বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে, ভারতের তৎকালীন ব্রিটিশ ভাইসরয় লর্ড কার্জন-এর স্ত্রী মেরি কার্জন এই এলাকাটি পরিদর্শন করেন। সেই সময় এখানে যথেচ্ছাচারে গণ্ডার নিধন বন্ধ করতে তিনি এলাকাটিকে অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করার জন্য সরকারকে বাধ্য করেন। ১৯৬৬ সালের মধ্যেই এখানে গণ্ডারের সংখ্যা দাঁড়ায় সাড়ে তিনশোরও বেশি। অসমে মাঝেমধ্যেই ভয়ংকর বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়। তা সত্ত্বেও বর্তমানে এখানে গণ্ডারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫০০-র বেশি। আশা করি ধরতে পেরেছ, আমি ‘কাজিরাঙ্গা ন্যাশনাল পার্ক’-এর কথা বলছি। ১৯৮৫ সালে ইউনেসকো প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের জন্য কাজিরাঙ্গাকে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।

বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ অরণ্য ‘সুন্দরবন’ ১৯৮৪ সালে ন্যাশনাল পার্ক হিসেবে ঘোষিত হয়। ১৯৭৩-৭৩ সাল থেকেই এখানে ব্যাঘ্র সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ চলছিল। এখানকার মূল আকর্ষণ রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। তা ছাড়াও এখানে অনেক বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির জলজ প্রাণি, পাখি ও সরীসৃপ বাস করে। লোক কথা অনুসারে, সুন্দরবন নামটি এসেছে এখানকার ‘সুন্দরী’ গাছ থেকে। যদিও বিশ্বের মোটামুটি পঞ্চাশ ধরনের ম্যানগ্রোভের মধ্যে ছাব্বিশটি সুন্দরবনে দিব্যি পাওয়া যায়।

কেমন লাগবে যদি তোমার শহরের আশেপাশেই কোনও জাতীয় উদ্যান থাকে? চেন্নাই শহরের লোকেরা সেই দিক থেকে বেশ ভাগ্যবান, কারণ তাদের শহরের মধ্যেই রয়েছে ‘গুইন্ডি ন্যাশনাল পার্ক’। আসলে উদ্যানটি তামিলনাড়ুর রাজ্যপালের সরকারি বাসভবন, রাজভবনেরই একটি অংশ। এখানকার জীবকূলে বৈচিত্র আনতে বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি এখানে নানা ধরনের চিতল ও কৃষ্ণসার হরিণ ছেড়ে দেওয়া হয়।

ভারতে সামুদ্রিক পরিবেশকে রক্ষা করার জন্যও ন্যাশনাল পার্ক তৈরি করা হয়েছে। পোর্ট ব্লেয়ার থেকে মোটামুটি ত্রিশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ‘মহাত্মা গাঁধী মেরিন ন্যাশনাল পার্ক’-এ রয়েছে উন্মুক্ত সামুদ্রিক এলাকা এবং গোটা পনেরো দ্বীপ। প্রবাল প্রাচীর ও সামুদ্রিক কচ্ছপদের রক্ষা করতেই এই উদ্যানটি তৈরি করা হয়।
শহরের মধ্যে অবস্থিত আর একটি ন্যাশনাল পার্ক হল ‘সঞ্জয় গাঁধী ন্যাশনাল পার্ক’। মুম্বইয়ের উত্তরপ্রান্তের উদ্যানটির কেন্দ্রে রয়েছে ঐতিহাসিক কানহেরি গুহা, যা এককালে বৌদ্ধ শিক্ষাকেন্দ্র ছিল।

‘সরিস্কা ন্যাশনাল পার্ক’ আরাবল্লি পর্বতে অবস্থিত। অঞ্চলটি তামা-র মতো নানান খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। ১৯৯১ সালে সুপ্রিম কোর্ট উদ্যানের ধারেকাছে কোনও খননকার্য নিষিদ্ধ করে। কিন্তু ব্যাপক হারে পশু শিকার অব্যাহত থাকায় ২০০৫ সাল নাগাদ সরিস্কা বাঘ শূন্য হয়ে পড়ে। পরবর্তী কালে অন্যান্য জাতীয় উদ্যান থেকে এখানে বেশ কিছু বাঘ এনে ছেড়ে দেওয়া হয়।

১৯৭০ সালের শেষ ভাগে শিমলিপাল লোকের কাছে ভীষণ ভাবে পরিচিত হয়ে ওঠে ‘খইরি’ নামের ছোট্ট একটি বাঘের ছানার অদ্ভুত সব কাণ্ডকারখানার সুবাদে। টাইগার রিজার্ভ-এর প্রাক্তন ফিল্ড ডিরেক্টর সরোজ রাজ চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে ছানাটি একটি পূর্ণাঙ্গ পোষ্যে পরিণত হয়। তাকে নাকি আমুল মিল্ক পাউডার মাখানো পাঁঠার মাংস খাওয়ানো হত!

২০০৯ সালে পরিবেশ ও অরণ্য সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় দফতর দুশোটিরও বেশি ন্যাশনাল পার্ক ও অভয়ারণ্যের মধ্যে জলপাইগুড়ির ‘গরুমারা ন্যাশনাল পার্ক’-কে সবচেয়ে ভাল ভাবে পরিচালিত উদ্যানের খেতাব দেয়। ‘ইন্ডিয়ান রাইনো’ প্রজাতির এই গুরুত্বপূর্ণ প্রজনন কেন্দ্রটিতে একটি ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে ‘যাত্রাপ্রসাদ’-এর নামে। যাত্রাপ্রসাদ নামের হাতিটি ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টে কাজ করত।
বলো তো
১ মধ্যপ্রদেশের দিন্দোরি জেলার জাতীয় উদ্যানটির বৈশিষ্ট্য কী?
২ বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে জুনাগড়ের নবাবরা কোন জঙ্গল এলাকার রক্ষণাবেক্ষণ করতেন?
৩ কোন রাজ্যে ভারতের সর্ববৃহৎ জাতীয় উদ্যানটি অবস্থিত?
৪ কোন জাতীয় উদ্যানে ‘সাঙ্গাই’ বা ‘ড্যান্সিং ডিয়ার’ পাওয়া যায়?
৫ কোন পক্ষীবিশারদের নামে জম্মু কাশ্মীরের ‘সিটি ফরেস্ট ন্যাশনাল পার্ক’-এর নামকরণ করা হয়েছে?

উত্তর
১) এটিই ‘মান্দলা প্ল্যান্ট ফসিলস ন্যাশনাল পার্ক’, যেখানে উদ্ভিদ জীবাস্ম নিয়ে গবেষণা করা হয়।
২) ‘গির ন্যাশনাল পার্ক’। ৩) ‘হেমিস ন্যাশনাল পার্ক’, জম্মু ও কাশ্মীর।
৪) কেইবুলে লামজাও ন্যাশনাল পার্ক। ৫) ড. সেলিম আলি।


Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.