চারদিন কেটে গেলেও জলপাইগুড়ি শহরের জঞ্জাল অপসারণ নিয়ে অচলাবস্থা কাটেনি। আজ, সোমবার সমস্যা কাটাতে পুরসভা-পুলিশ-প্রশাসন বৈঠকে বসবে বলে জানা গিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া পাঙ্গার ডাম্পিং গ্রাউন্ডে পুরসভার ময়লা ফেলতে বাধা দিতে শুরু করেন এলাকার একাংশ বাসিন্দারা। পুরসভার পক্ষ থেকে সেদিনই লিখিত ভাবে জেলা প্রশাসন ও পুলিশকে জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে পুরসভার তরফে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। ডাম্পিং গ্রাউন্ড নিয়ে টানাপোড়েন চলতে থাকায় শহরের একাংশ থেকে ময়লা অপসারণের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে পুরসভা। জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতাল থেকেও নিয়মিত আবর্জনা সংগ্রহের কাজ চারদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। হাসপাতালের পেছন দিকে বর্জ্য জমে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুরসভা ও প্রশাসনকে জানিয়েছে। শহরের বিভিন্ন মোড়ে থাকা ভ্যাটগুলি উপচে পড়ছে। শহরের কিছু এলাকায় বাড়ি থেকে ময়লা অপসারণের কাজও বন্ধ হয়ে রয়েছে। পুরসভার তরফে গোটা পরিস্থিতির জন্য প্রশাসনের ঘাড়েই দোষ চাপানো হয়েছে। পুরসভার যুক্তি, শহরের বিপুল পরিমাণ ময়লা সংগ্রহ করে প্রতিদিন দুবার করে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ফেলা হয়। ডাম্পিং গ্রাউন্ডে পুরসভার গাড়ি ঢুকতে না পারায় এবং ময়লা ফেলার বিকল্প জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়েই কিছু এলাকায় আবর্জনা সংগ্রহের কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। |
ডাম্পিং গ্রাউন্ড নিয়ে জট কাটাতে পুরসভার সঙ্গে পুলিশ-প্রশাসনের যে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে এখন সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছেন শহরের বাসিন্দারা। পাঙ্গা এলাকার বাসিন্দাদের বাধায় ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ময়লা ফেলতে না পারার পরে এলাকার চারজন বাসিন্দার নাম দিয়ে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছে পুরসভা। সোমবারের বৈঠকে সে বিষয়েও আলোচনা হবে বলে জানা গিয়েছে। জলপাইগুড়ি সদর মহকুমাশাসক সাগর চক্রবর্তী বলেন, “বিকল্প ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরির জমি পুরসভাকে দ্রুত হস্তান্তর করে দেওয়া হবে। সেই প্রক্রিয়া চলছে। তবে আলোচনার মাধ্যমেই সাম্প্রতিক সমস্যা কাটাতে হবে।” পুরসভা সুত্রে জানা গিয়েছে, আপাতত শহর ও লাগোয়া এলাকার কিছু নিচু জমিতে ময়লা ফেলা হচ্ছে। তবে এই প্রক্রিয়া বেশিদিন চালানো যাবে না বলেও পুরসভা জানিয়েছে। পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান পিনাকী সেনগুপ্ত বলেন, “আর এক-দু দিনের মধ্যে ডাম্পিং গ্রাউন্ডের সমস্যা না মিটলে শহর থেকে সংগ্রহ করা বিপুল পরিমাণ ময়লা কোথায় ফেলা হবে তা নিয়েই আমরা উদ্বিগ্ন। শহরের ময়লা শহরেই থেকে গেলে ব্যাপক হারে দূষণ ছড়াবে।” দীর্ঘদিন ধরে ডাম্পিং গ্রাউন্ডকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার দাবিতে আন্দোলন চালাচ্ছেন পাঙ্গা এলাকার একাংশ বাসিন্দা। এলাকায় দূষণ প্রতিরোধ কমিটিও গঠন করা হয়েছে। গত বছর প্রশাসনের ডাকা এক ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বের মধ্যে পুরসভাকে বিকল্প ডাম্পিং গ্রাউন্ডের জন্য জমি দেওয়া হবে। ততদিন পাঙ্গায় ময়লা ফেলতে দিতে রাজি হন এলাকার বাসিন্দারা। সেই সময়ের মধ্যে পুরসভা নতুন জমি না পাওয়ায় ফের চলতি বছরের শুরুতেই জটিলতা তৈরি হয়। গত ৬ জানুয়ারী ফের একটি ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে পাঙ্গায় মলয়া ফেলতে চার মাস অতিরিক্ত সময় চাওয়া হয়। বৈঠকে উপস্থিত পাঙ্গার আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিরা প্রথমে সহমত হলেও পরে তাঁরা আপত্তি জানান। পাঙ্গায় দূষণ প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি শুকদেব সরকার বলেন, “দীর্ঘদিন ধরেই ক্রমাগত ভাবে সময় বাড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। সিদ্ধান্ত নিয়েছি কোনও অবস্থাতেই আর পাঙ্গায় ময়লা ফেলতে দেওয়া হবে না। এলাকাকে দূষণমুক্ত করতে হবে।” |