গৌতম মুখোপাধ্যায়
লেখক বিশিষ্ট ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ |
যুবরাজ সিংহের যে অসুখটা নিয়ে গোটা দেশ চিন্তায় রয়েছে সেটাকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলে সেমিনোমা। প্রথমেই বলে রাখি, এই ধরনের ক্যান্সারের সেরে যাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। কারণ এটা বাড়ে খুব ধীর গতিতে। কেমোথেরাপিতে সেরে যাওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। তাড়াতাড়ি ক্যান্সার কোষগুলোও মারা পড়ে। আর পাঁচটা সাধারণ লোকের মতো জীবনযাত্রা যুবরাজের নয়। ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলে।
এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, যুবরাজ কবে মাঠে ফিরবে?
সেমিনোমা আসলে জার্ম সেল টিউমার। শুক্রাণু বা ডিম্বাণু যে সব কোষ থেকে তৈরি হয় তাদের বলে জার্ম সেল। সেমিনোমা বেশি দেখা যায় শুক্রাশয়ে। কিন্তু এ ছাড়াও শরীরের কিছু কিছু অংশে হতে পারে। যেমন পেট, থোরাসিক ক্যাভিটি বা বক্ষগহ্বরে। যেমনটা হয়েছে যুবরাজের ক্ষেত্রে।
বুকে টিউমার শুনলে প্রথমেই মনে হয় ফুসফুসের কথা। আমিও প্রথমে সেটা ভেবেছিলাম। পরে এটা সেমিনোমা শুনে আশ্বস্ত হলাম। সেমিনোমা বলেই চিকিৎসায় একশো শতাংশ সাফল্য পাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। যেটা ফুসফুসের ক্যান্সারে কম। যতটা জানতে পেরেছি, যুবরাজের সেমিনোমা কিছুটা ছড়িয়ে পড়েছে অ্যাওর্টা-য়। অ্যাওর্টা হল হৃৎপিণ্ড থেকে বেরনো প্রধান ধমনী। এমনিতে এই ধরনের ক্যান্সার খুব ভোগায় না। যতক্ষণ না সেটা বড় হয়ে চাপ ফেলে অন্য অঙ্গের উপর। শ্বাসনালীর উপর চাপ দিলে কাশির সঙ্গে রক্ত আসতে পারে। আবার গ্রাসনালীর উপর উঠে গেলে বমি হয়। সে জন্যই হয়তো যুবরাজ বিশ্বকাপ চলাকালীন বমি করত মাঝে মাঝেই।
টিউমারটা ছোট থাকাকালীন সে রকম শারীরিক জটিলতার সৃষ্টি হয় না। তাই রোগটা ধরা পড়ে দেরিতে। একটা ভাল দিক এই যে, ক্যান্সারটা অন্য ক্যান্সারের তুলনায় কম মেটাস্ট্যাটিক। অর্থাৎ এর ক্যান্সার কোষগুলোর অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা খুব কম। তবে যুবরাজের ক্ষেত্রে এই নিয়ে দুশ্চিন্তার সে রকম কিছু দেখছি না। ওর যে কেমোথেরাপি চলছে তাতেই রোগের নিরাময় সম্ভব। কখনও কখনও অস্ত্রোপচার বা রেডিয়েশন চিকিৎসার সাহায্য নেওয়া হয়। যে কোনও ক্যান্সারের মতো এই ক্যান্সারেরও একটা জরুরী দিক হল ফলোআপ চিকিৎসা।
কেমোথেরাপিতে পুরোপুরি সেরে যাওয়ার পর প্রথম দু’বছর সাধারণত তিন মাস অন্তর রোগীকে দেখি। পরের তিন বছর দেখা হয় ছ’মাস অন্তর। পাঁচ বছর পর বছরে এক বার করে। তবে চিকিৎসায় ক্যান্সার পুরো সেরে গেলেও যুবরাজের মাঠে ফিরতে ছয়-আট মাস লাগতে পারে। কারণ, কর্মক্ষমতা আসতে সময় লাগবে। আবার এক থেকে দু’বছরও লেগে যেতে পারে। এটা নির্ভর করে সেই ব্যক্তির উপর, যিনি ক্যান্সারের সঙ্গে লড়ছেন।
যুবরাজের মনের জোরের পরিচয় আমরা আগেও পেয়েছি। আবার দেখেছি সাইক্লিস্ট ল্যান্স আর্মস্ট্রংকে ক্যান্সার সারিয়ে একেবারে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ফিরতে। আমার আশা, যুবরাজ সিংহ-ও সে ভাবেই ফিরে আসবে মাঠে। |