কমনওয়েলথ ব্যাঙ্ক ত্রিদেশীয় সিরিজেও যে ভারত ভাল শুরু করতে পারল না তার কারণ সেই ব্যাটিং ব্যর্থতা। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে এই জিনিসটা ভারতকে সমানে ভুগিয়ে যাচ্ছে। এই মাঠেই কয়েক দিন আগে টি-টোয়েন্টি জেতার পর ভারতীয় সমর্থকেরা নিশ্চয়ই আশা করেছিলেন ওয়ান ডে সিরিজটা ইতিবাচক ভাবে শুরু করবে ধোনিরা। কিন্তু আজকের ভারত যেন সব বিভাগেই আগের টি-টোয়েন্টি ম্যাচের ভারতের একটা ছায়ামাত্র। অস্ট্রেলিয়াকে মাঝেমধ্যে ভঙ্গুর দেখালেও তাই ভারত ওদের থেকে পিছিয়ে পড়েছিল। শেষের দিকে অস্ট্রেলিয়া নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে বেশ ভাল ভাবেই জিতল।
টস জিতে অস্ট্রেলিয়াকে ব্যাট করতে পাঠিয়ে বৃষ্টি নামা পর্যন্ত ধোনি নিয়ন্ত্রণে ছিল। বিরতির পর ভারত খেই হারিয়ে ফেলল আর অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে গেল। ওয়েডের মধ্যে ওরা একজন ভাল ক্রিকেটার পেয়েছে। ও সত্যিকারের অলরাউন্ডার। যে কোনও জায়গায় ব্যাট করতে পারে। পায়ের ভাল ব্যবহার করতে পারে। সীমিত ওভারের ম্যাচে বড় শট খেলতে পারে। দেখে মনে হচ্ছে ওর মাথাটাও বেশ ঠান্ডা। |
উইকেটকিপার হিসেবেও বেশ ভাল। ক্রিকেটার হিসেবে ওয়েড আরও পরিণত হলে অস্ট্রেলিয়ার জন্য দারুণ সম্পত্তি হয়ে উঠবে। কেকেআরে আমার পুরনো সতীর্থ ডেভিড হাসিও সীমিত ওভারের ক্রিকেটে দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার হয়ে উঠেছে। যে টি-টোয়েন্টিটায় অস্ট্রেলিয়া জিতল, সেখানে ডেভিডের ইনিংস খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। রবিবারও ওর ভাই মাইক আর ওয়েডের সঙ্গে দুটো ভাল পার্টনারশিপ করল। শেষের দিকে এই তিন ব্যাটসম্যান ভাল খেলায় বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে যথেষ্ট ভাল রান তুলে দিতে পারল অস্ট্রেলিয়া।
বিরতির পর ভারতীয় বোলিং দিশেহারা হয়ে গিয়েছিল। এর সবচেয়ে বড় কারণ মনে হয় বৃষ্টি। আউটফিল্ড ভিজে থাকায় সাদা বল খুব পিচ্ছিল হয়ে যায়। যার জন্য বোলাররা ঠিক মতো বল গ্রিপ করতে পারছিল না। বৃষ্টির আগে লাইন-লেংথ ঠিক রেখে আসা ভারতীয় বোলাররাই তাই বৃষ্টির পরে ছন্নছাড়া ভাবে বল করল। যার পুরো ফায়দা তুলল অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানরা। কোনও এক জন স্পিনারের জায়গায় ইরফান পাঠানকে খেলানোর কথা ভেবে দেখতে পারে ভারত। পাঠান বল ভাল সুইং করাতে পারে। ও ভারতীয় বোলিংয়ে বৈচিত্র আনতে পারবে। তবে একমাত্র জাহির না খেললেই ইরফানকে খেলানো যায়। জাহির কেন খেলছে না তার সঠিক ব্যাখ্যা মনে হয় কারও কাছেই নেই। পাঠানকে খেলানোর প্রস্তাব দেওয়ার আর একটা কারণ হল, রবিবারের ম্যাচে ভারত খুব বেশি স্পিনার খেলিয়েছিল। যেখানে বিনয় কুমার আর অস্ট্রেলীয় পেসাররা পিচটাকে এত ভাল ভাবে কাজে লাগাতে পারল।
চোট পাওয়া সহবাগের অনুপস্থিতিতে ভারতীয় ব্যাটিং শুরুর দিকে তাড়াতাড়ি রান তুলতে পারল না। দশ মাস পরে ওয়ান ডে খেলা সচিনের পক্ষে প্রথম থেকেই ছন্দ পাওয়া সহজ নয়। শেষ টি-টোয়েন্টিতে গম্ভীর ভাল হাফসেঞ্চুরি করলেও ওকে দেখে মনে হচ্ছে না এখনও ছন্দে ফিরেছে। যখন বড় রান তাড়া করতে নেমে তাড়াতাড়ি রান তোলা দরকার তখন বীরুর মতো কাউকে দরকার। যে রান তোলার গতি ঠিক করে দিতে পারে। যেটা আজ হল না। গোটা ইনিংসেই ভারতীয় ব্যাটিং ছন্দ বা গতি পায়নি। বুঝতে পারছি না মনোজ তিওয়ারি কেন খেলছে না। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ওর শেষ ম্যাচে চাপের মুখে সেঞ্চুরি করেছে মনোজ। ভাল ফর্মে আছে। শর্ট বলের সামনে নড়বড়ে দেখানো সুরেশ রায়নার জায়গায় মনোজের সুযোগ পাওয়া উচিত।
|
মেলবোর্ন একদিনের ম্যাচের স্কোর |
(ডাকওয়ার্থ-লুইস নিয়মে ম্যাচ ৩২ ওভারের) |
অস্ট্রেলিয়া |
ওয়েড বো রাহুল শর্মা ৬৭
ওয়ার্নার বো বিনয় ৬
পন্টিং ক রায়না বো বিনয় ২
ক্লার্ক ক রাহুল শর্মা বো রোহিত ১০
মাইকেল হাসি ক বিরাট বো বিনয় ৪৫
ডেভিড হাসি ন.আ. ৬১
ক্রিশ্চিয়ান ন.আ. ১৭
অতিরিক্ত ৮
মোট ৩২ ওভারে ২১৬-৫।
পতন: ১৫, ১৯, ৪৯, ১২২, ১৫৪।
বোলিং: প্রবীণ ৭-০-৩৫-০, বিনয় ৭-০-২১-৩, বিরাট ১-০-৪-০,
রায়না ১-০-৪-০ অশ্বিন ৫-০-৪৮-০, রোহিত ২-০-১৭-১,
রাহুল শর্মা ৬.২-০-৪৪-১, জাডেজা ২.৪-০-৪১-০।
|
ভারত |
গম্ভীর ক ওয়েড বো স্টার্ক ৫
সচিন ক পন্টিং বো স্টার্ক ২
বিরাট ক পন্টিং বো ম্যাকে ৩১
রোহিত ক ওয়েড বো ম্যাকে ২১
রায়না ক ডেভিড হাসি বো ক্রিশ্চিয়ান ৪
ধোনি ক ওয়ার্নার বো ডোহার্টি ২৯
জাডেজা ক মাইকেল হাসি বো ম্যাকে ১৯
অশ্বিন রান আউট ৫
রাহুল শর্মা বো ডোহার্টি ১
প্রবীণ ক হ্যারিস বো ম্যাকে ১৫
বিনয় ন.আ. ১২
অতিরিক্ত ৭
মোট ২৯.৪ ওভারে ১৫১।
পতন: ৯, ১৩, ৬৪, ৬৫, ৭৭, ১১৪, ১২০, ১২৩, ১২৮।
বোলিং: হ্যারিস ৫-০-২৮-০, স্টার্ক ৬-০-৩৩-২, ক্রিশ্চিয়ান ৫-০-২১-১
ম্যাকে ৪.৪-০-২০-৪, ডোহার্টি ৭-০-৩৬-২, ক্লার্ক ২-০-১১-০। |
|
|